সম্পাদকীয় ১...
দুর্নীতি-দুশ্চিন্তা
চিনের কি এক জন অরবিন্দ কেজরিওয়াল দরকার? ভারতীয় রাজনীতিক, শিল্পপতি ও আমলাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে লিপ্ত হওয়ার একের পর রোমহর্ষক অভিযোগ তো কেজরিওয়ালই নিত্য প্রকাশ করিয়া চলিয়াছেন। দুর্নীতিতে চিনের প্রভাবশালী রাজনীতিক ও পার্টি কর্মকর্তারাও কম যান না। অন্তত বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এবং কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতা হু জিনতাওয়ের পার্টি কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণ শুনিলে তেমনটাই মনে হয়। হু-র স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দুর্নীতির এই ব্যাপক প্রসার সমূলে উচ্ছেদ করিতে না পারিলে চিনের কমিউনিস্ট পার্টির শাসন এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাঠামোও ধূলিসাৎ হইয়া যাইবে। ঠিক এতখানি বিপন্নতা ইতিপূর্বে কোনও চিনা নেতার কণ্ঠে শোনা যায় নাই। এই বিপন্নতার নেপথ্যে রহিয়াছে কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত চিনে একের পর এক উচ্চ পদে দুর্নীতির ঘটনা, আর্থিক অনিয়ম ও অপরাধে লিপ্ত হওয়ার দায়ে প্রাদেশিক নেতাদের মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি এবং চিনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সারির উদীয়মান নেতা বো জিলাই ও তাঁহার স্ত্রীর দুর্নীতিগ্রস্ততার নাটকীয় বিচার।
দুর্নীতিতে শাসক দলের নেতা, প্রশাসক-আমলা, সরকারি আধিকারিকদের লিপ্ত হওয়ার প্রবণতাটি কেবল চিনের সমস্যা নয়। বস্তুত ইহাকে তৃতীয় বিশ্বের, বিশেষত এশিয়ার দ্রুত-শিল্পোন্নত দেশগুলির একটি দুরারোগ্য ব্যাধি রূপে শনাক্ত করা যায়। দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ, মালয়শিয়া, তাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি এশীয় ব্যাঘ্রশাবকদের অর্থনৈতিক উত্থানের সমান্তরালেই ওই সব দেশে রাষ্ট্রপ্রধান কিংবা তাঁহাদের আশ্রিত রাজনীতিক-আমলাদের দুর্নীতিতে লিপ্ত হওয়ার অপকাণ্ডগুলিও ঘটিয়াছে। কমিউনিস্ট-শাসিত চিনের মতোই এই দেশগুলিতেও গণতন্ত্রের বিশেষ বালাই থাকে নাই। ফলে দুর্নীতির অবাধ ও মসৃণ প্রসারেও সুবিধা হইয়াছে। কারণ গণতন্ত্রে জনসাধারণের কাছে জবাবদিহির দায় থাকে, একদলীয় স্বৈরাচারে তেমন কোনও দায় থাকে না, যাবতীয় দায় কেবল একনায়কের প্রতি আনুগত্যের। এশীয় শার্দূলরা যে তৎসত্ত্বেও আর্থিক বিকাশের পথ হইতে ভ্রষ্ট হয় নাই, সেটা অবশ্যই কৃতিত্বের। চিনা নেতৃত্ব কিন্তু আর্থিক বিকাশের চমকপ্রদ গতিজাড্য সত্ত্বেও দুর্নীতির বিপদ সম্পর্কে সজাগ থাকিতে চাহেন। তাঁহাদের আশঙ্কা, যেহেতু জনতার কাছে জবাবদিহির দায় নাই, তাই পার্টিকেই জবাবদিহি চাহিতে হইবে, অন্যথায় নিরঙ্কুশ রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ দুর্নীতির পিচ্ছিল পথকেও মেলিয়া ধরিবে, কমিউনিস্ট ভাবাদর্শ ও জীবনবোধ হইতে দল বিচ্যুত হইবে।
ভারতে সংসদীয় গণতন্ত্র ও তাহার যাবতীয় প্রতিষ্ঠান, প্রাপ্তবয়স্কের সর্বজনীন ভোটাধিকার, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা, ব্যক্তির নাগরিক ও মানবিক অধিকার রক্ষার সাংবিধানিক নিশ্চয়তা অনেক বিষয়েই তাহাকে এশীয় স্বৈরাচারগুলির তুলনায় শ্রেয় একটি রাষ্ট্র হিসাবে দৌড় শুরু করার সুবিধা দিয়াছিল। এবং নানা অপূর্ণতা সত্ত্বেও, ভারতীয় গণতন্ত্র প্রায় আগাগোড়া সজাগ ও সতেজ থাকিয়াছে। কিন্তু দুর্নীতির নাগপাশ হইতে ভারতীয় রাজনীতি আপনাকে মুক্ত করিতে পারে নাই। দুর্নীতিকে যখন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী একটি ‘আন্তর্জাতিক প্রবণতা’ বলিয়া বর্ণনা করিয়াছিলেন, তখন সেই স্বীকৃতির মধ্যে এক ধরনের অসহায়তাও ছিল। লোকপাল-লোকায়ুক্তের দাবি কিংবা সেই দাবিতে অণ্ণা হজারে-অরবিন্দ কেজরিওয়ালদের নাগরিক আন্দোলন তখনও দানা বাঁধে নাই। কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত চিনে এ ধরনের নাগরিক আন্দোলনের চিন্তাও অসম্ভব। সরকারি বয়ানের সহিত ভিন্নমত পোষণের অবকাশই সেই স্বৈরতন্ত্রে অনুপস্থিত। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত এবং দুর্নীতিগ্রস্তদের প্রতি পর্যাপ্ত ঘৃণা থাকিলেও তাহার কোনও সংগঠিত প্রকাশ সেখানে হইবার নয়। কমিউনিস্ট পার্টিতে যাহাকে আত্মসমীক্ষা ও শুদ্ধকরণ বলা হয়, স্বতঃপ্রণোদিত সেই সংশোধনই একমাত্র ভরসা। হু জিনতাওরা স্পষ্ট বুঝিতেছেন, নিজে হইতে নিজেকে শোধরাইবার সেই সততা ও নিষ্ঠার ভরসায় থাকা অর্থহীন। তাই রাষ্ট্রনায়করাই চিনের অরবিন্দ কেজরিওয়াল হইয়া দল ও দেশকে সতর্ক করিতেছেন!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.