নিজস্ব সংবাদদাতা • বহরমপুর |
শব্দবাজির আওয়াজ থেকে কালীপুজোকে মুক্ত রাখতে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ প্রশাসন বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পুজোর অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে নিষিদ্ধ শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি বাজি বিক্রেতাদের ধরপাকড়ও চলছে। পুলিশ ও প্রশাসনের ওই কাজে হাত মিলিয়েছে এক শ্রেণির পুজো কমিটিও। শব্দদূষণ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে তারা মাইকে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তেমনি ইভটিজিং রুখতে দুই জেলার পুলিশ প্রশাসন বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
বহরমপুরে ৬৬টি এবং মুর্শিদাবাদে ১৫৩৫টি কালীপুজো হয়ে থাকে। অন্য দিকে ছশোটি কালীপুজোর অনুমতি দেয় নদিয়া জেল পুলিশ। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “ কালীপুজোর অনেক আগে থেকেই নিষিদ্ধ শব্দবাজি রুখতে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে তল্লাশি চলছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার প্যাকেট শব্দবাজি আটক করা হয়েছে। বেআইনি বাজি বিক্রির অভিযোগে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।”
নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “গত ১লা অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত দু’হাজার জন গ্রেফতার হয়েছে। সেই সঙ্গে আটক হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ প্যাকেট বাজি। এছাড়াও খোলা অবস্থায় ৫ কুইন্ট্যাল বাজি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।”
তবে শব্দবাজি রুখতে পুলিশ ও প্রশাসনের আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন বহরমপুরের মানুষ। প্রবীণ নাগরিক বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ ও প্রশাসনের নজরদারি এড়িয়ে প্রতি বছর কালীপুজোয় শব্দবাজি ফাটে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে বলে বিশ্বাস করি না। পুজোয় মিউজিকের নামে যে সাউন্ড বক্স বাজানো হয়, তাতেও আমাদের মত বয়স্কদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে। ওই আওয়াজও কিন্তু শব্দদূষণের মধ্যে পড়ে। কিন্তু কোনও লিখিত অভিযোগ হয় না বলে পুলিশ ও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিতে পারে না।”
বিভিন্ন কালীপুজো আয়োজনের পিছনেই থাকে ‘বড়-বড়’ নাম। ফলে সাহস করে থানায় অভিযোগ জানানো যায় না বলেও অভিযোগ। এদিকে শব্দবাজি ও সাউন্ড বক্সের সাঁড়াসি আক্রমণে প্রবীণ ও অসুস্থ মানুষদের ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে দিতে হয়। এজন্য কোনও কোনও পুজো কমিটি শব্দবাজি ফাটানো বা আতসবাজি প্রদর্শন থেকে নিজেদের বিরত রাখছে। ‘গোরাবাজার স্যান্টাফোকিয়া’ পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক অতীশ সিংহ (কাল্টু) বলেন, “অনেক আগে শব্দবাজি ফাটানো হলেও পরে আতসবাজির প্রদর্শন হয়েছে। গত বছরও এনসিসি ময়দানে আতসবাজির প্রদর্শন দেখতে মানুষ ভিড় করেন। কিন্তু চারদিকে এত শব্দদূষণ এবং ওই শব্দদূষণকে ঘিরে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে আতসবাজির প্রদর্শন বন্ধ থাকছে।” সমবায়িকা মোড়ের কাছে হিন্দ ক্লাব পুজো কমিটি অবশ্য এবার মাইক বাজানোরও বিপক্ষে। ওই পুজো কমিটি পক্ষে শেখর রায় বলেন, “আমরা মাইকের আওয়াজও বন্ধ রাখব।”
অন্য দিকে ব্রজভূষণ ক্লাব পুজো কমিটির পক্ষে চন্দন সরকার বলেন, “বাজি কোনও দিনই ফাটে না। মাইক বন্ধ রাখব কিনা এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি।” ফৌজদারী বাজারের কাছে এমজিওয়াইএস ক্লাব কর্তা সমিত মজুমদার বলেন, “পুজোয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকি আমরা। সেখানে শব্দবাজির কোনও ঠাঁই নেই।” |