স্মৃতির ছড়াই মন্ত্র লক্ষ্মীর আরাধনায়
ন্ত্র নয়, ছড়াতেই দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করতেন ওপার বাংলার ঘরের লক্ষ্মীরা। সেই ছড়াতে তাই তাঁদের রূপই যেন ফুটে উঠত। বৈদিক দেবী লক্ষ্মীর সঙ্গে সেই দেবীর মিল কতটা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, কিন্তু আন্তরিকতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই।
বাবলারির রামচন্দ্রপুরে নিজের ঘরে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন করতে গিয়ে শ্বশুরবাড়ির পুজোর স্মৃতিচারণ করছিলেন প্রভাতী সরকার। তিনি বলেন, “আমাদের পুজো হত লক্ষ্মীর আল্পনা, লক্ষ্মীর ছড়া দিয়ে। সেই আল্পনা দেওয়ার সময় থেকে শুরু হত ছড়া কাটা। আরতির সময়েও ছড়া বলা হত।” তিনি বলেন,
“তেমনই একটি ছড়া হল—উত্তর আইলের চাউল জলেতে ভিজাইয়া
ধুইয়া মুছিয়া কন্যা লইল বাটিয়া
পিটালি করিয়া কন্যা পরথমে আঁকিল
বাপ আর মায়ের চরণ মনে গাঁথা ছিল।”
নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব বলেন,
“এই ধরনের পদ মৈমনসিংহগীতিকায় পাওয়া যায়। পূর্ব বঙ্গে এই পালা খুবই জনপ্রিয় ছিল। বহু পুজোর ক্ষেত্রে বৈদিক মন্ত্রের বদলে এই সব পদ পা পাঁচালি পড়ার রেওয়াজ ছিল।”

নবদ্বীপের রেখারানি সাহা এককালে থাকতেন ফরিদপুরে। তাঁর কথায়,
“আমাদের ওখানে লক্ষ্মীকে বলা হত আড়ি লক্ষ্মী। বেতের ছোট ঝুড়িতে ধান ভর্তি করা হত। তার উপরে দু’টি কাঠের লম্বা সিঁদুর কৌটো লাল চেলি দিয়ে মুড়ে দেবীর রূপ দেওয়া হত। পুজো হত সেই লক্ষ্মী। এখানে এখন অনেকে সেই রকম লক্ষ্মীই পুজো করেন।”
তাতেও ছনা কাটা হত। সেই ছড়ার নমুনা,
“জোড়া টাইল আঁকে কন্যা আর ধান ছড়া
মাঝে মাঝে আঁকে কন্যা গিরলক্ষ্মীর পারা
শিবদুর্গা আঁকে কন্যা কৈলাস ভবন
পদ্মপাত্রের আঁকে কন্যা লক্ষ্মী নারায়ণ।”
তেমনই ছড়া কাটা হয়,
“আঁকিলাম পদ দু’টি
তাই মাগো নিই লুটি
দিবারাত পা দু’টি ধরি
বন্দনা করি
আঁকি মাগো আল্পনা
এই পুজো এই বন্দনা।”

সব ছড়ার মধ্যেই থাকে বাসনা, অভিমান এবং আকাঙ্ক্ষা। পেঁচা, কড়ি, ধানের গোলা আঁকার সঙ্গে সঙ্গে তাই ছড়া কাটা হত, পেঁচা, কড়ি, ধানের গোলা আঁকার সঙ্গে সঙ্গে ছড়া কাটা হত
“আমি আঁকি পিটুলির গোলা
আমার হোক ধানের গোলা
আমি আঁকি পিটুলির বালা
আমার হোক সোনার বালা।”
সেই সঙ্গে থাকে মন শুদ্ধ করার কথাও
“আঁকিলাম আল্পনা
দূরে ফেলি আবর্জনা
শুভ সুদ্ধ মন নিয়ে
করি তব আরাধনা।”

ভাগবত পাঠক এবং শাস্ত্রজ্ঞ গোরাচাঁদ ভট্টাচার্য বলেন, “অনেক আগে প্রধানত বণিকেরা এই পুজো করতেন। তাঁরা জলপথে বাণিজ্য করতেন। ঘোর বর্ষার পরে শরতে বাণিজ্য যাত্রার আগে রাতভোর কোজাগরী পুজো। মন্ত্রে তাই বলা হয়, নিশীথে বরদে লক্ষ্মী কোজাগর্তী মহীতলে। সারা রাত প্রদীপ জ্বেলে ভোগ নিবেদন করে তাঁকে প্রসন্ন করা হত। নিয়ম ছিল, সেই কোজাগরীর রাতে পুজোর প্রসাদ বিতরণ করা হবে না। পরের দিন সকালে তা দেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.