বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ পাওয়ার পরেও ব্যবস্থা নিতে গড়িমসির প্রশ্নে শিলিগুড়ির বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ, সম্প্রতি একাধিক এলাকায় বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে পুরসভা ও রেল। তা সত্ত্বেও নির্মাণ চলছে কী ভাবে সেই প্রশ্নেই উদ্বেগ বাড়ছে। শহরের নিবেদিতা মার্কেট এলাকায় রেলের তরফে অবৈধ নির্মাণ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অথচ তার পরোয়া না করে ওই মার্কেটে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের উল্টোদিকে রেলের জমিতে অবৈধ ভাবে ওষুধের দোকানের নির্মাণ কাজ চলছে বলে অভিযোগ। রেলের নিউ জলপাইগুড়ি শাখার ৩ নম্বর ডিভিশনের সহকারি বাস্তুকার অশোক কুমার জানিয়েছেন, অভিযোগ পেয়েই রেলের তরফে লোক পাঠানো হয়েছিল। রেলের অনুমতি ছাড়া ওই জমিতে কোনও রকম নির্মাণ কাজ করা যাবে না বলে তাদের জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, “যে কাজ করা হচ্ছিল তা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তা না মানলে ব্যবস্থা নিতে পুলিশে অভিযোগ জানানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” শিলিগুড়ি থানার পুলিশের দাবি, তাদের কাছে এখনও কোনও অভিযোগ এ ব্যাপারে আসেনি। আগে ৩ টি ওষুধের দোকান থাকলেও মালিকপক্ষ একযোগে আলাদা কোম্পানি গড়ে নতুন দোকান করছেন। মালিকপক্ষের অন্যতম অলক পাল বলেন, “রেলের তরফে মৌখিকভাবে কাজ বন্ধ করতে বলা হয়েছে। তবে এর পর আমরা নিজেদের নথিপত্র দেখিয়েছি। আগেকার ছাড়পত্র রয়েছে।”
অন্য দিকে শিলিগুড়ির সেবক রোড-সহ একাধিক জায়গায় পুজোর ছুটির সময় অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। সেবক রোডের একটি শপিং মলের কাছে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে সপ্তমী পুজোর দিন অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ পেয়ে পুরসভার তরফে লোক পাঠানো হয়। তারা গিয়ে কাজ বন্ধ করেন। পুরসভার দল ফিরে যাওয়ার পর ফের অবৈধ নির্মাণ কাজ হলেও কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে অভিযোগ। বর্ধমান রোড, শেঠ শ্রীলাল মার্কেট এলাকায় একাধিক অবৈধ নির্মাণের ক্ষেত্রে পুরসভার নিষেধ না শুনে কাজ চললেও তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি বলে কংগ্রেস, তৃণমূল কাউন্সিলরদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। চানাপট্টি এলাকায় অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের কাউন্সিলর রুমা নাম একাধিকবার পুরসভার জানিয়েছেন। সে ক্ষেত্রেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। পুজোর ছুটির পর পুরসভা খুললে অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিল্ডিং বিভাগের মেয়র পারিষদ সীমা সাহা।
শহরে অবৈধ নির্মাণ নিয়ে পুরসভায় একাধিকবার স্মারকলিপি দিয়েছেন কাউন্সিলর তথা কংগ্রেস নেতৃত্বের অন্যতম সুজয় ঘটক। এমনকী, শিলিগুড়ির সেবক রোডের হোটেলে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন পুরসভার চেয়ারম্যান নান্টু পাল, সিপিএমের কমল অগ্রবালরা। খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অবৈধ নির্মাণ বন্ধে গড়িমসির প্রশ্নে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বহুবার। তা হলে কেন অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করতে পুরসভা ব্যবস্থা নিতে পারছে না?
এ ব্যাপারে পুরসভার কাউন্সিলর সুজয়বাবু বলেন, “শুধু বিবৃতি দিয়ে দুর্নীতির বিরোধিতা করার রাজনীতি করলে চলবে না। আগেও রাস্তায় নেমেছি। ফের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বলে রাস্তায় নামব।” পুরসভার চেয়ারম্যান নান্টু পাল জানান, বেআইনি নির্মাম বন্ধের ব্যাপারে বারবার পুরসভাকে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, “বহুবার বলেছি। ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আমাদের কী করার আছে!” পুরসভার পূর্ত বিভাগের মেয়র পারিষদ তথা তৃণমূল নেতা কৃষ্ণ পাল জানান, শহরে অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে বারেবারেই সতর্ক করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী।
পুরসভার প্রায় সব নেতারাই বেআইনি নির্মাণ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তা হলে সেই কাজ আটকানো যাচ্ছে না কেন? একশ্রেণির প্রোমোটার, ব্যবসায়ী কী ভাবে ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন, এমন নানা প্রশ্নেই শহরে চলছে বিস্তর জল্পনা। |