একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের দাবি গোবরডাঙার মানুষের দীর্ঘদিনের। সেই কারণে গত মার্চ মাসে ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়া টাউন হলটির পুনর্নির্মাণ কাজের সূচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তৃণমূল পরিচালিত গোবরডাঙা পুরসভা। কিন্তু তা না হওয়ায় হতাশ হন অনেকেই। এ বার ডিসেম্বর মাসে সেই কাজ শুরুর ফের আশ্বাস দিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত বলেন, “নতুন ভবনের প্ল্যান তৈরি করতে সময় লেগেছে। তা ছাড়া, দমকল এবং পুর দফতরের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অনুমতি পেতে দেরি হওয়ায় মার্চ মাসে নির্মাণ কাজের সূচনা করা যায়নি। এখন যাবতীয় অনুমতি মিলেছে। আগামী ২ ডিসেম্বর নির্মাণ কাজের সূচনা করবেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা মুকুল রায়।”
গোবরডাঙায় অনেকগুলি নাট্যদল রয়েছে। রয়েছে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থাও। পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের দাবি জোরালো হওয়ায় ২০১০ সালের গোড়ায় পুরনো জরাজীর্ণ টাউন হলটি ভেঙে ফেলে নতুন ভাবে গড়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাম পরিচালিত পুরবোর্ড। প্রস্তাবিত ভবনের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করা হয়। শুরু হয় প্রাথমিক কাজও। কিন্তু ওই বছরের মাঝামাঝি পুরভোটে হেরে যায় বামেরা। ক্ষমতায় এসে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড ওই নির্মাণ প্রকল্পটি বাতিল করে নতুন ভাবে ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। |
কেন একই প্রকল্প দ্বিতীয়বার করা হচ্ছে?
পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, বাম পুরবোর্ড মঞ্চ নির্মাণের জন্য তহবিলের ব্যবস্থা না করে শুধু নির্বাচনী চমক দিতে টাউন হল ভেঙে শিলান্যাস করে। বর্তমান পুরপ্রধান বলেন, “বাম পুরবোর্ড মিউনিসিপ্যাল ফান্ড ট্রাস্টের কাছ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পর সুদ-সহ ঋণ মিটিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, ২৫ লক্ষ টাকায় টাউন হল করা সম্ভব ছিল না।”
তৃণমূল পুরবোর্ডের এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন আগের পুরপ্রধান সিপিএমের বাপি ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের উদ্যোগে একটি সংস্থার কাছ থেকে টাউন হল নির্মাণের জন্য ১ কোটি টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রথম কিস্তির ২৫ লক্ষ টাকা পেয়েছিলাম। তা দিয়ে কাজ শুরু হয়। পরে পর্যায়ক্রমে আরও টাকা পাওয়া যেত। কিন্তু তার আগেই ভোট চলে এল।”
পুরসভা জানিয়েছে, নতুন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য অর্থের কোনও অভাব হবে না। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকল্পটির জন্য বর্তমানে পুরসভার হাতে রয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকা। তা ছাড়া, মিলেছে সাংসদ-বিধায়ক তহবিলের টাকা এবং অনুদানও। সাধারণ মানুষের কাছেও অর্থের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
তবে, পুরসভাকে চিন্তায় রেখেছে টাউন হল নির্মাণের জমি। কেননা, ওই প্রকল্পের জন্য ৫৭ শতক জমি রয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আইন অনুযায়ী, প্রেক্ষাগৃহ যেখানে তৈরি হবে তার ৬০ শতাংশ জমি খালি রাখতে হবে। এ জন্য আরও ৩ কাঠা জমির প্রয়োজন। জমির মালিকদের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
পুরপ্রধান বলেন, “আইন অনুযায়ী প্রেক্ষাগৃহ তৈরির জন্য নির্দিষ্ট মোট জমির ৬০ শতাংশ খালি রাখতে হয়। ৪০ শতাংশ জমিতে ভবন তৈরি করা হবে। এ জন্যই বাড়তি জমি কিনতে হচ্ছে। জমি নিয়ে সমস্যা হবে না বলেই মনে করি।”
এলাকার সংস্কৃতিপ্রেমীরা চান, দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ হোক। চালু হোক নতুন টাউন হল। |