হুম্ না... হুম্ না রে হুম্ না... সাতসকালে পাথুরিয়াঘাটার ঠাকুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে পাল্কি ছুটল গঙ্গার দিকে। আজ জমিদার গোপীমোহন ঠাকুরের মেয়ের বিয়ে। পাল্কিতে বসে ব্রহ্মময়ী। মুখটা ভারী বিষণ্ণ। বাপ সোহাগি মেয়ে। কালী-মা’কে প্রাণ ভরে ডেকে মেয়ে পেয়েছিলেন গোপীমোহন। কিন্তু, সমাজের নিয়ম। আট বছরের মেয়েকে পাত্রস্থ করছেন গোপীমোহন। ব্রহ্মময়ীর আবদার, গঙ্গায় নাইতে যাবে। শুভ দিনে কন্যার সাধ ফেলতে পারলেন না গোপীমোহন। পাল্কি এল। |
মেয়ে ফিরল না। জলে পাল্কিসুদ্ধ তলিয়ে গেছে ব্রহ্মময়ী খবর শুনে গোপীমোহন জ্ঞান হারালেন। এবং স্বপ্নে দেখলেন মেয়েকে। অভিমানী কন্যা বলল, পরের বাড়ি পাঠাতে চাইলি, তাই চলে এলাম ভাগীরথী কূলে মূলাজোড় গ্রামে।
শ্যামনগরের ব্রহ্মময়ী কালীমন্দিরের গল্প এটাই। সে সময় পাথুরিয়াঘাটা থেকে লোক গিয়েছিল মূলাজোড় গ্রামের সন্ধানে। ভাগীরথীতীরের সে জলাভূমি ছিল সাপ-শিয়ালের রাজত্ব। সেখানেই মিলল কালো কষ্টিপাথরের দক্ষিণা কালীমূর্তি। নীচে শায়িত শ্বেতপাথরের মহাদেব। ১৮০৯-এ বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে গোপীমোহন কন্যার নামে নাম রাখলেন। দেবী পশ্চিমমুখী। ভাগীরথীর দিকে চেয়ে আছেন। তা নিয়ে আর এক গল্প। শোনা যায়, সাধক রামপ্রসাদ নৌকোয় গান গাইতে গাইতে যাচ্ছিলেন। তাঁর গান শুনতেই দেবী পশ্চিম দিকে ফিরে তাকিয়েছিলেন। নবরত্ন মন্দিরটির দক্ষিণ ও বাম পাশে রয়েছে ছয়টি সারিবদ্ধ আটচালার শিব দেউল। পেছনে রাধাকৃষ্ণ দেউল।
গল্প? নিশ্চয়ই। কিন্তু যে মায়া থেকে এই সব গল্প উঠে আসে, তা তো মিথ্যে নয়! কতখানি স্নেহ আর বেদনা হৃদয়ে থাকলে এমন ভয়ঙ্করী কালীমূর্তিকেও ঘরের মেয়ে করে নেওয়া যায়, তাকে দিয়ে বেড়া বাঁধিয়ে নেওয়া যায়, তাই না?
|