নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ডের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছিল। সোমবারের মোহালিতে শুধু একটাই প্রশ্ন ছিল-- বাংলা টিকবে কতক্ষণ?
চা-বিরতির একটু আগে বিপর্যয়ের চিত্রনাট্য চূড়ান্ত রূপরেখা পেয়ে গেল। মোহালিতে পঞ্জাবের হাতে এক কথায়, চূর্ণ হল বাংলা। ইনিংস ও ২৭ রানে! যুবি-ভাজ্জি ছাড়াই পঞ্জাব ‘সিংহ’!
লক্ষ্মীরতন শুক্লর মরণপণ যুদ্ধ। ঋদ্ধিমান সাহার (৫৭) আরও একটা হাফসেঞ্চুরি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। লক্ষ্মী কথা দিয়েছিলেন, লড়বেন। লড়েছেন। বাংলা ইনিংসের সর্বোচ্চ অপরাজিত ৯১ তাঁর ব্যাট থেকেই। কিন্তু শেষ বিকেলে বাংলার প্রাক্তন অধিনায়কের গলা বিষণ্ণ শোনায়। ফোনে বলছিলেন, “কী করব? চিরকালই লড়েছি। আজও লড়লাম। নতুন কিছু নয়। কিন্তু লাভ কী হল?” |
কী করবেন লক্ষ্মী? ইনিংস হার আটকাতে যে টিমের ৩৯ রানে পাঁচ উইকেট উড়ে যায়। গিলতে হয় বোনাস পয়েন্ট-সহ (পঞ্জাব এই ম্যাচ থেকে পেল ৭ পয়েন্ট) হার, সেখানে লক্ষ্মী-ঋদ্ধি আর কতটা কী করবেন? পঞ্চাশ পেরোনোর আগে অনুষ্টুপ মজুমদার (১), ঋতম পোড়েল (১), জয়জিৎ বসু (১১) প্যাভিলিয়নে। অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি (৩০) পর্যন্ত পারলেন না। মনপ্রীত গোনি, সিদ্ধার্থ কাউলদের সামনে তখন দিশেহারা দেখাচ্ছে বাংলাকে। দু’শো পেরোল লক্ষ্মী-ঋদ্ধি ছিলেন বলে। নইলে সেটাও হয় না।
কিন্তু কেন এই বিপর্যয়? মোহালির উইকেটকে বাংলা টিমের কেউ দুষছেন না। দুষছেন নিজেদের। টিমের কেউ কেউ ষ্পষ্টই জানালেন, জুনিয়রদের শরীরীভাষা মোটেই সুবিধার ছিল না। নির্বাচকদের কারও আবার অভিমত, দলের ‘নিউক্লিয়াস’-টা তৈরি হয়েছিল মনোজ-ঋদ্ধি-লক্ষ্মী-অনুষ্টুপকে ঘিরে। কিন্তু মনোজের ব্যাটে আচমকা রানের খরা। অনুষ্টুপ ফর্ম হারিয়েছেন। টানছেন শুধু বাকি দুই। কিন্তু তা দিয়ে আর কতটা মেরামত সম্ভব? ওপেনিং জুটি ব্যর্থ। মিডল অর্ডার ভেঙে পড়ছে। অশোক দিন্দার মতো জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়তে থাকা পেসার উইকেট পাচ্ছেন না সবুজ পিচেও। টিমের এই বিপর্যয় দেখে সিএবি-র যুগ্ম-সচিব সুজন মুখোপাধ্যায় পর্যন্ত এ দিন বলে দিলেন, “পঞ্জাবের জিয়ানজোৎকে দেখে শেখা উচিত। জীবনের প্রথম রঞ্জি ম্যাচে আড়াইশো করল। বাংলার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি। ওরা পারলে আমরা কেন পারছি না?”
বাংলা কোচ ডব্লিউ ভি রামনও ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে যা শুনিয়ে রেখেছেন। লজ্জার হারের পর রামন এতটাই বিমর্ষ হয়ে যান যে ক্রিকেটারদের কড়া ভাবে বলে দেন, তোমাদের তো যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তবু পঞ্জাবের নতুনরা যা করে যাচ্ছে, তোমরা সেটার ধারেকাছে যেতে পারছ না। ইডেনে ১৭ নভেম্বর শুরু গুজরাত ম্যাচে টিমে বদলও হচ্ছে। জয়জিৎ বসু বাদ পড়ছেন। তাঁর জায়গায় ঢুকবেন শ্রীবৎস গোস্বামী। অনুষ্টুপকে নিয়েও জটিলতা। তাঁর বদলে দেবব্রত দাসকে খেলানো যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। বাংলার পক্ষে সুখবর বলতে দু’টো। ওপেনার পার্থসারথি ভট্টাচার্য এবং পেসার সামি আহমেদ প্রায় সুস্থ। পার্থ প্র্যাক্টিসও শুরু করে দিয়েছেন। লক্ষ্মী বলছেন, “গুজরাত ম্যাচ থেকে ছ’পয়েন্ট না তুললে মুশকিল আছে।”
ঠিকই। তার পরের কয়েক প্রতিপক্ষ তো মুম্বই, সৌরাষ্ট্র, লক্ষ্মণের হায়দরাবাদ....!
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলা ৩২৬ ও ২২৬ (লক্ষ্মী ৯১ ন:আ:, ঋদ্ধি ৫৭, গোনি ৫-৪১, কাউল ৪-৫৮) পঞ্জাব ৫৭৯-৭ ডি:। |