আর পাঁচটা দিনের মতো নিজের অফিস ঘরে বসে আম-জনতার অভাব-অভিযোগ শুনছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। আচমকা দলের এক জন বর্ষীয়ান কর্মী মারমুখী হয়ে মন্ত্রীকে আক্রমণের করতে গিয়ে রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটে গেল। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ শিলিগুড়িতে মন্ত্রীর কলেজপাড়ার বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে। ওই ঘরে উপস্থিত মন্ত্রীর আপ্ত সহায়ক ও অন্যরা মারমুখী ব্যক্তিকে কোনও মতে নিরস্ত করেন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে পুলিশের হাতে তাঁকে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে মামলা রুজু করেছে। ধৃতের নাম নীরদরঞ্জন চক্রবর্তী। পরে মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বিকেলেই ব্যক্তিগত জামিনে পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দেয়। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার বলেন, “খুবই উদ্বেগজনক ঘটনা। মামলা রুজু হয়েছে।” এ দিন নীরদবাবুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা মন্তব্য করতে চাননি।
পাশাপাশি, নিজের বাড়ির অফিসে ‘আম-দরবার’ চলার সময়ে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। যদিও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বাড়িতে নিরাপত্তা নিতে রাজি হননি। মন্ত্রী বলেন, “শিলিগুড়ি থাকলে রোজই সকালে আমার কাছে মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। সকলের জন্যই আমার দরজা খোলা। একজন প্রবীণ মানুষ হঠাৎ ক্ষেপে মারমুখি হয়ে উঠলেন কেন তা এখনও বুঝতে পারছি না। যাই হোক, বাড়িতে পুলিশ পাহারা বসানোর পক্ষপাতী আমি নই। পুলিশ কী করবে সেটা বলতে পারব না।”
পুলিশ সূত্রের খবর, মন্ত্রী শিলিগুড়িতে থাকলে প্রায় ভোর থেকেই তাঁর বাড়ির সামনে ভিড় উপচে পড়ে। এদিনও প্রচুর লোকজন নানা সমস্যা নিয়ে সেখানে হাজির হন। বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ মন্ত্রী যখন দুজন সদ্য মনোনীত তৃণমূল কৃষক সভার নেতার সঙ্গে কথা বলছিলেন, সেই সময়ে নীরদরঞ্জনবাবু সেখানে ছিলেন। আচমকা নীরদরঞ্জনবাবু ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, ষাটোর্ধ্ব নীরদবাবু চিৎকার করে তাঁকে বঞ্চনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে মন্ত্রীর দিকে তেড়ে যান। উপস্থিত সকলেই হকচকিয়ে যান। প্রাথমিক বিস্ময় সামলে সকলে নীরদবাবুকে আটকানোর চেষ্টা করলে ধস্তধস্তিতে চেয়ার-টেবিল উল্টে যায়। ওই সময়ে নীরদবাবু চেয়ার ছোঁড়ার চেষ্টা করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজনের অভিযোগ। ঘরের কয়েকজনকে ঝাক্কা দিয়ে মন্ত্রীর দিকে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে নীরদবাবু ছিটকে পড়লে দেওয়ালে ঠুকে তাঁর মাথা ফেটে যায় বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ শিলিগুড়ি থানায় ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। নীরদবাবুকে হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে পুলিশ মন্ত্রীর আপ্ত সহায়কের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করে।
এই ঘটনার পরে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারের দফতর থেকে মন্ত্রীর বাড়িতে বাড়তি নিরাপত্তার প্রস্তাব পাঠানো হয়। পুলিশকর্তাদের একাংশ জানান, এদিন তেমন বড় কিছু না-হলেও ভিড়ের সুযোগ নিয়ে আগামী দিনে বড় ধরনের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, অতীতেও ডুয়ার্স থেকে ফেরার সময়ে মন্ত্রীর গাড়ির পিছু নিয়েছিল দুই বাইক আরোহী। কালো হেলমেটে মুখ ঢাকা দুই বাইক আরোহী নির্জন রাস্তায় মন্ত্রীর গাড়ির আগে পিছে চলতে থাকায় পুলিশকে ফোন করেন তাঁর দেহরক্ষী। শেষ পর্যন্ত পুলিশ পৌঁছনোর আগে দুই বাইক আরোহী শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি জাতীয় সড়কের বৈকুণ্ঠপুর বনাঞ্চলের দিকে যাওয়ার গলির মধ্যে ঢুকে যায়। পুলিশ কমিশনার বলেন, “আমরা গোটা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। নির্দেশ মতো পদক্ষেপ করব।” |