লোবায় গেল পুলিশও
বহিরাগতের উপস্থিতি নিয়ে এডিজির প্রশ্ন
ংঘর্ষের ছ’দিন পরে, সোমবার ফের খাঁকি পোশাকের পুলিশকে এলাকায় ঢুকতে দেখল লোবা। প্রথমে এল স্থানীয় পুলিশ। পরে কলকাতা থেকে গত মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনার তদন্তে যাওয়া পুলিশ-কর্তা। তবে পুলিশকে সমস্যায় ফেলেননি গ্রামবাসী। এ দিন সন্ধ্যায় লোবায় কৃষিজমি রক্ষা কমিটির ধর্নামঞ্চ চত্বরে যাওয়া এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ সেখানে হাজির জনা পনেরো স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানতে চান, পুলিশের উপরে হামলার সময় ঘটনাস্থলে বহিরাগতেরা হাজির ছিল কি না। গ্রামবাসীদের দাবি, তাঁরা ওই পুলিশ-কর্তাকে বলেছেন, ‘বাইরের কেউ ছিল না’। সুরজিৎবাবু অবশ্য বলেন, “তদন্ত চলছে। এখনই কিছু মন্তব্য করা যাবে না।”
খোলামুখ খনির জন্য ডিভিসি-এমটার মাটি কাটার যন্ত্র দীর্ঘ কাল আটকে রয়েছে লোবায়। মঙ্গলবার ওই যন্ত্র ছাড়াতে যাওয়া পুলিশকর্মীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে তেতে উঠেছিল লোবা এলাকা। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, পুলিশের গুলিতে পাঁচ জন এলাকাবাসী জখম হন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছিলেন, ‘পুলিশ গুলি চালায়নি’ এবং ‘গ্রামবাসীদের দিয়ে তির ছোড়ানো হয়েছিল’। আর শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ওই ঘটনায় ‘সিপিএম, কংগ্রেসের একাংশের সঙ্গে অতি-বামপন্থীরাও যুক্ত’ বলে মন্তব্য করে বিতর্ক তৈরি করেন।
এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) এ দিন বিকেলে সিউড়ি হাসপাতালে গিয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন পাঁচ গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। ফিমেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা পূর্ণিমা ডোম বলেন, “ঘটনার দিন কী হয়েছিল উনি জানতে চাইলেন। বললাম, ‘পুলিশ গুলি চালিয়েছিল। পায়ে লাগল’। উনি শুনে বললেন, ‘চিন্তা কোরো না। সব ঠিক হয়ে যাবে’।”
সংঘর্ষের পরে কেটে গিয়েছে ৬ দিন। লোবায় ঢুকল খাঁকি পোশাকের পুলিশ।
সোমবার লোবায় এসেছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি ও এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ।
তাঁদেরই নিরাপত্তা দিতে হাজির পুলিশ। ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।
ঘটনা হল, শ্যামল ঘোষ, উপানন্দ মণ্ডলদের মতো আহত পাঁচ গ্রামবাসীর কাছেই কী ভাবে তাঁরা চোট পেয়েছিলেন তা জানতে চাইলেও, তাঁদের গুলি লেগেছিল কি না সে প্রশ্ন করেননি সুরজিৎবাবু। প্রশ্নোত্তর পর্বের পরে এডিজি চলে যান হাসপাতাল সুপারের ঘরে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মী বলেন, “এডিজি হাসপাতাল সুপারের কাছেও কী ভাবে ওই গ্রামবাসীদের চোট লেগেছে তা জানতে চান। চিকিৎসা ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তারও খোঁজ নেন।” হাসপাতাল সূত্রে দাবি করা হয়েছে, প্রাথমিক পরীক্ষার পরেও আহত পাঁচ জনের ক্ষতস্থানে গুলির কোনও অংশ পাওয়া যায়নি। মেডিক্যাল বোর্ড এখনও পরীক্ষা চালাচ্ছে।
হাসপাতালে যাওয়ার আগে এডিজি সিউড়িতে পুলিশের অতিথিশালায় লোবা-কাণ্ড নিয়ে কথা বলার জন্য আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ, ডিআইজি (বধর্মান রেঞ্জ) বাসব তালুকদার, সংঘর্ষের পরে সরিয়ে দেওয়া বীরভূমের প্রাক্তন পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা এবং সদ্য যোগ দেওয়া পুলিশ সুপার মুরলিধর শর্মাকে ডেকে নেন। মঙ্গলবারের অভিযানে যোগ দেওয়া বিভিন্ন থানার ওসি এবং পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গেও তিনি কথা বলেন। দুবরাজপুরের ওসি অর্ণব গুহর সঙ্গেও পৃথক ভাবে কথা হয় তাঁর। আলোচনা হয় আইজি এবং ডিআইজি-র সঙ্গেও। তবে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে পুলিশের তরফে কেউ মুখ খোলেননি।
মুখে কুলুপ ছিল সেই সব পুলিশকর্মীদেরও, যাঁরা লোবা এলাকায় ঢুকেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সির সভার আগে। বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ দুবরাজপুর থানার এক সাব-ইনস্পেক্টরের নেতৃত্ব খাঁকি পোশাকের এক ভ্যান লাঠিধারী পুলিশকর্মী ধর্নামঞ্চের কাছে যান। দীপাদেবীর বক্তৃতার সময়ে তাঁরা জমির আলে ও রাস্তার ধারে বসে-দাঁড়িয়ে দূর থেকেই জনতার উপরে নজর রাখছিলেন।
দীপার সঙ্গেই ফিরে যায় ওই পুলিশবাহিনী। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ অল্প কিছু পুলিশকর্মী নিয়ে লোবা এলাকায় ধর্নামঞ্চের কাছে পৌঁছন দুবরাজপুর থানার ওসি অর্ণব গুহ। কৃষিজমি রক্ষা কমিটির নেতা ফেলারাম মণ্ডল ও কিছু গ্রামবাসীকে ডেকে কথা বলতে দেখা যায় তাঁকে। তার ঘণ্টা দেড়েক পরে ১০-১২টি গাড়ি ভর্তি সশস্ত্র পুলিশবাহিনী নিয়ে এসে পড়েন এডিজি। লোবা এলাকার বাসিন্দারা বলেছেন, “পুলিশ তো আসবেই। আসুক। আপত্তি কীসের!” তাঁরা জানিয়েছেন, আজ, মঙ্গলবারও এলাকায় পুলিশ আসবে। তবে এ বার স্থানীয় মন্দিরের কালী প্রতিমার অলঙ্কার পাহারা দিয়ে পৌঁছে দিতে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.