|
|
|
|
অপহরণ নিয়েই প্রশ্ন তুলল পুলিশ |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
এবিজি-র তিন কর্তার অপহরণের ৪০ ঘণ্টা পরেও গ্রেফতার হয়নি কেউ। উল্টে সোমবার সন্ধ্যায় পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন জানিয়ে দিলেন হলদিয়ার পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক। শুধু তা-ই নয়, অপহরণের ঘটনা আদৌ ঘটেছে কিনা, তা নিয়েই কার্যত প্রশ্ন তুলে দিলেন তিনি। পুলিশ সুপার দাবি করলেন, শনিবার রাতে হলদিয়ার আইসি-কে এসএমএস পাঠিয়ে এবিজি কর্তা মনপ্রীত জলি জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা স্বেচ্ছায় হলদিয়া ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। যে বক্তব্যের পিছনে চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছে এবিজি। তাদের প্রশ্ন, শনিবার রাতে ঘটনা ঘটলেও এ কথা বলতে সোমবার রাত পর্যন্ত কেন অপেক্ষা করল পুলিশ।
এবিজি-র পক্ষ থেকে রবিবার হলদিয়া টাউন থানায় লিখিত অভিযোগ করে বলা হয়েছিল, শনিবার মধ্যরাতে তাদের তিন কর্তা এবং এক কর্তার স্ত্রী ও এক বছরের মেয়েকে জনা ৫০ অপরিচিত লোক অপহরণ করে। মুখ ঢাকা ওই দুষ্কৃতীরা তাঁদের মেচেদা স্টেশনে নিয়ে গিয়ে হুমকি দিয়ে বলে, ভবিষ্যতে হলদিয়ায় পা রাখলে ফল ভাল হবে না।
রবিবার সকাল থেকেই হলদিয়ার তৃণমূল কংগ্রেস নেতা এবং আন্দোলনরত তৃণমূল আইএনটিইউসি নেতাদের কেউ কেউ বলতে শুরু করেছিলেন, অপহরণের অভিযোগ আসলে নাটক। এবিজি কর্তারা স্বেচ্ছায় হলদিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন। |
প্রতিবাদে
|
এবিজি বিদায়ে কাজ হারানোর আশঙ্কায় শ্রমিক বিক্ষোভ। সোমবার সুতাহাটায়। —নিজস্ব চিত্র |
সোমবার রাতে জেলার পুলিশ সুপার প্রায় সেই কথারই পুনরাবৃত্তি করলেন। তিনি বলেন, “শনিবার রাত ১ টা ২০ মিনিটে হলদিয়া থানার পুলিশ একটি হোটেলে গিয়ে দেখে, সেখান থেকে এবিজি-র কর্তা মনপ্রীত জলি বেরিয়ে গিয়েছেন। তিনি হলদিয়ার আইসি-কে এসএমএস পাঠিয়ে জানান, তাঁরা স্বেচ্ছায় হলদিয়া ছেড়ে যাচ্ছেন।”
পুলিশ সুপারের আরও দাবি, “যে আবাসন থেকে অপহরণ করা হয়েছে বলা হচ্ছে, সেখান থেকে দু’বার পুলিশের কাছে ফোন এসেছিল। দু’বারই পুলিশ গিয়ে কাউকে পায়নি। এর পরে জলি মাঝ রাতে হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে যান। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ মুম্বই থেকে ফ্যাক্স করে হলদিয়া থানায় অপহরণের অভিযোগ জানানো হয়।”
স্ত্রী ও মেয়ে-সহ যে এবিজি কর্তাকে অপহরণ করা হয়েছিল, সেই ভূষণ পাটিল অবশ্য জানিয়েছেন, “আমার জরুরি বার্তা পেয়েই জলি হোটেল ছেড়ে আমার ফ্ল্যাটে চলে এসেছিলেন। আমাকে যখন বন্দুক দেখিয়ে অপহরণ করা হয়, তখন জলি আমার ফ্ল্যাটেই ছিলেন।”
আর এসএমএস সম্পর্কে এবিজি-র পাল্টা অভিযোগ, আবাসনে হামলা থেকে শুরু করে মেচেদা স্টেশনে পৌঁছনো পর্যন্ত সাহায্য চেয়ে এসপি এবং এসডিপিও-কে বার বার এসএমএস করেছিলেন সংস্থার বিভিন্ন কর্তা। সেই এমএসগুলি সম্পর্কে পুলিশ সুপার নীরব কেন? এবিজি-র এক কর্তা বলেন, “মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে কিংবা মোবাইল কেড়ে নিয়েও তো এসএমএস পাঠানো যায়!”
