স্থানীয় ক্লাবকে কাজে লাগিয়ে লটারির আয়োজন করে কোটি টাকা হাতানোর ছক কষার অভিযোগে দু’জনকে ধরেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে ভক্তিনগর থানার ৩টি ক্লাবে হানা দেন পুলিশ ও শিলিগুড়ি কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মীরা। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম প্রদীপ ওঝা ও কমল সরকার। প্রদীপের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে এবং কমলের বাড়ি মালদহে। তাঁদের এনজেপির ইয়ং স্টার ক্লাব থেকে গ্রেফতার করা হয়। উজ্জ্বল সঙ্ঘ এবং শক্তিগড় সর্বজনীন ক্লাবেও হানা দেয় পুলিশ। সেখানে লটারি বন্ধ করে দেওয়া হয়। টিকিট সহ লটারির কিছু জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ও জি পাল বলেন, “বেআইনি ভাবে লটারির আয়োজন করার অভিযোগে দু’দিন ধরে অভিযান চালানো হচ্ছে। ৩টি ক্লাবের সম্পাদক ও সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।” অভিযোগ, প্রধাননগর থানা লাগায়া একটি ক্লাব, সুভাষপল্লির একটি মহিলা পুজো কমিটি, ফুলেশ্বরী সহ কমিশনারেটের অন্তত ১০ জায়গায় খেলা চলছে। সেখানে পুলিশ কেন হানা দেয়নি তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। গোয়েন্দা দফতর সূত্রে খবর, দুর্গাপুজো উপলক্ষে ১৬ সপ্তাহ ধরে ১৬ হাজার টিকিটের খেলার আয়োজন করে ভক্তিনগরের তিনটি ক্লাব। প্রতি সপ্তাহে একটি খেলা চালিয়ে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। তাতে লটারির টিকিট বিক্রি করে প্রায় ২ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এর মধ্যে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে। শুধু তাই নয়, অভিযোগ উঠেছে, বিক্রি না হওয়া টিকিটগুলি থেকে পুরস্কার ওঠানোর ব্যবস্থাও করা হয় বলে। খেলার নিয়ম অনুযায়ী ১০টি পাত্রে চারটি করে ক্যারাম বোর্ডের ঘুঁটি রাখা হয়। সেগুলিতে বিভিন্ন সংখ্যা লেখা থাকে। উপস্থিত জনতার এক জনকে ডেকে একটি করে পাত্র থেকে একটি করে ঘুঁটি তুলে একটি বড় সংখ্যা মিলিয়ে পুরস্কার দেওয়া হয়। অভিযোগ, এক্ষেত্রে খেলা শুরুর আগে কয়েকটি ঘুঁটি ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে রাখা হয়। জনতার মধ্যে আয়োজক সংগঠনের লোকদের রেখে তাঁদের ডেকে ঠান্ডা গুটি তুলে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাতে বিক্রি না হওয়া টিকিটেই পুরস্কার ওঠে। মালদা ও ক্যানিংয়ের যে দলটি নানা জায়গায় লটারি খেলা চালায় তাঁরা মূলত ওই ছক কষে বলেও অভিযোগ। ইয়ং স্টারের খেলা এ দিন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশি অভিযানের ফলে তা বন্ধ হয়ে যায়। উজ্জ্বল সঙ্ঘে ইতিমধ্যে পঞ্চম সপ্তাহের খেলা শেষ হয়েছে। এদিন ষষ্ঠ সপ্তাহের খেলা থাকলেও তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শক্তিগড় সর্বজনীন ছয় সপ্তাহের খেলা শেষ হয়েছে। উজ্জ্বল সঙ্ঘের এক কর্তা বলেন, “আমরা পরিচ্ছন্ন ভাবে খেলা চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে যে কয়েকটি খেলা হয়েছে সবাইকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।” শক্তিগড় সর্বজনীনের কর্মকর্তা তৃণমূল নেতা কৌশিক দত্ত বলেন, “আমরা নিয়ম মেনেই লটারি খেলার আয়োজন করেছি। সবাইকে জানিয়েছি। সে সময় খেলা বন্ধ করতে বলা হয়নি। পুলিশ সবাইকে ডেকে সতর্ক করতে পারত। ক্লাবগুলির কেউ সমাজবিরোধী নয়, হঠাৎ হানা দেওয়ার আগে সে কথা চিন্তা করা উচিত ছিল। শিলিগুড়িতে ১০টি ক্লাবে খেলা হচ্ছে। সেগুলিতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এটা কি করে সম্ভব? আর সব পুজো কমিটিকে ডেকে পুলিশ আলোচনা করতে পারত, তা না করে অভিযান চালিয়ে মামলা করা হল কেন বুঝছি না।” |