লাভপুরে পুড়ল সাতটি বাড়ি
ক রাতে পুড়ে গেল সাত জনের বাড়ি। আর সেই ঘটনাকে ঘিরে পুড়ে যাওয়া বাড়ির মালিক এবং গ্রামবাসীদের মধ্যে শুরু হয়েছে চাপানউতোর।
শুক্রবার ভোররাতে ঘটনাটি ঘটেছে লাভপুরের হাতিয়া গ্রামে। যাঁদের বাড়ি পুড়েছে, তাঁদের অভিযোগ, গ্রামবাসীর একাংশই আগুন লাগিয়েছেন। গ্রামবাসীরা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে, ওই সাত জনই আদতে সমাজবিরোধী। তাঁরা নিজেরাই বাড়িতে আগুন লাগিয়ে গ্রামবাসীদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভোরে রেজাউল শেখ, মনিরুল শেখ-সহ ৭ জনের বাড়িতে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। ৯টা নাগাদ বোলপুর থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন হাতিয়া গ্রামে গিয়ে আগুন নেভায়। রেজাউল এলাকায় পরিচিত মুখ। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর রেজাউল ও তার অনুগামীরা তৃণমূলে যোগ দেন। তার আগে সিপিএম পরিচালিত হাতিয়া পঞ্চায়েতের স্থানীয় গ্রামোন্নয়ন সমিতির সচিব ছিলেন রেজাউল। সেই সময় ইন্দিরা আবাসন, বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা-সহ নানা সরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করতেন গ্রামের মানুষ। লাভপুর থানাতেও রেজাউলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। সব মিলিয়ে গ্রামের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশই ক্ষুব্ধ ছিলেন তাঁর উপরে। রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় রেজাউল সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেছেন বলেও এলাকাবাসীর দাবি।
এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ গ্রামে গিয়ে দেখা গেল তখনও কয়েকটি বাড়িতে আগুন জ্বলছে। দমকলের কর্মীরা কাজ করছেন। এলাকায় টহল দিচ্ছে পুলিশ। গ্রামে ঢোকার দু’দিকে পাঁচশোরও বেশি মানুষের জমায়েত। সংবাদমাধ্যমকে কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছেন না তাঁরা। বিশেষ করে চিত্র সাংবাদিকদের দগ্ধ বাড়ির ছবি করতে দেওয়া হচ্ছে না।
সম্প্রতি গ্রামবাসীদের সঙ্গে রেজাউলের বিরোধ বাধে মাঠপাহারা নিয়ে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, “আমরা মাঠপাহারা থেকে পাওয়া ধান বিক্রির টাকা গ্রামের মসজিদের উন্নয়নে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু, রেজাউল ও তার দলবল তাদের ওই টাকা দিতে হবে বলে জানিয়ে দেয়। আমরা রাজি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকালে বাসস্ট্যান্ডে আমাদের কয়েক জনের উপর চড়াও হয়। বোমাবাজি করে। তখন আমরা দলমত নির্বিশেষে এককাট্টা হয়ে প্রতিরোধ করি। তাতেই তারা নিজেদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। এখন গ্রামবাসীকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।”
ঘটনার পর থেকেই রেজাউল ও তাঁর আত্মীয়েরা গ্রাম ছেড়েছেন। ফোনে যোগাযোগ করা হলে রেজাউল অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “বৃহস্পতিবার কিছু গ্রামবাসী আমার এক ভাইকে বাস থেকে নামিয়ে খুন করার উদ্দেশ্যে চড়াও হয়। প্রাণ বাঁচিয়ে কোনও রকমে বাড়ি নিস্তার মেলেনি। ওরা বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুঠপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়।” তাঁর আরও দাবি, তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সিপিএম তাঁদের পিছনে লেগেছে। আবার তাঁদের যোগদানের ফলে গুরুত্ব হারানো তৃণমূলের একাংশও ওই ওই সব সিপিএম কর্মীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বলে রেজাউলের দাবি।
সিপিএমের লাভপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক পল্টু কোঁড়া বলেন, “রেজাউল এক সময় আমাদের দলের কর্মী ছিলেন ঠিকই। কিন্তু নানা অভিযোগ ওঠায় তাঁকে দল থেকে বের করে দেওয়া হয়। রেজাউল বর্তমানে তৃণমূলের আশ্রয়ে রয়েছেন। তাঁদের ঘরে কারা আগুন লাগিয়েছে বলতে পারব না। তবে রেজাউল ও তাঁর দলবলের অত্যাচারে তিতিবিরক্ত হয়ে দলমত নির্বিশেষে গ্রামবাসীরা এককাট্টা হয়ে গণ-প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন বলে শুনেছি।” লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনের পর অন্য অনেকের মতো রেজাউল-সহ কয়েক জন আমাদের দলে ঢুকেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তাঁদের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।”
জেলা পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা বলেন, “ঘটনাটি শুনেছি। এখনও পর্যন্ত ওই ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে। অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে ওরা জড়িত কি না, তা-ও দেখা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.