এবিজি কর্তারা এখনও আশা করছেন, পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবেই তদন্ত করবে। যদিও অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর দু’টো দিন কেটে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তদন্তের কোনও প্রক্রিয়াও চোখে পড়েনি ‘শঙ্খিনী’ আবাসনের নিরাপত্তাকর্মীদের।
হলদিয়ার এসডিপিও অমিতাভ মাইতি অবশ্য বলেন, “এলাকায় গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমি নিজেও গিয়েছি।” আবাসনের এক বাসিন্দার গাড়ির চালক দীপক দাস এবং নিরাপত্তাকর্মী সুরেন্দ্র কুণ্ডু কিন্তু এ দিন বারবার বলেন, “পুলিশ আসেনি।” যে ফ্ল্যাট থেকে অপহরণ হয়েছিল বলে অভিযোগ, তার পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা রথীন্দ্রনাথ গিরিও বলেন, “আমি অন্তত পুলিশকে এখানে দেখিনি। আমরা আতঙ্কিত।”
এ দিকে, অপহৃতদের তাদের সামনে হাজির করানোর জন্য এবিজি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে জেলা পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, ওঁদের মেডিক্যাল টেস্ট করাতে হবে। ঘটনার বিবরণও জানতে হবে। সেই কাজ না হওয়ার ফলেই এখনও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
এবিজি-র ওই তিন কর্তা এখন বিশাখাপত্তনমে। হলদিয়া তো নয়ই, রাজ্যেও আর ফিরতে চান না তাঁরা। এবিজি-র এক কর্তা বলেন, “পুলিশ বিশাখাপত্তনম গিয়ে ওঁদের সঙ্গে কথা বলুক।”
তবে তদন্ত যে পথেই গড়াক, এবিজি যে আর হলদিয়া বন্দরে কাজ করবে না, সেটা একপ্রকার নিশ্চিত। সংস্থার সিইও গুরপ্রীত মালহি এ দিন বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম আবার কাজ শুরু করতে। সেই জন্য পুলিশকে টাকা পর্যন্ত দিয়েছিলাম। কিন্তু যে ঘটনা ঘটল তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। কর্মী-অফিসারদের নিরাপত্তাই এখন সবচেয়ে চিন্তার।”
এবিজি-র কর্ণধার সাকেত অগ্রবাল বলেন, “আমাদের ফরাসি অংশীদার এলডিএ-র সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে পুলিশের উপর আমাদের আর ভরসা নেই। যে অফিসাররা এখনও হলদিয়ায় রয়েছেন তাঁদের নিরাপত্তার জন্য বেসরকারি এজেন্সির সঙ্গে কথা শুরু করেছি। কিন্তু এ ভাবে কত দিন কাজ করা সম্ভব!” এলডিএ-র প্রতিনিধি ফিন সিলবার বলেন,“অনেক আশা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে কাজ করতে গিয়েছিলাম। মোটা লগ্নির পরিকল্পনাও ছিল। এখন অন্য রকম ভাবতে হচ্ছে।” অপহরণের ঘটনা এবং এবিজি-র বিদায় প্রায় নিশ্চিত হওয়ার পরেও বন্দর কর্তৃপক্ষ কিন্তু তাঁদের রুটিন বক্তব্য থেকে সরেননি। বন্দরের চেয়ারম্যান মনীশ জৈন এ দিন বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে এবিজি যাতে কাজ করতে পারে, সে জন্য জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে বলা হয়েছে।” আর জেলাশাসক পারভেজ রহমান সিদ্দিকির বক্তব্য, “এবিজি-র সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওরা যে কোনও সময় কাজ শুরু করতে পারে।” |
|
|
|
|
|