একই পাড়ার দু’দল বাসিন্দার মধ্যে বিবাদের জেরে কুলটিতে বন্ধ হয়ে গেল রক্তদান শিবির। বিবাদ মিটিয়ে পরে ফের রক্তদান শিবির আয়োজন করা হবে বলে উভয়পক্ষের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এর ফলে আসানসোল মহকুমা হাসপাতালের প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহে বাধা পড়ল বলে দাবি হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক অধিকর্তা শঙ্করী মাজির। তিনি বলেন, “কুলটিতে একটি রক্তদান শিবির আয়োজনের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি করা যায়নি। এরফলে কাঙ্খিত রক্ত ব্ল্যাডব্যঙ্কে আসেনি।”
আসানসোল মহকুমা হাসপাতালের ব্ল্যাডব্যাঙ্কে প্রায় দেড় মাস ধরে রক্তের আকাল চলছে। ব্ল্যাডব্যঙ্ক কর্তৃপক্ষের তরফে বিভিন্ন সংগঠনের কাছে ‘রক্তদান শিবির’ আয়োজন করার অনুরোধ করা হয়। কুলটির একটি সামাজিক সংগঠন একটি কালী পুজো কমিটির সহযোগিতায় এলাকায় একটি শিবিরের আয়োজন করে। কিন্তু ওই এলাকারই বেশ কিছু বাসিন্দার আপত্তি থাকায় স্থগিত হয়ে যায় ওই শিবির।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় একটি মন্দিরের চাতালে এই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। তাতে বাধা দেন বাসিন্দাদের একাংশ। স্থানীয় সদাই মণ্ডলের অভিযোগ, “মন্দির চত্বরে শিবির হলে পুজোর ব্যাঘাত হবে। তাই আয়োজকদের অনুরোধ করি, পাশের একটি কমিউনিটি সেন্টার বা ফাঁকা জমিতে শিবির করা হোক। কিন্তু আয়োজকরা তা মানতে চাননি।” অন্য দিকে, আয়োজকদের তরফে ভোম্বল মণ্ডলের বক্তব্য, “শিবির পরিচালনার জন্য অন্য জায়গার তুলনায় মন্দির চত্বরটিই বেশি সুবিধাজনক।” তাঁর দাবি, “চক্রান্ত করে শিবিরটি ভেস্তে দেওয়া হয়েছে।”
মহকুমা জুড়ে যখন রক্তের ব্যপক সংকট, সেই সময় একটি রক্তদান শিবির ভেস্তে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকার রক্তদাতারা। তাঁদের বক্তব্য, সামান্য একটি বিষয়ে বিবাদের জেরে একটি সামাজিক কাজ ভেস্তে দেওয়া ঠিক হয়নি। দু’পক্ষেরই বোঝা উচিত ছিল রক্তের কোনও বিকল্প হয় না। রক্তের প্রয়োজন রক্ত দিয়েই মেটাতে হয়। আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, “আমরা মহকুমা হাসপাতালের ব্ল্যাডব্যাঙ্ক অধিকর্তার অনুমতি নিয়ে শিবিরটি আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু এলাকার বাসিন্দারা বিবাদে জড়িয়ে পড়ায় এটি করা গেল না।”
এই ঘটনায় হতাশ আসানসোল হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস। তিনি জানান, প্রতিদিন গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ বোতল রক্তের প্রয়োজন পড়ে। এখন হাসপাতালের ব্ল্যাডব্যাঙ্কে খুব কম রক্ত সংগৃহীত রয়েছে যা দিয়ে বড় জোর তিন-চার দিন চলতে পারে। নিখিলবাবু বলেন, “এলাকায় সর্বস্তরের সংগঠনগুলিকে রক্তদান শিবির আয়োজনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।” তাঁর আক্ষেপ, বিবাদের জেরে এ ভাবে শিবির বন্ধ হলে আখেরে বিপদে পড়বেন বাসিন্দারাই। |