আপনার ছেড়ে আসা দল আর যোগ দিতে যাওয়া টিমের লড়াইয়ে ফেভারিট কে?
করিম বেঞ্চারিফা হাসেন। ফোনের এ পার থেকে পরিষ্কার শোনা যায় হাসিটা। “আমি এখন কলকাতা যাওয়ার জন্য ব্যাগ গোছাচ্ছি।”
ধরা যাক, শনিবার কোনও টিভি চ্যানেলে বিশেষজ্ঞ হিসেবে বসেছেন, মোহনবাগান-সালগাওকর ম্যাচের আগে। আপনার ভবিষ্যদ্বাণী জানতে চাওয়া হলে কী বলবেন?
গোয়া থেকে সতর্ক শোনাল করিমের গলা। “এ বারের আই লিগে কেউ ফেভারিট নয়। সে জন্য যে কেউ যে কোনও ম্যাচ জিততে পারে।’’
যুবভারতীতে ওডাফাদের মুখোমুখি হওয়ার দিনই সালগাওকর ‘মুক্তি’ দিচ্ছে করিমকে। রবিবার নতুন কোচ ঢুকবেন বাগানে। মরোক্কান কোচের ছাড়া আর ধরা-র মাঝে স্যান্ডউইচ হয়ে পড়ার জন্যই সম্ভবত আজকের ম্যাচ অন্য মাত্রা পেয়ে গিয়েছে। ম্যাচের আগের দিন ডেভিড বুথ আর মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিবিরে ঘুরেও মনে হলকরিমচাচার অশরীরী উপস্থিতি রয়েছে দুই জায়গাতেই।
সালগাওকর-বধের টিপস তা হলে নিলেন করিমের কাছ থেকে? |
ছোট্ট প্রশ্নে রে-রে করে ওঠেন মোহনবাগানের সহকারী কোচ। “না না, এখনও উনি টিমে যোগ দেননি। তা হলে কেন ওঁর টিপস নিতে যাব? সেটা তো শিষ্টাচার বিরোধীও,” বলেই ঢোক গেলেন মৃদুল। কিন্তু শোনা যাচ্ছে, সালগাওকর ম্যাচের টিমটা করিমই করে দিচ্ছেন এসএমএস করে? এ বার জবাবের ব্যাটন মৃদুলের দলের গোলকিপার কোচ হেমন্ত ডোরার হাতে। “সে রকম কিছু তো হচ্ছে না। তবে আমাদের ম্যাচের পর উনি কনগ্র্যাচুলেট করেন, এটা ঠিক।”
প্রকাশ্য মন্তব্য যাই হোক, সরকারি ভাবে দলে যোগ দেওয়ার আটচল্লিশ ঘণ্টা আগেই করিম কিন্তু রীতিমতো উপস্থিত মোহনবাগানে!
কিন্তু সালগাওকরেও যে করিমের নাম ঘোরাফেরা করল সারা দিন!
