মাণ্ডবী নদীর তীরে ওপারা-বেটো, চিডি-বিলাল, আক্রম-পেন, মেহতাব-লেনি, নানা লড়াই ছাপিয়ে প্রচারমাধ্যমের যাবতীয় নজর ওঁদের দু’জনকে ঘিরেই।
কেন? ম্যাচের রিমোট কন্ট্রোল যে ওঁদের হাতেই।
তাই গোয়ার সমুদ্রসৈকতে স্যাটারডে নাইট-এর মুঠো-মুঠো আনন্দে ডুব দেওয়ার সাঁঝবেলাতেও ট্রেভর জেমস মর্গ্যান বনাম সুভাষ ভৌমিক ডুয়েল-এ কোঙ্কনি ফুটবল জনতা খুঁজছেন ‘কিসমে কিতনা হ্যায় দম’ মার্কা ফুটবল-কনসার্ট। ইস্টবেঙ্গল-চার্চিল ব্রাদার্স ম্যাচের আগে এটাই ছবি মারগাওয়ের।
আই লিগে দু’দলের শেষ পাঁচ সাক্ষাতে অপরাজিত গোয়ার ক্লাব। এ বার পাঁচ ম্যাচে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেটোদের পয়েন্ট ১২, সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে পেনরা মোটে এক পয়েন্ট পিছনে। শুক্রবার ডেম্পো হারায় শনিবার যারা জিতবে তাঁরাই চড়ে বসবে আই লিগ টেবিলের মগডালে। সে জন্য হাইভোল্টেজ ম্যাচের আগে দুই কোচই আরও ব্যস্ত নিজের-নিজের মগজাস্ত্রে শান দিতে।
লাল-হলুদ কোচের ‘এলিট ফোর্স’ তাঁর রিজার্ভ বেঞ্চ। পঞ্চাশ দিন আগে সেই বেঞ্চ থেকেই ফেড কাপের সেমিফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে গোল করে সুভাষ ভৌমিকের ভারতসেরা হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছিলেন লালরিনডিকা।
এ বার কি ঘরের মাঠে বদলার ম্যাচ? ফোনে প্রশ্নটা শুনে সুভাষ বললেন, “তেষট্টি বছর বয়সে আর বদলা-টদলা নিয়ে ভাবি না। ইস্টবেঙ্গল ভাল দল। তবে বাজার করতে বেরিয়ে তো আর খালি হাতে ফিরতে পারি না।” সুভাষের গোলকিপার সন্দীপ নন্দীর কাছে শনিবারের ম্যাচ আবার ‘ভাল খেলে মর্গ্যান স্যরকে গুরুদক্ষিণা দেওয়ার’। চলতি মরসুমে মর্গ্যান তাঁকে দলে রাখতে চাইলেও ইস্টবেঙ্গল কর্তারা চাননি। বর্ধমানের ছেলে তাই গোয়ার দলের তেকাঠি সামলাচ্ছেন। সন্দীপও বললেন, “বদলা নয়। ভালো খেলে জিততে হবে। আক্রম, বিলাল, বেটোরা ছন্দে খেললে আমরাই তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ব।” যা শুনে বিপক্ষ স্টপার অর্ণব বলেন, “কাল সন্দীপদারা যেন ভাল না খেলে।”
বিপক্ষ শিবিরে যখন এ রকম মুখে বিনয়ী-মনে বদলার পরিবেশ, তখন চিডিদের কোচ খোশমেজাজে। এ দিনই লাল-হলুদে ট্রায়াল দিতে গোয়ায় পৌঁছে গিয়েছেন চতুর্থ বিদেশি অস্ট্রেলিয়ার বরিসিচ। ফোনে মর্গ্যান বললেন, “আমরা বিপক্ষকে নিয়ে ভাবি না। সাতাশ ম্যাচ যারা অপরাজিত তাদের নিয়ে বরং অন্যরা ভাবুক। শনিবারের ম্যাচ ফিফটি-ফিফটি।”
ফিফটি-ফিফটি ম্যাচের আগে অবশ্য লাল-হলুদে খানিকটা তাল কেটেছে মাঝমাঠের প্রাণভোমরা মেহতাবকে নিয়ে। শুক্রবার সকালের অনুশীলনে ডান পায়ের হাঁটুতে পুরনো চোট ফের মালুম দেওয়ায় সাততাড়াতাড়ি মাঠ ছাড়তে হয় মেহতাবকে। শনিবার সকালে তাঁকে পরীক্ষা করবেন মর্গ্যান। তার পর খেলানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। মেহতাব নিজে বলছেন, “ডু অর ডাই ম্যাচ। তিন পয়েন্ট চাই। তবে ঝুঁকি নিয়ে খেলব না।” মর্গ্যান আপাতত মেহতাবকে ধরেই দল সাজাচ্ছেন। যদি তাঁকে একান্তই না পাওয়া যায় তার জন্য সুবোধ কুমারকে তৈরি রাখা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে রক্ষণে নওবা-ওপারা-অর্ণব-সৌমিকের সামনে থাকবে খাবরা-সুবোধ-ইসফাক-পেনের মাঝমাঠ।
মর্গ্যানের রিজার্ভ বেঞ্চ আর পাসিং ফুটবলের ঝনঝনানির কোড, না সুভাষের ফুটবল-ঠাসা মস্তিষ্ক শনিবারের মারগাওয়ের সেরা বিনোদন হয়ে উঠতে পারে এই যুদ্ধটাই।
|
এ বারের আই লিগের ‘লাস্ট বয়’ ওএনজিসি ৩-১ গোলে হারিয়ে দিল ‘ফার্স্ট বয়’ ডেম্পোকে! যদিও আর্মান্দো কোলাসোর দল এর পরেও পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে। ডেম্পোর এখন ৬ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট। তবে শনিবার ইস্টবেঙ্গল-চার্চিল ম্যাচে যারা জিতবে তারাই ডেম্পোকে টপকে যাবে। এ দিন সোরাবুদ্দিন এবং অধিনায়ক যতীন বিস্তের গোলে ওএনজিসি ২-০ এগনোর পরে ডেম্পোর ব্যবধান কমান পিটার কার্ভালো। কিন্তু ওএনজিসির লাইবেরিয়ান স্ট্রাইকার এরিক ব্রাউন এর পর ডেম্পোর কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে ৩-১ করেন। |