নিউজার্সির আদালতে ইন্দ্রাশিসকে মারধরের অভিযোগের পক্ষে কোনও প্রমাণ দাখিল করতে পারল না চাইল্ড প্রোটেকশন টিম। প্যান্সিপ্যানি শহরে চাকরিরত বেসরকারি সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার, বালুরঘাটের বাসিন্দা দেবাশিস সাহা ও স্ত্রী পামেলা দেবীর বিরুদ্ধে তাদের এক বছরের ছেলে ইন্দ্রাশিস ওরফে তোজোর প্রতি অযন্ত এবং মারধরের অভিযোগ তোলে চাইল্ড প্রোটেকশন টিম। তোজোকে হেফাজতে নিয়ে তারা দেবাশিসবাবুদের বিরুদ্ধে সেখানকার আদালতে মামলা দায়ের করে। বাড়িতে খাট থেকে পড়ে তোজো জখম হয় বলে এটি নিছক দুর্ঘটনা দাবি করে দেবাশিসবাবু আদালতের দ্বারস্থ হন। বৃহস্পতিবার মামলাটির শুনানির দিন ছিল। এদিন বালুরঘাটে তোজোর ঠাকুর্দা নির্মলকৃষ্ণ সাহা বলেন, “ছেলে দেবাশিস ফোন করে জানিয়েছে, আইনজীবীর সওয়ালে চাইল্ড প্রোটেকশন টিম মারধরে তোজো অসুস্থ হয়েছিল, তার স্বপক্ষে কোনও ডাক্তারি রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে পারেনি। তারা আদালতে সময় চাইলে বিচারক মামলাটির পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য করেন ৩ জানুয়ারি।” পাশাপাশি চাইল্ড প্রোটেকশন টিমের হেফাজতে থাকা হোমে তোজোর থুতনি ও মাড়িতে কাটা দাগের উল্লেখ করে দেবাশিসবাবুর আইনজীবী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। নির্মলকৃষ্ণবাবু বলেন, “কয়েকদিন আগে ওই হোমে দেখা করতে গিয়ে ছেলে দেবাশিস তোজোর জখম লক্ষ করে জানতে চাইলে হোম থেকে বলা হয় পড়ে গিয়ে থুতনি ও দাঁতে আঘাত পেয়েছিল। এটি সাধারণ দুর্ঘটনা।” নির্মলকৃষ্ণবাবুর প্রশ্ন, “চাইল্ড প্রোটেকশন টিমের হেফাজত থেকে নাতি পড়ে গিয়ে জখম হলে সাধারণ ঘটনা আর বাড়ির খাট থেকে পড়লে দুর্ঘটনা নয়, এমন যুক্তি মানা যায় না।” পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ৯ অগস্ট খাট থেকে পড়ে তোজো জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। চিকিৎসায় সেরে ওঠার পর হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার আগে সেখানকার চাইল্ড প্রোটেকশন টিম বাবা-মায়ের মারধরে তোজো জখম হয় বলে অভিযোগ তুলে মামলা করে। ফলে হাসপাতাল থেকে বাবা-মায়ের বদলে ছোট্ট তোজোর আশ্রয় হয় হোম। এরপর নাতি ফিরে পেতে মরিয়া ঠাকুর্দা নির্মলকৃষ্ণবাবু প্রদেশ কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্রের সহায়তায় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কলকাতায় দেখা করেন। ইতিমধ্যে নিউজার্সির আদালতে দেবাশিসবাবুর পক্ষে আইনজীবী হোমের বদলে তোজোকে কোনও নিকট আত্মীয়ের কাছে তুলে দেওয়ার আর্জি জানান। নিউজার্সিতে ভারতীয় কোনও আত্মীয় না থাকায় দেবাশিসবাবুর বাবা, মা, কাকা ও শাশুড়ি-চার জনের নামের তালিকা আদালতে পেশ করেন আইনজীবী। এরপর আদালত ওই চার জনের মধ্যে তোজোকে দেখাশোনায় যোগ্য একজনকে বেছে নিতে ভারতের কোনও সরকারি সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলেন। ইতিমধ্যে দিল্লি থেকে একটি সংস্থার তরফে নির্মলকৃষ্ণবাবুদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠায়। এর পরেই দিল্লির তরফে নিউজার্সির চাইল্ড প্রোটেকশন টিমকে ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে চিঠি পাঠিয়ে বালুরঘাটের বাসিন্দা ঠাকুর্দা নির্মলকৃষ্ণবাবুকে যোগ্য বলে বিবেচিত করে তোজোকে তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। |