প্রায় দশ লক্ষ মানুষের ভরসা একমাত্র হাসপাতাল। মেডিসিন বিভাগ সব সময় ভর্তি থাকে রোগীতে। গত কয়েক মাস ধরে সেই বিভাগে নেই স্থায়ী কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। যে দুই অস্থায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন, রাতে দেখা মেলে না তাঁদের। হাসপাতালের দন্ত বিভাগে দু’মাস ধরে চিকিৎসকের আসন শূন্য। এমন সব সমস্যা নিয়েই চলছে কালনা হাসপাতাল। কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, শীঘ্রই শূন্য পদগুলিতে চিকিৎসক নিয়োগ হবে।
শুধু কালনা মহকুমার পাঁচ ব্লকই নয়, পার্শ্ববর্তী হুগলি ও নদিয়া জেলার নানা এলাকা থেকেও চিকিৎসার জন্য মানুষ এই হাসপাতালে আসেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দেড় বছর আগেও মেডিসিন বিভাগে দু’জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে অসিত সরকার নামে এক চিকিৎসক বদলি হয়ে যাওয়ার পর থেকে সমস্যার শুরু। অপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জয়ন্ত বিশ্বাসের মৃত্যু হয় মাস কয়েক আগে। এই শূন্যপদে স্থায়ী ভাবে কোনও নিয়োগ না হওয়ায় ধুঁকতে শুরু করে মেডিসিন বিভাগ। |
এই সেই হাসপাতাল। —নিজস্ব চিত্র। |
বর্তমানে যে দুই অস্থায়ী বিশেষজ্ঞ ওই বিভাগে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এক জন কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক। অন্য জন আসেন নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে। রাতে তাঁরা কেউই হাসপাতালে থাকেন না। হাসপাতাল সূত্রে খবর, কাটোয়া থেকে যে চিকিৎসক আসেন, তাঁর হাসপাতালে পৌঁছতেই বেলা সাড়ে ১১টা-১২টা বেজে যায়। অনেক সময়ে তাঁরা আসছেন কি না, সে ব্যাপারেও আগে থেকে কোনও তথ্য হাসপাতালের কাছে থাকে না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জ্বর, পেটের অসুখের মতো রোগের ক্ষেত্রে রাতে চিকিৎসা করেন সাধারণ চিকিৎসকেরাই। কিন্তু রোগীর অবস্থা গুরুতর হলেই সঙ্গে সঙ্গে স্থানান্তর করা হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কালনা থেকে বর্ধমান মেডিক্যালের দূরত্ব প্রায় ষাট কিলোমিটার। স্থানীয় বাসিন্দা কানাইলাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় রাতে হাসপাতালে যেতে ভরসা পান না মানুষজন।” রমাই মণ্ডল, জাহির শেখদের বক্তব্য, “রাতে কেউ খুব অসুস্থ হলে আমরা আর কালনা হাসপাতালে নিয়ে যাই না। ওখানে গেলেই তো স্থানান্তর করা হবে। তার থেকে সরাসরি বর্ধমান মেডিক্যাল বা নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই ভাল।”
মেডিসিন বিভাগের পাশাপাশি হাসপাতালের দন্ত বিভাগেও পরিষেবা বেহাল। এই বিভাগের একমাত্র চিকিৎসক বদলি হয়ে গিয়েছেন মাস দুয়েক আগে। তাঁর জায়গায় এখনও কেউ আসেননি। ফলে এসেও ফিরেও যেতে হচ্ছে রোগীদের। মেডিসিন ও দন্ত বিভাগের এমন পরিস্থিতির কথা মেনে নিয়েছেন হাসপাতালের সুপার অভিরূপ মণ্ডল। তিনি বলেন, “যে সব সময়ে অস্থায়ী দুই চিকিৎসক থাকেন না, তখন পাঁচ জন সাধারণ চিকিৎসক পালা করে থাকেন। তবে রাতে দুশ্চিন্তা থেকেই যায়। মেডিসিন বিভাগে শূন্যপদ পূরণের জন্য স্বাস্থ্যভবনে আবেদন জানানো হয়েছে।” তাঁর দাবি, ইতিমধ্যে এক জনের নিয়োগের ব্যাপারে নির্দেশ এসেছে। তবে সেই চিকিৎসক এখনও যোগ দেননি। দন্ত চিকিৎসক যাতে দ্রুত যোগ দেন, সে ব্যাপারেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান সুপার।
এসিএমওএইচ সুভাষচন্দ্র মণ্ডল জানান, মহকুমা হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগে প্রতি দিন ১০০-১২০ জন রোগী থাকেন। শুধু দু’জন স্থানীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যোগ দিলেই পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্যা মিটবে না বলে তাঁর মত। স্বাস্থ্যভবনে চিঠি পাঠিয়ে মেডিসিন বিভাগে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন অন্তত তিন জনকে নিয়োগ করার আবেদন জানানো হয়েছে বলে এসিএমওএইচ জানান। |