সবিতা হালাপ্পানাভার মৃত্যু বড়সড় প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল ভারত এবং আয়ার্ল্যান্ডকে। এই ঘটনায় এক দিকে অস্বস্তি বাড়ছে নয়াদিল্লির। অন্য দিকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রবল চাপের মুখে পড়েছে ডাবলিন।
সমস্যা সমাধানে আজ নয়াদিল্লিতে জরুরি বৈঠকে বসেন ভারতে নিযুক্ত আইরিশ রাষ্ট্রদূত ফেলিম ম্যাকলফিন এবং সাউথ ব্লকের সংশ্লিষ্ট যুগ্মসচিব। ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হবে বলে ম্যাকলফিন আশ্বাস দিলেও গর্ভপাত সংক্রান্ত আইরিশ আইন নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সবিতার মৃত্যুর ঘটনায় সে দেশে, ভারতে এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ভারতীয়দের মধ্যে যে প্রবল বিক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তার সামনে কার্যত অসহায় বোধ করছে নয়াদিল্লি। অন্য দেশের সার্বভৌম আইন বদল করার ক্ষমতা বা অধিকার ভারতের নেই। যে ঘটনা ঘটে গিয়েছে, তার জন্য দুঃখপ্রকাশ করা এবং তদন্ত করার জন্য চাপ দেওয়া ছাড়া আর বিশেষ কিছু আপাতত করার নেই সাউথ ব্লকের।
জাতীয় মহিলা কমিশনও এই ব্যাপারে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলতে চায়। কমিশনের চেয়ারপার্সন মমতা শর্মা বলেছেন, “ভারত সরকারের উচিত বিষয়টিতে পদক্ষেপ করা। মানবিকতার খাতিরেই আইরিশ সরকারের উচিত গর্ভপাত-আইনে পরিবর্তন করা।”
অতীতেও বিদেশের আইনের প্যাঁচে প্রবাসী বা অনাবাসী ভারতীয়দের নানা সমস্যার মুখে একই ভাবে অসহায় দেখিয়েছে ভারতকে। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ নরওয়েতে অভিজ্ঞান-ঐশ্বর্যা এবং আমেরিকায় ইন্দ্রশিসের ঘটনা।
এ ক্ষেত্রে অবশ্য চাপ আয়ার্ল্যান্ড সরকারের উপরেও বাড়ছে। সবিতার মৃত্যু ঘিরে প্রতিবাদ ক্রমশ বাড়ছে। লন্ডন, ডাবলিনের পরে বেলফাস্টেও শুরু হয়েছে বিক্ষোভ।
আয়ার্ল্যান্ডে স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, দেশের গর্ভপাত বিরোধী আইন অবিলম্বে পরিবর্তন করা হোক। কারণ এই আইনের কুফল ভুগতে হয় তাঁদেরও। কোনও মহিলার জীবন বাঁচাতে ভ্রূণ হত্যার প্রয়োজন হলেও গ্রেফতারির ভয় তাড়া করে বেড়ায় চিকিৎসককে।
পিটার বয়লান নামে এক চিকিৎসকের মন্তব্য, “নিরাপদ পরিবেশে আইনি পথে চিকিৎসা করতে চাই। কিন্তু সব সময়েই যেন আমাদের মাথার উপরে খাড়া ঝুলছে। আমরা ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে কিছু করতে গেলেও সেটা আমাদের দেশে বেআইনি হওয়ায় চিকিৎসকরা ফাঁপরে পড়েন।”
আয়ার্ল্যান্ডের তরফে জানানো হয়েছিল, সবিতার মৃত্যুর ঘটনায় দু’টি তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে তাতে সন্তুষ্ট নন সবিতার বাবা আন্দানেপ্পা ইয়ালাগি এবং মা মহাদেবী ইয়ালাগি। তাঁরাও ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। তাঁরা চান, সবিতার মতো পরিণতি আর কারও যেন না হয়। গর্ভপাত নিয়ে আয়ার্ল্যান্ডের আইন দ্রুত সংশোধন করা হোক। |