প্রায় ১০ বছর ধরে বন্ধ হয়ে থাকা ডুয়ার্সের ঢেকলাপাড়া চা বাগানে ফের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার ভোরে ঢেকলাপাড়া বাগানের উপর লাইনের শ্রমিক বস্তির বাসিন্দা এক ৯ বছর বয়সী বালিকার মৃত্যু হয়েছে। গত দুমাসে এ নিয়ে শুধু মাত্র ঢেকলাপাড়া বাগানে ১৫ জনের মৃত্যু হল। তিন মাস ধরে বন্ধ হয়ে থাকা বীরপাড়ার দলমোড় চা বাগানে ইতিমধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই দুটি বাগানের শ্রমিক বস্তিতে নানা অসুখ বাড়লেও চিকিৎসা পরিষেবা মিলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। আলিপুরদুয়ারের মহকুমাশাসক অমলকান্তি রায় বলেন, “কী ভাবে ওই বালিকা মারা গেল তা দেখছি। বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের পাশে আমরা সব সময় রয়েছি।” ঢেকলাপাড়া বাগানে শুক্রবার মৃত ওই বালিকার নাম অনিশা তাঁতি বছর খানেক ধরে সে লিভারের অসুখে ভুগছিল। মাস দুয়েক থেকে সব কিছু ঝাপসা দেখছিল সে। বছর তিনেক আগে মারা যায় তার মা সরিতা তাঁতি। বাবা বিক্রম বাগানের পাশে ভুটান থেকে নেমে আসা পাগলিঝোরাতে পাথর ভেঙে সংসার সামলান। বিক্রমবাবুর আরেকটি মেয়ে রয়েছে। সে বাগানের প্রাথমিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। এক বছর আগে অনিশার পেট ফুলতে থাকে। বীরপাড়া হাসপাতালে দু-তিন বার নিয়ে চিকিৎসা করান তার বাবা। পাথর ভেঙে সপ্তাহে ২০০ টাকা রোজগার করে দুই সন্তান ও নিজের খাবার জোটাতে হিমসিম খেতে হয় বিক্রমের। নিয়মিত চিকিৎসার ব্যয় বহন করা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না বলে প্রতিবেশীরা জানান। মেয়ের মৃত্যুর পর বিক্রম বলেন, “বউটা অসুখে মারা গেছে। এ বার মেয়েটা মারা গেল। ঠিক মতো ওষুধ-পথ্য দিতে পারিনি। তা হলে বাঁচানো যেত।” চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী মৃত বালিকার দিদি প্রিয়ার কথায়, “স্কুল থেকে যে খিচুড়ি মেলে তা দিয়ে আমরা দুই বোন দুপুরে খেতাম। এ দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বোন কথা বলছে না।” ঢেকলাপাড়া বাগানের শ্রমিক বস্তির ঘরে ঘরে নানা রোগের প্রকোপ। প্রায় সবই অপুষ্টিজনিত রোগ। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে সপ্তাহে একদিন চিকিৎসক পাঠানো হয়। কিন্তু, সব ওষুধ মেলে না বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। আরএসপির শ্রমিক নেতা বিষ্ণু ঘাটানি এ দিন বলেন, “বাগানের পরিস্থিতি ভয়াবহ। ঘরে ঘরে চরম অভাব। খুব শীঘ্রই বাগান চালু করা না হলে মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়বে।” এদিকে গত ১০ নভেম্বর বন্ধ হয় ডুয়ার্সের বান্দাপানি বাগান ওই বাগানটি চালু করার জন্য শুক্রবার শ্রম দফতরের উদ্যোগে বীরপাড়াতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হয়। কিন্তু, মালিকপক্ষ সেখানে যাননি। বৈঠক ভেস্তে যায়। উত্তরবঙ্গের যুগ্ম শ্রম আধিকারিক মহম্মদ রিজানুর বলেন, “আমার খুব শীঘ্রই ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকব। আশা করি মালিক তখন অংশ নেবেন। আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত বাগান চালু করার বিষয়ে চেষ্টা হবে।” তবে ঢেকলাপাড়ায় বালিকার মৃত্যুর খবর পাননি বলে জানালেন জলপাইগুড়ি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সরকার। তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর নির্দেশে ঢেকলাপাড়াতে স্বাস্থ্য সমীক্ষা হয়েছে। অসুস্থদের খুব দ্রুত উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা হবে। বাগানের রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অ্যাম্বুল্যান্স দিয়েছে প্রশাসন। বীরপাড়া কিংবা মাদারিহাট হাসপাতালে থাকবে সেটি। চা বাগানের কাউকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তা ব্যবহার হবে।” |