গাছ লাগিয়ে গ্রাম বাঁচাচ্ছেন শিবপ্রসাদরা
হাজার খানেক গাছের মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি শিবপ্রসাদবাবু। গ্রামের লোককে বলেন, “চলো গাছ লাগাই।”
কিন্তু বললেই তো হল না। শুরুতে তেমন কেউ সাড়া দেননি ষাটোর্ধ্ব মানুষটির ডাকে। হাল ছাড়েননি পরিবেশকর্মী শিবপ্রসাদ খাঁড়া। ধীরে ধীরে লোক জড়ো করে ফেলেন। এ ভাবেই গত কয়েক মাসে হুগলি জেলার চণ্ডীতলার বরিজহাটি ও গরলগাছা গ্রামের মানুষ হাজার দেড়েক গাছের চারা লাগিয়ে ফেলেছেন। পঞ্চায়েতের তরফেও কয়েকশো চারা লাগানো হয়েছে। গ্রামের লোকই সে সবের দেখভাল করেন। এক গাল হেসে তৃপ্ত শিবপ্রসাদ এখন বলেন, “রবিঠাকুরের কবিতায় যতগুলি গাছের নাম আছে, তার সবই আমাদের এখানে পাবেন।”
কী বলছে বন দফতর?
গ্রামবাসীদের উদ্যোগের তারিফ করেছেন চুঁচুড়ার বনাধিকারিক চিত্তরঞ্জন প্রামাণিক। পাশাপাশি তিনি জানান, গাছ কাটা হলে তা ফের লাগানোর দায়িত্ব বন দফতরের নয়। যে দফতর বা সংস্থা গাছ কাটবে, তাদেরই গাছ লাগানোর কথা। গাছ কেটেছিল পঞ্চায়েত সমিতি। কী বলছে তারা? পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এক হাজার গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। গত অগস্ট মাসে অরণ্য সপ্তাহ উপলক্ষে শ’খানেক চারা লাগানো হয়। বাকিটা পঞ্চায়েতকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
সেই ভরসার অপেক্ষায় অবশ্য বসে নেই শিবপ্রসাদবাবুরা।
চণ্ডীতলার বরিজহাটি থেকে টংতলা পর্যন্ত আগে মোরাম ঢালা রাস্তা ছিল। রাস্তার দু’ধারে ছিল গাছগাছালি। সম্প্রতি ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই রাস্তা পাকা করা হয় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে। রাস্তা তৈরির সময় কাটা পড়ে বহু গাছ। কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, কদম, ইউক্যালিপটাস, আকাশমনি, অর্জুন, কাঞ্চন আরও কত কী।
—নিজস্ব চিত্র।
উন্নয়নের স্বার্থে হলেও এতগুলি গাছের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছিলেন পরিবেশ কর্মী শিবপ্রসাদ খাঁড়া। বললেন, “গাছ তো আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। ওরা আছে বলেই পরিবেশটা বেঁচে থাকার মতো হয়। মনে হল, সরকারি ভরসায় না থেকে গ্রামের লোককে নিয়ে গাছ লাগানোর কাজে নেমে পড়ি।” বাগানটি উৎসর্গ করা হয়েছে গ্রামের প্রখ্যাত চিকিৎসক প্রয়াত সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের নামে। আমলকী, হরিতকী, বয়রা, চালতা, বিশল্যকরণী, হাতিশুঁড়, ঘৃতকুমারী, নিম, অর্জুন, কাঞ্চন, কেশুত, আকন্দ, বাসক, তুলসি-সহ প্রায় ১০০ ধরনের গাছের চারা লাগানো হয়েছে। তুলসি রয়েছে পাঁচ রকমের। রাস্তার উল্টো দিকে শোভা পাচ্ছে বট, অশ্বত্থ, জগডুমুর, পাকুড়, রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া, তাল, তমাল, তেঁতুল, ছাতিম, পেয়ারা, কদম, শাল, শিমূল, সেগুন, আকাশমনি, বকুল, পলাশ-সহ আরও কত কী। রয়েছে আম, জাম, পেয়ারা, কাঠাল-সহ নানা ফলের গাছ।
এত গাছের চারা এল কোথা থেকে? গ্রামের মানুষ জানালেন, রাস্তার দু’ধারে প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ জুড়ে যে চারা লাগানো হয়েছে, তার বেশির ভাগই কেনা হয়েছে নার্সারি থেকে। বিভিন্ন বাগান থেকেও অনেক গাছ জোগাড় করা হয়েছে। গ্রামবাসীরাই গাঁটের কড়ি খরচ করে সব করেছেন। পঞ্চায়েতের তরফে বেড়া দিয়ে ঘেরা হয়েছে জায়গা। কিছু গাছও লাগিয়ে দিয়েছে তারা। পঞ্চায়েত সদস্য প্রদীপ কোলেও পড়শিদের সঙ্গে হাত লাগান বাগান তৈরির কাজে। পেশায় চিত্রশিল্পী নীলমনি মুদি বলেন, “স্কুলপড়ুয়ারা গ্রামে এলে যাতে গাছ চিনতে পারে, সে জন্য সব গাছের গায়ে আমরা নাম লিখে রাখব। গাছের উপকারিতা নিয়ে সবাইকে বোঝাব।” গ্রামবাসীরা জানালেন, রাস্তা তৈরির জন্য গাছ কেটে ফেলায় পাখ-পাখালির ডাক আর শোনা যেত না। চারা যখন ডালপালা মেলে দাঁড়াবে, পাখিও বাসা বাঁধবে ডালে আশায় আছেন গ্রামের মানুষ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.