লক্ষ্মীপুজোই যেন ‘শারদোৎসব’
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো যেন মনোহরপুরের শারদোৎসব। ধনদেবীর আরাধনায় ওই গ্রামের ২৪৫টি পরিবারের প্রায় বারোশ জন বাসিন্দা মেতে ওঠেন।
কান্দি শহর থেকে মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরের ওই গ্রামের বেশিরভাগেরই জীবিকা কৃষিকাজ। ঠিক কবে থেকে ধুমধাম করে শুরু হয়েছিল এই লক্ষ্মীপুজো তা মনে করতে পারছেন না কেউই। তবে এলাকার সকলেরই দাবি, প্রায় দু’শো বছরের পুরনো এই পুজো।
আর পাঁচটা পুজোর মতই এই পুজোতেও কমিটি গঠন হলেও, কমিটিতে কোনও সম্পাদক ও সভাপতির পদ থাকে না। গ্রামেরই একজন প্রৌঢ়কে মোড়ল পদে বসানো হয়। তিনিই পুজো বিষয়ক সমস্ত ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। ঠিক করেন পুজো কেমন হবে। চাঁদা হিসেবে কত টাকা ধার্য হবে। পুজো উপলক্ষে কী অনুষ্ঠান হবে। প্রতি বছরের মত এ বারও গ্রামে ঢোকার পর থেকে পুজো মণ্ডপ পর্যন্ত ঝলমলে আলোয় সাজানো হয়েছে। দু’দিন ধরে মধ্যাহ্ন ভোজনের পর আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পর পর দু’রাত গ্রামের বাসিন্দাদের দ্বারা অভিনীত যাত্রাও হবে। গ্রাম বাংলার কবি গানের আসরও বাদ যায় না। এ কথা সে কথার ফাঁকে এ বারের পুজোর এ বারের পুজোর মোড়ল অধীর ঘোষ বলেন, “পুজো উপলক্ষে গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতেই আত্মীয় স্বজনেরা ভিড় করেন। শুধু তাই নয় আশপাশের প্রায় কুড়িটা গ্রামের লোক পুজো দেখতে গ্রামে আসেন। তাই ঠান্ডা মাথায় সব কাজ করতে হয়।”
পুজোতে এলাকার বধূরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন।
সকাল থেকেই তাঁরা কোমর বেধে নেমে পড়েন পুজোর আয়োজনে। কেউ বা আলপনা দিতে, কেউ বা ব্যস্ত নাড়ু , মুড়কি ও ফুলের মালা তৈরিতে। নাড়ু তৈরি করতে করতে গ্রামের মহিলা ঝুনু মণ্ডল বলেন, “আমাদের গ্রামে দুর্গাপুজো হয় না। কিন্তু ওই পুজোর পরেই লক্ষ্মী পুজোর আনন্দে আমরা মেতে উঠি।” সরমা মণ্ডল, রুপালী ভট্টাচার্যের মত বধূরা বলেন, “কৃষি কাজ আমাদের গ্রামের প্রধান জীবিকা। আমাদের গোলায় যাতে সারা বছর শস্যে ভরা থাকে সেই প্রার্থনাই করি দেবীর কাছে।” এক সময়ে গ্রামের প্রায় সকলেই চাষবাস করলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভিন রাজ্যে এখন অনেকেই অন্যান্য কাজও করছেন। তবে সকলেই পুজোর দিন গ্রামে ফেরেন। যেমন প্রাক্তন সেনা কর্মী ও বর্তমানে ওড়িশা পুলিশে কর্মরত বিনয় মণ্ডল বলেন, “১৯ বছর সেনাবাহিনীতে কাজ করার সময় প্রতিবারই লক্ষ্মীপুজোর দিন বাড়িতে এসেছি। তবে ওড়িশা পুলিশে যোগ দেওয়ার পর একবার পুজোর দিন বাড়িতে আসতে পারিনি। পুজোতে গ্রামে না এলে কোথাও একটা অসম্পূর্ণতা থেকে যায়।”
গ্রামের আর এক বাসিন্দা তপন ভট্টাচার্য বলেন, “পুজোকে ঘিরে গ্রামে মেলাও হয়। পোড়ানো হয় প্রচুর আতসবাজি।”
তিনি বলেন, “বহু মানুষের ঢল নামে। প্রত্যেকে হাতে হাত মিলিয়ে মেলার সব কিছু পরিচালনা করেন।” আর মোড়ল অধীরবাবুর কথায়, “গ্রামবাসীরা তো বটেই, ভিন গ্রামের মানুষ ও প্রশাসনও আমাদের ‘শারদোৎসব’ লক্ষ্মীপুজো যথাযথভাবে সম্পূর্ণ করার ব্যাপারে সাহায্য করেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.