করিমের তৈরি করা স্ট্র্যাটেজিতেই তা হলে শনিবারের ম্যাচ খেলবেন? সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এই প্রশ্নে অস্বস্তিতে বুথ। “করিম নিয়ে কিছু বলব না। তবে ও প্রি-সিজন কন্ডিশনিং যে ভাবে করে দিয়ে গিয়েছে সেটা অসাধারণ।” করিমের ছেড়ে আসা ক্লাবের নতুন কোচ এ ভাবেই পুরনো কোচের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে চান।
কিন্তু পারছেন কই? যুবভারতীতে মাঠ নিয়ে সকালে সামান্য ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল সালগাওকরকে। নির্ধারিত সময়ের পরে নেমে যে অনুশীলন করিয়েছেন বুথ, তাতে শনিবার করিমের ছকেই দল নামাচ্ছেন তিনি। ৪-৪-১-১। অস্ট্রেলীয় শন রুনিকে সামনে রেখে স্ট্র্যাটেজি তৈরি করছেন বুথ। বহস্পতিবার রাতে রুনির পেটের গণ্ডগোল হলেও আপাতত তিনি সুস্থ।
নিয়মিত খেলা দেখেন এবং জাতীয় জুনিয়র দলের কোচ ছিলেন বলে গোয়ার বিখ্যাত অফিস ক্লাবটির ফুটবলারদের বর্তমান পরিস্থিতি গড়গড় করে বলে যেতে পারেন মৃদুল। তা সত্ত্বেও এই ম্যাচটা মোহনবাগানে তাঁর এক মাসের পূর্ণাঙ্গ কোচিং জীবনে অতিগুরুত্বপূর্ণ। কোচ হয়ে রিজার্ভ বেঞ্চে বসার শেষ দিনটায় জিতে মাঠ ছাড়তে চাইছেন তিনি। মুখে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জের কথা না বললেও, অনুশীলনে মৃদুলের আন্তরিকতা আর তাতানোর কৌশল দেখলেই বোঝা যায় ‘বিশেষ’ ম্যাচে বাগানকে জিতিয়ে করিমের হাতে দলকে শঁপে দিয়ে ট্র্যাজিক নায়ক হতে কতটা মরিয়া তিনি। এবং সেই মরিয়া চেষ্টায় মৃদুল সঙ্গে পেয়ে যাচ্ছেন ওডাফা ওকোলিকে।
প্রয়াগের জার্সি গায়ে স্বদেশীয় র্যান্টি মার্টিন্স একের পর এক গোল করে ওডাফাকে এতটাই তাতিয়ে দিয়েছেন যে, নিজের ফর্মে ফিরতে মোহন-অধিনায়ক চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না। মায়ের অসুস্থতার জন্য ফিজিও জোসেফ রোনাল্ড দেশে ফিরে গিয়েছেন। এই অবস্থায় নিজেই নিজের শিক্ষক হয়ে উঠেছেন নাইজিরিয়ান গোলমেশিন। এ দিন অনুশীলন দেখতে এসেছিলেন ওডাফার তারকা-এজেন্ট চিমা ওকোরি। তাঁর সামনেই দেখা গেল, নবিকে সঙ্গে নিয়ে ওডাফা ফিট হওয়ার অনুশীলন করে চলেছেন। কিন্তু গোলের জন্য বাগানে শিবরাত্রির সলতে হয়ে জ্বলা ওডাফাকে কি সালগাওকর কোচ স্বচ্ছন্দে মাঠে বিচরণ করতে দেবেন? তাঁকে দেবেন নিজের খেলা খেলতে? “ওডাফাকে আমাদের সবাই চেনে। দীর্ঘদিন গোয়ায় খেলেছে ও। ওকে আটকানোর স্ট্র্যাটেজি আমাদের তৈরি,” চ্যালেঞ্জটা নিয়েই নেন বুথ।
মৃদুল যা টিম ভেবেছেন তাতে নতুনত্ব নেই। ওডাফার একটু পিছনে খেলবেন স্ট্যানলি। মাঝমাঠে নবি, জুয়েল, ডেনসন আর স্নেহাশিস। রক্ষণে নির্মল, আইবর, ইচে আর বিশ্বজিৎ। রক্ষণ সংগঠন ঠিক করতে এ দিন অনেকটা সময় ব্যয় করলেন বাগান কোচ। বলে দিলেন, “হোম ম্যাচে শুরুতেই গোল তুলে নিতে চাই।”
সংখ্যার বিচারে সালগাওকরের বিরুদ্ধে বাগানের সাফল্য চোখে পড়ার মতো। শেষ পাঁচ মুখোমুখিতে গোয়ার ক্লাব হারাতে পারেনি গঙ্গাপারের ক্লাবকে। কিন্তু শনিবার যুবভারতীতে কী হবে? করিম ‘কনগ্র্যাটস্’ মেসেজ টাইপ করে রেখেছেন কি না জানা যায়নি, তবে শোনা যাচ্ছে ওডাফাদের অনেকের কাছে ‘বেস্ট অফ লাক’ পৌঁছে গিয়েছে শুক্রবার রাতেই। |