|
|
|
|
শুভেন্দুকে দুষে মিছিল হলদিয়ায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে সরব হল হলদিয়া। যে শ্রমিকদের স্বার্থে এবিজি-র বিরুদ্ধে আন্দোলনকে তিনি সমর্থন করছেন বলে দাবি করছিলেন শুভেন্দু, সেই শ্রমিকদের একাংশই সোমবার তমলুকের তৃণমূল সাংসদকে কাঠগড়ায় তুলে প্রশ্ন করল, ‘এবিজি চলে গেলে সাংসদ আমরা খাব কী।’ সুতাহাটায় প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল করা ওই শ্রমিকরা নিজেদের পরিচয় দিলেন তৃণমূল আইএনটিইউসি-র সদস্য-সমর্থক বলেই।
মিছিলকারীরা কেউ এবিজি-র কর্মী। কেউ এবিজি-র হয়ে কাজ করা ঠিকাদার সংস্থার কর্মী। শনিবার রাতে তিন কর্তার অপহরণের পরে এবিজি যে আর হলদিয়ায় কাজ করবে না, সেটা মোটামুটি বুঝে গিয়েছেন তাঁরা। ভাতে টান পড়তেই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ক্ষোভে পথে নেমেছেন রাজীব মান্না, সূর্য মণ্ডলেরা। তা-ই নয়, নিরাপত্তার অভাবেও ভুগতে শুরু করেছেন এবিজি-র কর্মীরা। অন্য ঠিকানা খুঁজতে শুরু করেছেন অনেকেই।
গত ২২ সেপ্টেম্বর ২৭৫ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করার পরে আন্দোলন শুরু হয় এবিজি-তে। কাজ করতে গিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর ছাঁটাই শ্রমিকদের হাতে মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সংস্থার এক শিপ লিডার ও এক ক্রেন অপারেটর। কাজে বহাল শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাসানিও চলে।
এই অবস্থায় ৯ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রী হলদিয়ায় আসার খবরে এবিজি-র ওই কর্মীরা ভেবেছিলেন এ বার একটা সমাধান সূত্র বের হবে। কিন্তু বন্দরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে সে দিন পরোক্ষে ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের আন্দোলনকেই সমর্থন করে যান, তাতে আশাভঙ্গ হয় তাঁদের। এ দিন মিছিল করা শ্রমিকদের বক্তব্য, বন্দরের পরিস্থিতি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এর পরেও হাইকোর্ট এবং জেলা প্রশাসনের উপরে ভরসা রেখেছিলেন এবিজি-র কর্মীরা। তাঁরা যাতে নিরাপদে কাজ করতে পারেন সে জন্য পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। পুলিশ শিবির বসার পরে শ্রমিকরা আশা করেছিলেন রবিবার থেকে কাজ শুরু করতে পারবেন। কিন্তু শনিবার রাতের অপহরণের ঘটনার পরে তাঁরা ভেঙে পড়েছেন। রাজীব-সূর্যরা বললেন, “বুঝতে পারছি এবিজি আর এখানে কাজ করবে না। আমাদের কী হবে? রাজ্য সরকার আমাদের দেখুক।” এবিজি-র শিপ লিডার সুব্রত মণ্ডল বলেন, “আমাকেও মারধর করা হয়েছিল। সংস্থা হাইকোর্টে যাবে শুনছি। দেখা যাক কী হয়।”
রোজগার যাওয়ার মাথাব্যথার সঙ্গে যোগ হয়েছে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ। এবিজি-র অতি সাধারণ কর্মীদেরও অনেকে ভয়ের চোটে ঘর ছাড়ছেন। শেখ রহমান নামে এক কর্মী এ দিন বলেন, “স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছি। ভাবতেও খারাপ লাগছে আজ যারা বাধা দিচ্ছে, তাদের সঙ্গেই এক সময় কাজ করেছি। আশার আলো নেই। কারণ তৃণমূলের এই চক্রান্তে সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীও জড়িত বলে শুনছি।” শুভেন্দুর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের মিছিল থেকে এ দিনও হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে যে, ছাঁটাই হওয়া ২৭৫ জন শ্রমিককে ফিরিয়ে না নিলে এবিজি-কে কাজ করতে দেওয়া হবে না। আইএনটিটিইউসি সমর্থিত বন্দর ঠিকা-মজদুর শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক উৎপল বেরার কথায়, “২৭৫ জনকে কাজে পুনর্বহালের দাবিতেই আমাদের আন্দোলন। তবে এবিজি চলে গেলে আন্দোলন হবে কি না, তা আলোচনাসাপেক্ষ।” এ দিন সকালে রানিচক মোড় থেকে এই মিছিল বেরোয়। যদিও তাতে এবিজি-র ছাঁটাই শ্রমিকের থেকে (গোলাপি ইউনিফর্ম) তাদের প্রতিযোগী সংস্থার শ্রমিকরাই (নীল ইউনিফর্ম) বেশি ছিলেন। |
|
|
|
|
|