|
|
|
|
মূল্যবৃদ্ধি, রাসে ভাঁটার আশঙ্কা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নবদ্বীপ |
প্রতিমা থেকে পুরোহিত, বাঁশ থেকে বাজনা। নবদ্বীপের রাসের প্রতিটি ক্ষেত্রেই মূল্য বৃদ্ধির ধাক্কায় আগেই কপালে ভাঁজ পড়েছিল উদ্যোক্তাদের। এ বার মূল্যবৃদ্ধির জেরে নবদ্বীপের প্রধান উৎসব রাসকে ঘিরে আশঙ্কা দানা বাঁধছে ব্যবসায়ী মহলেও। ব্যবসায়ী মহলের আশঙ্কা, মূল্যবৃদ্ধির জেরে রাসের বাজেট যদি নিয়ন্ত্রিত হয়, তাহলে তার প্রভাবে হোটেল থেকে সাধারণ বাজার সব কিছুই লাভের পরিমাণ কমে যাবে।
নবদ্বীপের প্রধান উৎসব রাস। সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা সকলেই সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন রাস উৎসবের জন্য। রাসকে ঘিরে সামগ্রিক বাণিজ্যের পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এর বেশির ভাগটাই ছড়িয়ে স্থানীয় স্তরে ব্যবসায়ী ও কারিগরদের মধ্যে। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির জেরে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উদ্যোক্তারা কেউ বাজেট কাটছাঁট করার কথা ভাবছেন। ব্যবসায়ীদের কথায়, এর প্রভাব স্থানীয় বাজার ও ব্যবসার উপরে পড়বে। কমবে লাভের পরিমাণও। নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তমকুমার সাহা বলেন, “সার্বিক ভাবে প্রায় সব ধরনের পণ্যে ৩০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। তবে সব থেকে বেশি মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে পেট্রোপণ্যের ক্ষেত্রে। যার প্রভাবে দু’দফায় বিভিন্ন পণ্যের দাম কার্যত অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধি থেকে রাস উৎসবের রেহাই নেই।” তাঁর আশঙ্কা, “রাস থেকে যে ধরনের বাণিজ্য প্রতি বছর হয়ে থাকে, মূল্যবৃদ্ধির জেরে তার পরিমাণ কমবে।”
বাজার দর বাড়ার ফলে রাস উৎসবের জৌলুস যদি কোনও ভাবে কমে, তাহলে পর্যটকের সংখ্যা কমবে। ফলে হোটেল থেকে পর্যটন ব্যবসায়ী, পরিবহণ শিল্প থেকে পাড়ার মোড়ের দোকানদারের ব্যবসাও মার খাবে। এ প্রসঙ্গে হোটেল ব্যবসায়ী প্রদীপ দেবনাথ বলেন, “সারা বছর যে কয়েকটি উৎসবকে সামনে রেখে হোটেল সাজিয়ে তোলা হয়, তার অন্যতম রাস। কিন্তু এ বছর আমরা আশঙ্কা করছি, পর্যটকের সংখ্যা শুধু রাস বলে নয়, সামনের শীত মরশুমেও অন্য বছরের তুলনায় কম হবে। আমরাও বাধ্য হয়েছি মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে হোটেলের ঘর থেকে খাবারের দাম বাড়াতে। জানি না এটা পর্যটকেরা কী ভাবে নেবেন!” এই সব আশঙ্কার মধ্যেই চলছে রাস উৎসবকে ঘিরে প্রস্তুতি। নবদ্বীপ কেন্দ্রীয় রাস উৎসব কমিটির অন্যতম কর্তা দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের এবারের লক্ষ্য নবদ্বীপের আরও বেশি অংশে প্রতিমা নিরঞ্জনের দিন বিদ্যুৎ সংযোগ রেখে রাস উৎসব সম্পন্ন করা। এজন্য প্রশাসনের কাছে আমরা বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছি। যেমনশোভাযাত্রার চক্রপথের দৈর্ঘ্য চার কিমি থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৫ কিমি পর্যন্ত করা, শোভাযাত্রার দিন যে সমস্ত প্রতিমার উচ্চতা বিদ্যুতের তার ছুঁঁয়ে যায়, সেই সমস্ত প্রতিমা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চক্রপথে প্রবেশ করবে এবং রাতে শোভাযাত্রার শেষে মণ্ডপে না এসে সরাসরি নিরঞ্জন ঘাটে চলে যাবেতাহলে সেই সমস্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ রাখা সম্ভব হবে। এ ছাড়াও রাসের দিন শহরের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিভিন্ন বারোয়ারি উৎসব কমিটি যে ‘নবমী’ করে থাকে, তার পথ একমুখী করে দেওয়ার কথা প্রশাসনকে জানান হয়েছে।” নবদ্বীপ বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের স্টেশন ম্যানেজার অসিত সাহা বলেন, “এলাকা উন্নয়ন খাতে নবদ্বীপের বিধায়ক প্রায় ২০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। ওই অর্থে হাই-টেনশন বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনের উচ্চতা বাড়ানোর কাজ চলছে এখন। আমরা চেষ্টা করছি যাতে রাস উৎসবের সময়ে নবদ্বীপের অধিকাংশ এলাকায় আলো থাকে। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের কাছে অনুরোধ, তাঁরা যেন বিদ্যুৎ দফতরের সময়সীমা-সহ অন্য শর্তগুলি মেনে চলেন।” বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, “রাস নবদ্বীপের শ্রেষ্ঠ উৎসব। আমরা আশা করছি, এ বারেও এই উৎসবে বহু লোকই আসবেন। তাঁদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য পুরসভা সচেষ্ট।”
|
|
|
|
|
|