শিলিগুড়িতে অবৈধ নির্মাণ রুখতে পুর কর্তৃপক্ষ কোনও ‘দৃষ্টান্তমূলক’ ব্যবস্থা নিতে না-পারায় অসন্তোষ প্রকাশ করলেন শহরের প্রথম সারির প্রবীণ নেতাদের অনেকেই। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রশান্ত নন্দী, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতুল চক্রবর্তী ও সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা তথা প্রাক্তন পুর চেয়ারম্যান স্বপন সরকার।
আলাদা ভাবে হলেও প্রায় একই সুরে প্রবীণ নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, বাণিজ্যিক ভবন তৈরির ক্ষেত্রে বেআইনি কাজ হলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা না-নেওয়ায় পুরবোর্ডের সদিচ্ছা নিয়ে সব মহলেই প্রশ্ন উঠেছে। দলমত নির্বিশেষে বর্ষীয়ান নেতারা তাঁদের অসন্তোষের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। যেমন কংগ্রেস নেতা প্রশান্ত নন্দী বলেছেন, “রাজ্যে সরকারে তখনও পরিবর্তন হয়নি। মানুষ অনেক আশা নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের এই পুরবোর্ডকে ক্ষমতায় এনেছেন। বামেদের হারতে হয়েছে। অথচ ভাবলে অবাক লাগে অবৈধ নির্মাণ নিয়ে এই পুরবোর্ড কোনও ব্যবস্থাই নিতে পারছে না। বিষয়টি নিয়ে কেন এতদূর জল গড়াবে তা বেবেই আশ্চর্য লাগছে।” প্রবীণ কংগ্রেস নেতার পরামর্শ, “পুরবোর্ডের শাসক জোট বসে বিষয়টি মিটিয়ে নিক।” |
শিলিগুড়ি হাসপাতালের সামনে নির্মীয়মাণ ওষুধের দোকান। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক |
পাশাপাশি, শহরের অবৈধ নির্মাণ-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জোট নেতৃত্ব কে কাকে ছোট করবেন সেই লড়াই চলছে বলে মনে হচ্ছে প্রশান্তবাবুর। তাঁর আক্ষেপ, “এভাবে চলাটা রাজনৈতিক আত্মহননের সামিল। যে ভাবে পুর বোর্ড চলছে তাতে পরে তাঁদের আর জেতার ইচ্ছে নেই বলেই মনে হচ্ছে। অথচ এই পুরবোর্ড উন্নয়নের সঙ্গে বেআইনি বাণিজ্যিক নির্মাণ বন্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিলে ভাল লাগত।” দীর্ঘদিন শিলিগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন সিপিএম নেতা স্বপন সরকার। তিনি স্বীকার করেছেন, তাঁর সময়ে শহরে অবৈধ নির্মাণের চেষ্টা হতো। সে সব অনেক ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে নানা রকম বাধা বিপত্তির মুখে তিনি পড়েছেন বলে জানিয়েছেন। স্বপনবাবু বলেন, “বাধায় আটকে পড়লে হবে না। অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করতে প্রয়োজনে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কয়েকটি ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। পূর্ত দফতরের সাহায্য নিয়ে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে শহরের অবৈধ নির্মাণগুলি চিহ্নিত করতে হবে। নাগরিক সমিতিকে ডাকতে হবে। কয়েকটি অবৈধ নির্মাণ ভাঙা না হলে এই প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।” শেঠ শ্রীলাল মার্কেট, বিধান মার্কেট, সেবক রোড, মহানন্দাপাড়া, মিলনপল্লি, সেবক রোড সহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ নির্মাণের অনেক অভিযোগ রয়েছে।
এমনকী নকশা ছাড়াই সম্প্রতি শেঠ শ্রীলাল মার্কেটে আদর্শ মহাবিদ্যালয় ভবনের নির্মাণ কাজের জন্য মেয়র বিশেষ অনুমতি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ডেপুটি মেয়র এ ব্যাপারে সম্মতি দিতে ‘নোট শিট’ও দিয়েছিলেন। কংগ্রেসের কাউন্সিলর সবিতা অগ্রবালও অনুমতি দিতে বারবার সুপারিশ করেছিলেন বলে পুরসভার একটি সূত্রে জানা যায়। যদিও সবিতাদেবী তা অস্বীকার করেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী একাধিকবার শহরের অবৈধ নির্মাণ নিয়ে প্রকাশ্যেই সরব হন। অথচ তার পরেও হাসপাতাল রোডের ধারে, বিভিন্ন বাজারে গ্যারাজের জায়গা দখল করে যথেচ্ছ অবৈধ নির্মাম চলছে বলে অভিযোগ উঠছে। |
স্বপন সরকার |
প্রশান্ত নন্দী |
প্রতুল চক্রবর্তী |
|
দীর্ঘদিন ধরে শহরে অবৈধ নির্মাম নিয়ে হইচই হলেও পুরসভা কেন ‘তথ্যনুসন্ধান কমিটি’ গড়ছে না সেই প্রশ্ন তুলেছেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর ততা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা প্রতুল চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “পুর কর্তৃপক্ষের উচিত ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ কমিটি গড়ে শহরের কোথায় অবৈধ নির্মাণ রয়েছে, ভবনগুলির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা দরকার। কোনটি কত বছরের পুরনো, সে সময় কী আইন ছিল তা দেখে রিপোর্ট তৈরি করা প্রয়োজন। অবৈধ নির্মাণগুলি চিহ্নিত করে এর পর ভেঙে দেওয়া প্রয়োজন। সেগুলি নিয়ম মেনে তৈরি করা হয়নি। কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে নজির গড়তে হবে। না হলে সমাজের কাছে পুরবোর্ডকে জবাবদিহি করতে হবে।” |