|
|
|
|
গডকড়ী-কাঁটা থাকছেই |
মোদীকে বিঁধে বিজেপিকে বার্তা সঙ্ঘ-নেতার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
বাবার কথা রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে নস্যাৎ করলেন ছেলে! আর এই কথা চালাচালির হাত ধরেই সঙ্ঘ পরিবার ও বিজেপির মধ্যেকার দ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে এসে পড়ল। যা ধামাচাপা দিতে অতি দ্রুত মাঠে নামতে হল দু’পক্ষকেই।
আরএসএসের প্রবীণ নেতা মাধব গোবিন্দ বৈদ্য এ দিন নিজের ব্লগে সরাসরি নরেন্দ্র মোদীর দিকে আঙুল তুলে বলেন, নিতিন গডকড়ীকে বিজেপি সভাপতির পদ থেকে সরানোর ষড়যন্ত্রের পাণ্ডা গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরেই বিজেপি ও সঙ্ঘে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই
|
সঙ্ঘ নেতা এম জি বৈদ্য |
মাধব গোবিন্দের ছেলে মনমোহন বৈদ্যকে দিয়ে বিবৃতি জারি করে আরএসএস জানিয়ে দিল, সঙ্ঘ এই মতের সঙ্গে একমত নয়। যাঁর পাশে দাঁড়াতে চেয়ে মাধব বৈদ্য ওই বিবৃতি দিয়েছিলেন, সেই গডকড়ীও তড়িঘড়ি বিবৃতি দিয়ে জানান, বৈদ্যের বক্তব্য ভিত্তিহীন। গোটা দল মোদীর পিছনে রয়েছে।
এমনটা হওয়ার কারণ কী? বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, গোটাটাই একটা চিত্রনাট্য। বৈদ্যের মাধ্যমে গডকড়ীর সমর্থনে দাঁড়িয়ে মোদীকে আক্রমণ করে দলকে বার্তা দেওয়া যেমন লক্ষ্য ছিল, তেমনই তার পর সঙ্ঘ ও বিজেপির তা খণ্ডন করাটাও চিত্রনাট্যেরই অঙ্গ। গডকড়ী অনেক আগেই মোহন ভাগবতদের কাছে অভিযোগ করেছেন, দলের কিছু নেতা তাকে সরাতে সক্রিয়। রাম জেঠমলানীর মতো নেতারা মুখ মাত্র। এঁদের পিছনে আরও বড় শক্তি রয়েছে। মাধব বৈদ্য বরাবরই স্পষ্টবক্তা। সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ গডকড়ী যখন বিপন্ন, তখন বিরোধীদের বার্তা দিতে বৈদ্যকেই বেছে নিয়েছেন সঙ্ঘ নেতৃত্ব। আবার বার্তা দেওয়ার পরে অঙ্ক মেনে সেটিকে খণ্ডনও করা হয়েছে। তবে এত কিছুর পরেও গডকড়ী-কাঁটা বিঁধছেই বিজেপিকে।
মরাঠীতে লেখা তাঁর ব্লগ নিয়ে যখন তোলপাড় চলছে, তখনও বৈদ্য বলে চলেছেন, “রাম জেঠমলানী একই সঙ্গে মোদীকে প্রধানমন্ত্রী করতে চাইছেন, আর গডকড়ীর ইস্তফা চাইছেন। ফলে এটা তো স্পষ্ট, গডকড়ীকে সরানোর পিছনে সন্দেহের তির গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর দিকেই যাচ্ছে।” এক ধাপ এগিয়ে তিনি এ-ও বলেন, মহেশ জেঠমলানী যেমন গডকড়ীর অপসারণের দাবিতে কর্মসমিতি ছেড়েছেন, তেমনই রাম জেঠমলানীও ইস্তফা দিন। যশোবন্ত সিংহ, যশবন্ত সিন্হারাও একই পথ নিতে পারেন।
বিজেপির এক নেতার ব্যাখ্যা, দলের কিছু শীর্ষ নেতা চান, গডকড়ীকে হঠিয়ে বিজেপিতে সঙ্ঘের নিয়ন্ত্রণ খর্ব করতে। কিন্তু আরএসএসও সেই রাশ ধরে রাখতে মরিয়া। যে ভাবে সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ গুরুমূর্তির ক্লিনচিটের ভিত্তিতে সুষমা স্বরাজ ও অরুণ জেটলিকে দিয়ে গডকড়ীর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় দুর্নীতির অভিযোগ নস্যাৎ করা হল, তাতেই তাদের চাপ স্পষ্ট। গডকড়ীর বিরুদ্ধে বিজেপির একাংশ যতই সক্রিয় হন, মোহন ভাগবত এখনও তাঁকেই দ্বিতীয় বারের জন্য সভাপতি পদে রাখতে আগ্রহী। আজ বৈদ্যও স্পষ্ট করে দিলেন, গডকড়ীর বিরুদ্ধে যাঁরা মুখ খুলছেন, তাঁরা দল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারেন।
তবে গুজরাত নির্বাচনের ঠিক মুখে মোদীর বিরুদ্ধে এমন প্রকাশ্য আক্রমণে যে হিতে বিপরীত হতে পারে, সেটিও মাথায় রাখছেন সঙ্ঘ নেতৃত্ব। কংগ্রেস ইতিমধ্যেই কটাক্ষ করতে শুরু করেছে, সঙ্ঘ ও বিজেপির গলার কাঁটা হয়ে পড়ছেন মোদী। এই অবস্থায় গুজরাতে বিজেপি তথা মোদীর ফল খারাপ হলে পরোক্ষে তার দায় চাপবে গডকড়ীর উপরেও। তাই মোদীকে বার্তা দিয়েও বৈদ্যের মন্তব্যকে খণ্ডন করতে আসরে নামতে হল সঙ্ঘ ও বিজেপিকে। কিন্তু সঙ্ঘের নাম যাতে জড়িয়ে না পড়ে, তাই সুকৌশলে বৈদ্যের থেকে দূরত্বও বজায় রাখা হল। গডকড়ীও তাঁর বিবৃতিতে মাধব বৈদ্যকে ‘প্রবীণ সাংবাদিক’ বলে উল্লেখ করলেও সঙ্ঘের সঙ্গে তাঁর বহু বছরের সম্পর্কের কথা এড়িয়ে গিয়েছেন। |
|
|
|
|
|