এবিজি-বিদায়ের পরে কেটে গিয়েছে এক পক্ষকাল। অথচ যে ঘটনার পরে বন্দরে পণ্য খালাসকারী এই সংস্থার হলদিয়া ছেড়ে চলে যাওয়াটা নিশ্চিত হল, সেই এবিজি কর্তাদের অপহরণ-কাণ্ডে গ্রেফতার হয়নি কেউ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাউকে আটকও করা হয়নি। কাজহারা শ্রমিকদের অভিযোগ, শাসক তৃণমূলের চাপেই নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে পুলিশ। পুলিশকর্তারা এ সব নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন শুধু বলেন, “অপহরণের ঘটনার তদন্ত চলছে।”
গত ২৭ অক্টোবর রাতে হলদিয়া টাউনশিপের ‘শঙ্খিনী’ আবাসনের ২বি ফ্ল্যাট থেকে এবিজি’র তিন কর্তাকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে। জগদীশ বেহেরা, মনপ্রীত জলি ও দেড় বছরের শিশুকন্যা-সহ সস্ত্রীক ভূষণ পাতিলকে রাতভর শহরে ঘুরিয়ে মারধর করে হলদিয়া থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান এবিজি’র সিইও গুরপ্রীত মালহি। অভিযোগের তির ছিল তৃণমূলের দিকে। ঘটনার পরে তৃণমূল শিবির ও পুলিশ একযোগে দাবি করে, ওই তিন জন ‘স্বেচ্ছায়’ হলদিয়া ছেড়েছেন। পাশাপাশি রুটিন তদন্ত শুরু করে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। ইতিমধ্যে পুলিশের তদন্তকারী দল তিন এবিজি কর্তার সঙ্গে কথা বলতে বিশাখাপত্তনম গিয়েছিল। হলদিয়ায় আবাসনের বাসিন্দাদের দফায় দফায় জেরা করা হয়েছে।
অথচ তারপরেও কেউ গ্রেফতার বা আটক হয়নি। |
সোমবার শঙ্খিনী আবাসনে গিয়ে দেখা গেল বাসিন্দারা আতঙ্কিত। মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কিছু দিন আগেও দিব্যি কথা বলেছেন ২ বি’র পাশে ২ এ ফ্ল্যাটের বাসিন্দা রথীন্দ্রনাথ গিরি। এ দিন “ব্যস্ত আছি” বলে এড়িয়ে গেলেন। আবাসনের অন্যতম মালিক রামকৃষ্ণ দাস অধিকারীর কথায়, “সে দিন কী হয়েছিল দেখিনি।” আবাসনের সম্পাদক সত্যরঞ্জন মণ্ডলের কথায়, “ওই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। কথা বললে হয়রানি বাড়বে।” কী হয়রানি অবশ্য স্পষ্ট করে বলেননি। আবাসনের নিরাপত্তাকর্মী শুভেন্দু তুঙ্গে শুধু বলেন, “ভয় লাগেই। এই কাজে জড়িতদের গ্রেফতার হওয়া প্রয়োজন।”
এবিজি’র কাজহারা শ্রমিকদের বিক্ষোভও চলছে সমান তালে। কংগ্রেসকে পাশে পাওয়ায় আন্দোলনের তীব্রতা বেড়েছে। ২০ নভেম্বর ‘হলদিয়া চলো’র ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। রবিবার তার প্রস্তুতিতে তমলুকে এসেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। তার পর এ দিন হলদিয়ার মঞ্জুশ্রী মোড়ে কাজহারা শ্রমিকেরা জমায়েত করেন। নেতৃত্বে কংগ্রেসের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কনিষ্ক পণ্ডা। এই শ্রমিকেরাই সুতাহাটায় লাগাতার অবস্থান করছিলেন।
এ দিনের কর্মসূচিতে মাইক ব্যবহারের অনুমতি মেলেনি। হ্যান্ডমাইক নিয়েই পথসভা করা হয়। পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে পথনাটিকাও হয়। পরে কাজে পুনর্বহাল, এবিজি কর্তাদের অপহরণ-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত, তৃণমূলের হুমকি বন্ধে ব্যবস্থা, পুলিশি হয়রানি বন্ধ-সহ ৯ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয় মহকুমাশাসককে। কনিষ্কবাবুর অভিযোগ, “পুলিশ শুভেন্দু অধিকারীর কথায় চলে।” হলদিয়া থেকে এবিজি-বিতাড়ন ও শ্রমিকদের দুরবস্থার জন্যও তৃণমূল সাংসদকেই দায়ী করেন এই কংগ্রেস নেতা। তাঁর কথায়, “সাংসদের বাহিনী গিয়ে এবিজির কর্তাদের তুলে নিয়ে গিয়েছিল। সিবিআই তদন্ত করতে হবে।” শুভেন্দু ফোন ধরেননি। আইএনটিটিইউসি’র জেলা কার্যকরী সভাপতি শিবনাথ সরকার বলেন, “সাংসদকে হেয় করতেই কুৎসা করছে কংগ্রেস।”
|