বেশ কয়েক বছর পর যাত্রাপাড়ায় নতুন আশার আলো। পুজোর মরসুমে এ বার সুদিনের আশায় বুক বেঁধেছে চিৎপুর।
যাত্রাশিল্পে হালখাতা হয় ষষ্ঠীর দিনে। বিভিন্ন জেলা থেকে নায়েকদের আনাগোনা বেড়ে যায় চিৎপুরের অলিগলিতে। বিভিন্ন ঘরে মহড়া দেখতে দেখতে পালার বায়না শুরু হয়ে যায়। নায়েকদের বায়নার পরিমাণ দেখেই বোঝা যায়, যাত্রাশিল্প এ বছর ব্যবসা কেমন করবে। সাধারণ ভাবে কোনও পালা যদি কোনও জেলায় তিরিশটির কম বায়না পায়, সেটাকে মন্দা বলে ধরা হয়। যদি সত্তরটি বুকিং হয়, তখন বলা যায় বাজার খুব ভাল। বিশ্বভারতী অপেরা, আনন্দভারতী অপেরার প্রযোজক সমীর সেনের মুখে মহড়া চলাকালীনই যে রকম চওড়া হাসি, তাতে এ বার শুভ সংকেতটা স্পষ্ট।
এ বছরে গ্রামবাংলায় বন্যা হয়নি। জঙ্গলমহলে আতঙ্কের পরিবেশ অনেকটাই কেটে গিয়েছে। ফলে খুশির হাসি পশ্চিমবঙ্গ যাত্রা সম্মেলনের সভাপতি দিলীপ দাসের মুখে। “বহু দিন পরে আমরা প্রাণ খুলে কাজ করার সুযোগ পেলাম। আশা করছি এ বার দারুণ ব্যবসা হবে।” দিলীপবাবুর কথায়, গত কয়েক বছর ধরে মাওবাদী আতঙ্কে বেশ কয়েকটি জেলায় পা রাখতে পারেনি চিৎপুর। এর উপরে ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অথচ চিৎপুরের মোট ব্যবসার অর্ধেকটাই আসত ওই সব জেলা থেকে। গত বছর থেকেই জঙ্গলমহলে আবার যাত্রার আসর বসা শুরু হয়েছে। এ বার বায়নার পরিমাণ আরও বেড়েছে। নাগমাতা অপেরার ‘মাটি মায়ের খাঁটি ছেলে’ কিংবা নিউ লোকনাট্য অপেরার ‘ভাঙা বাসার রাঙা বউ’ এ বার জঙ্গলমহলে আলোড়ন তুলবে বলে আশা করছেন প্রযোজকরা।
বাজার মন্দা যাওয়ায় গত কয়েক বছর লালগড়, শিলদা, বেলপাহাড়ি, ঝাড়গ্রাম, জামবনি প্রভৃতি মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নায়েকরা এ মুখো হননি। আবার বাঁকুড়ার খাতরা, সিমলাপাল, তালডাংড়া, রানিবাঁধ, সারেঙ্গায় হাতে গোনা কয়েকটি দল গিয়েছিল। গত বছর থেকেই অবস্থাটা বদলাতে শুরু করে। আর, এ বার পুজোর অনেক আগে থেকেই যাত্রাপাড়ায় এসে হাজির ওই সব জেলার নায়েকরা। চিৎপুরের এক প্রবীণ শিল্পী উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, “মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া থেকে নায়েকের দল আবার ভিড় জমিয়েছে চিৎপুরে। এমন ছবি কত কাল দেখা যায়নি।” বীরভূমের নিতাই সর্দার, দিনাজপুরের হাবিব মণ্ডল, মেদিনীপুরের রতন বর্মন-এর মতো নায়েকরা ইতিমধ্যেই চিৎপুরে ঘোরাঘুরি শুরু করে দিয়েছেন।
রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ প্রায় এক ডজন ছোট পর্দা ও বড় পর্দার শিল্পী এ বছর নতুন পালায় অভিনয় করছেন। রাজলক্ষ্মী অপেরার অশোক দাশ ‘কুঁড়েঘরের বাদশা’য় নির্বাচন করেছেন যিশু সেনগুপ্ত ও অনুরাধা রায়কে। শুভলক্ষ্মী অপেরা ‘প্রিয়তমা মনে রেখো’ পালায় এনেছে রাহুল ও প্রিয়ঙ্কাকে। এ বছর যাত্রায় আসছেন পদ্মিনী কোলাপুরে। পালার নাম, ‘রূপের রাজা চোরের রানি।’ স্টার জলসা ও বসুন্ধরা অপেরার কর্ণধার ধনঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বললেন, “পদ্মিনীর পালার বুকিং আগেই শেষ।” বেশির ভাগ প্রযোজকই মনে করছেন, এ বার ব্যবসা ভাল হলে পরের বছরে মুম্বই থেকে আরও বিগ বাজেটের নায়ক-নায়িকারা যাত্রায় আসবেন। |