অমাবস্যার ভরা কোটালে জল বাড়লে দুর্বল নদীবাঁধের জন্য বিপদ যে হতে পারে তা আঁচ করতে পেরেছিলেন নদীপারের গ্রামগুলির বাসিন্দারা। কিন্তু তা যে এতটা ভয়ানক হবে, কল্পনা করতে পারেননি। তাঁরা। তাই বৃহস্পতিবার রাতে বাঁধ ভেঙে প্লাবনের জেরে ঘরবাড়ি হারিয়ে মানুষগুলি এখন বাঁধ মেরামতিতে প্রশাসনের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন। |
উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের যোগেশগঞ্জ পঞ্চায়েতের সর্দারপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা বৃহস্পতিবার রাতে রায়মঙ্গল নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে। ঘবাড়ি ডুবে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন প্রায় এক হাজার মানুষ। ফ্লাড সেন্টার ও আর স্কুলবাড়িই এখন তাঁদের ঠিকানা। বসিরহাট মহকুমা ও ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সুন্দরবন লাগোয়া রায়মঙ্গল নদীর পাড় বরাবর সর্দারপাড়ায় বাঁধের অবস্থা বেশ কিছুদিন ধরেই খারাপ। বাঁধের ধারে মেছোভেড়ি গড়ে ওঠায় বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এলাকার মানুষের দাবি, মেছোভেড়ির জন্য বাঁধের ক্ষতির বিষয়ে বার বার প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, আবেদনের প্রেক্ষিতে শুধুমাত্র বাঁধে কয়েক ঝুড়ি মাটি ফেলা ছাড়া বাঁধ রক্ষায় এবং মেছোভেড়ি নিয়ে উপযুক্ত কোনও পদক্ষেপ করেনি সেচ দফতর বা প্রশাসন। ফলে উৎসবের মরসুমে তাঁদের এ ভাবে ঘরছাড়া হতে হল। হিঙ্গলগঞ্জ ছাড়াও সাহেবখালি এলাকাতেও বাঁধ ভেঙে গত কয়েকদিন থেকেই জল ঢুকছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। তাঁদের কথায়, এবছর চাষ ভাল হয়েছিল। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় চাষের ক্ষতি হল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিবছরের মতো এ বছরেও কালীপুজোর সময় অমাবস্যার ভরা কোটালের জন্য রায়মঙ্গলের জল বাড়তে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার রাতে বাঁধ ভেঙে জল ঢুকতে শুরু করে গ্রামে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভাঙন বেড়ে জলের তোড়ে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে যান বসিরহাটের মহকুমা শাসক শ্যামল মণ্ডল, এসডিপিও (বসিরহাট) আনন্দ সরকার, বিডিও বিশ্বজিৎ মণ্ডল, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবু বক্কর গাজি ও যোগেশগঞ্জ পঞ্চায়েতের প্রধান মুরারি মোহন মণ্ডল সহ বিভিন্ন থানার ওসিরা। ঘরহারা পরিবারগুলির জন্য খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় পুলিশ প্রশাসনের তরফে। মহকুমাশাসক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “বিডিওকে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। জল কমলে দ্রুত বাঁধ মেরামতির জন্য সেচ দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” দুর্গতদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে তিনি জানান। |
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সর্দারপাড়ায় ১৭০টি আদিবাসী পরিবার রয়েছে। সকলের বাড়িতেই নোনা জলে প্লাবিত। সুরেন মুন্ডা, মিনতি মুন্ডা, কৃষ্ণপদ মুন্ডা, প্রভাস চন্দ্র নস্কর, বীরেন মণ্ডল, খগেন গাইনরা বলেন, “নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসার। বাঁধের খারাপ অবস্থার কথা বার বার জানিয়েছি প্রশাসনকে। কিন্তু তার ফল যে কী হয়েছে, দেখতেই পাচ্ছেন। শীত পড়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় ঘরহারা হয়ে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়াতে হচ্ছে স্রেফ প্রশাসনের গাফিলতিতে।’’ তবে একই সঙ্গে আশ্রয়হীন মানুষগুলি পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। এদিন পুলিশের পক্ষ থেকে ঘরহারা পরিবারগুলির খাওয়ার দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবু বক্কর গাজি বলেন, “বাঁধের ধারে বেআইনি ভেড়িগুলির মালিকের বাধায় বাঁধ সংস্কার করা যায়নি। শীঘ্রই সর্বদল বৈঠক ডেকে এই সব বেআইনি ভেড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আলোচনা হবে।” |