হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র দেখভালের জন্য প্রতি বছর রোগী কল্যাণ সমিতির খাতে অর্থ বরাদ্দ হয়। বরাদ্দ অর্থে যেমন জলের পাইল লাইন মেরামতের কাজ করা যায়, তেমনই ওয়ার্ডের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজও হয়। কিন্তু, চলতি বছর এই খাতে অর্থ বরাদ্দ হয়নি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। ফলে ‘পিছিয়ে পড়া’ জেলায় আরও পিছিয়ে পড়েছে স্বাস্থ্য পরিষেবা।
আগে হাসপাতালগুলিতে ‘কন্টিজেন্সি ফান্ড’ ছিল। ফলে জরুরি কিছু প্রয়োজন হলে এখান থেকে অর্থ নিয়ে কাজ চালানো হত। এখন সেই ফান্ড নেই। বদলে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র দেখভালের জন্য প্রতি বছর রোগী কল্যাণ সমিতির খাতে অর্থ বরাদ্দ হয়। ছোটখাটো মেরামত থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে এই খাতে বরাদ্দ অর্থের উপর নির্ভর করতে হয় হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমা এবং ব্লক হাসপাতালগুলির জন্য এই খাতে বছরে ১ লক্ষ এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির জন্য বছরে ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। জেলা সদরে বরাদ্দের পরিমাণ আরও বেশি। চলতি বছর জেলার কোনও হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই রোগী কল্যাণ সমিতির জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়নি। ফলে সমস্যায় পড়েছেন কর্তৃপক্ষ। জেলাসদর বা মহকুমা হাসপাতালে নিজস্ব উপার্জনের কিছু উপায় থাকায় সমস্যা কম। কিন্তু ব্লক বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিজস্ব আয়ের উপায় নেই বলে চরম সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এই নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরে দরবার করেছেন কর্তৃপক্ষ। তবে পরিস্থিতির বিশেষ হেরফের হয়নি। সমস্যার কথা মেনে পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র বলেন, “বিষয়টি উধ্বর্র্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” তাঁর কথায়, “কিছু সমস্যা রয়েছে। সেই সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টাও চলছে।” অন্য দিকে, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “রোগী কল্যাণ সমিতির খাতে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ হওয়ার কথা, তা বরাদ্দ হবেই। পশ্চিম মেদিনীপুরের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
এ দিকে, অর্থের অভাবে পরিকাঠামোগত সংস্কার বা উন্নয়নের কোনও কাজ করা যাচ্ছে না স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সমস্যা নানা রকম। কোথাও বিদ্যুতের তার পুড়ে গিয়েছে। ফলে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কোথাও জলের পাইপ লাইন মেরামত করার প্রয়োজন। এই সব ক্ষেত্রে রোগী কল্যাণ সমিতির অর্থই তাৎক্ষণিক ভাবে হাসপাতালের ভরসা। কিন্তু এই খাতে টাকা না থাকায় কোনও কাজ করা যাচ্ছে না। যেমন, কেশপুর ব্লক হাসপাতালের শৌচাগারগুলির দ্রুত সংস্কার জরুরি। অধিকাংশ ওয়ার্ডের পরিস্থিতিও একই। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ সমিতির খাতে নেই। কেশপুরের বিএমওএইচ তুহিন মাইতি বলেন, “প্রয়োজনীয় অর্থ না-থাকায় কিছু কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। অর্থ বরাদ্দ হলেই কাজ শুরু হবে।” বেলদার বিএমওএইচ আশিস মণ্ডলের বক্তব্য, “সমিতির খাতে অর্থ না-থাকলে সমস্যা হবেই। তবে চলতি বছরের অর্থ বরাদ্দ হবে বলে শুনেছি।” রোগী কল্যাণ সমিতির খাতে নামমাত্র বরাদ্দ পড়ে রয়েছে ডেবরা গ্রামীণ হাসপাতালে। ফলে নানা কাজের পরিকল্পনা করেও কর্তৃপক্ষকে পিছিয়ে আসতে হচ্ছে। ডেবরার বিএমওএইচ রজত পাল বলেন, “সমিতির খাতে অর্থ থাকলে জরুরি ছোট কিছু কাজ করা যায়। আর না-থাকলে অনেক সময়ই সমস্যায় পড়তে হয়।” খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির খাতে এখন প্রায় ২০ হাজার টাকা পড়ে রয়েছে। যদিও তা সামান্যই। হাসপাতাল সুপার দেবাশিস পাল বলেন, “চলতি বছরের অর্থ বরাদ্দ হলে কিছু কাজের পরিকল্পনা রয়েছে।” |