বহির্বিভাগে চিকিৎসককে দেখাতে হলে রোগীপ্রতি দিতে হয় ৫ টাকা। তবে তা অবশ্যই সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টার মধ্যে দেখালে। অন্য সময় বহির্বিভাগে দেখানোর জন্য দিতে হয় ১০ টাকা। আর রোগী ভর্তির জন্য দিতে হয় তিরিশ টাকা। চিকিৎসা পরিষেবা বাবদ এই টাকা নেওয়া হলেও অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে মেলে না বিনামূল্যে ওষুধপত্র। দেওয়া হয় না রোগীদের খাবার। দীর্ঘদিন ধরে এমনই অবস্থা চলে আসছে উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে।
হাসপাতালে আসা গরিব রোগীদের অনেকেই এই খরচ দিতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে তাঁদের হাতুড়েদের শরণাপন্ন হতে হয়। তবে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই রোগী ও রোগীদের পরিবারের লোকজনের। বহুদিন ধরেই হাসপাতালে বন্ধ অস্ত্রোপচার। এ নিয়ে রোগীরা সমস্যায় পড়লেও কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই। অন্যান্য পরিষেবাও যে অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, হাসপাতাল এখন শুধু সাইন বোর্ড ছাড়া আর কিছুই নয়। তাঁদের আরও অভিযোগ, জেলা পরিষদের অধীনে হাসপাতালটি হওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এখানকার পরিষেবা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের কোনও গা নেই, ফলে রোগীদের ভাল চিকিৎসা পরিষেবার দায়িতেব কার তা নিয়ে প্রশাসনের দু’পক্ষের দায় এড়ানোর চেষ্টায় ভুগতে হচ্ছে রোগীদের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে চিকিৎসক রয়েছেন ৬ জন। তার মধ্যে ২ জন চুক্তিভিত্তিক। স্বাস্থ্য দফতরের কোনও মেডিক্যাল অফিসার না থাকায় সরকারি বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই হাসপাতাল। হাসপাতাল হলেও কোনও প্যাথোলজিস্ট নেই। নেই আলট্রা সনোগ্রাফি যন্ত্র। শয্যাসংখ্যা মাত্র ৩০। |
যা রোগীদের যে পরিমাণ চাপ থাকে তার তুলনায় খুবই সামান্য। বেহাল পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ বহুবারই হয়েছে এই হাসপাতালে। এমনকী প্রয়োজনের সময় চিকিৎসক না পেয়ে গেটে তালা ঝোলানোর ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। চিকিৎসক না থাকার কারণে গত ৭ নভেম্বর হাসপাতালে ঝামেলা হয়। তার পর থেকেই কর্তৃপক্ষ রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধু বহির্বিভাগই খোলা রয়েছে। কেন এমন অবস্থা? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ৬ জন চিকিৎসকের মধ্যে একজন ছুটিতে আছেন। দু’জন অসুস্থ। ঘটনার আগের রাতে যে চিকিৎসক ছিলেন তিনি পরদিন সাকল ৯টা নাগাদ ডিউটি শেষ হওয়ার পরে চলে যান। তার পর যাঁর আসার কথা ছিল তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে কোনও চিকিৎসক ছিলেন না। কিন্তু এমন অবস্থায় রোগীদের স্বার্থে বিকল্প কোনও ব্যবস্থা কেন ছিল না তার কোনও উত্তর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে মেলেনি।
২০০১ সালে ১৭ জানুয়ারি গ্রামীঁ হাসপাতাল হিসাবে এটি চালু করা হয়। তার আগে এটি ছিল উপসহায়ক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কিন্তু হাসপাতালে উন্নীত হলেও উন্নতি হয়নি স্বাস্থ্য পরিষেবার। রোগীদের অভাব-অভিযোগ শোনার জন্য নেই রোগী কল্যাণ সমিতি। গোবরডাঙা পুরসভার চেয়ারম্যান সুভাষ দত্তর বলেন, “পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও এখানে আসা রোগীরা চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জেলা পরিষদ হাসপাতাল চালাচ্ছে এমন অবস্থা আর কোথাও নেই। হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণ যাতে জেলা পরিষদের হাত থেকে স্বাস্থ্য দফতর নেয় সে ব্যাপারে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কাছে আবেদন জানিয়েছি।”
জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, হা,পাতালে চিকিৎসক কম থাকার জন্য অন্তর্বিভাগ বন্ধ রাখা হয়েছে। চিকিৎসক এলেই তা চালু করা হবে। তবে জেলা প্রশাসনের একাংশের মতে উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায় জেলা পরিষদের পক্ষে হাসপাতাল চালানো সম্ভব নয়।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) ও জেলা পরিষদের অতিরিক্ত নির্বাহী আধিকারিক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “এলাকার মানুষের দাবিমত জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আবেদন জানানো হবে হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণভার তাদের হাতে নেওয়ার জন্য।”
এখন জেলা পরিষদের হাত থেকে স্বাস্থ্য দফতর দায়িত্ব নিলে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতি ঘটবে কি না সেটাই দেখার। |