ভারতের মাটিতে পা রাখতেই দুশ্চিন্তার বোঝার ওজন যেন একলাফে অনেকটা বেড়ে গেল ক্যাপ্টেন কুকের। কারণ, ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে দলের মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে মান-অভিমানের পালা। একে কেপি-কে মানানোর কঠিন পরীক্ষা। তার উপর এই নতুন সমস্যা।
অন্য দিকে সোমবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতীয় দলের মধ্যেও লড়াই। তবে সেটা মাঠে, ড্রেসিংরুমে নয়। টেস্টে ছ’নম্বর জায়গাটাকে পাখির চোখ করে এই ম্যাচে নামবেন সুরেশ রায়না ও যুবরাজ সিংহ। শেষ পর্যন্ত কে সেখানে আগে পৌঁছতে পারবেন সেটাই যেন ব্রেবোর্ন ম্যাচের ‘ইউএসপি’।
সোমবার ট্রাইডেন্ট হোটেলের চৌত্রিশ তলায় কাচে ঘেরা বিশাল কনফারেন্স রুমে বসে যখন সাংবাদিক বৈঠকে একের পর এক প্রশ্নবাণ সামালাচ্ছেন অ্যালিস্টার কুক, তখন মাঝেমাঝেই বাইরের দিকে তাকিয়ে গোটা মুম্বই শহরটাকে দেখে নিচ্ছিলেন। কাসভদের কুকাণ্ডে কুখ্যাত হয়ে ওঠা এই পাঁচতারা হোটেলের উপর থেকে মায়ানগরীকে কিন্তু আরও মায়াবি লাগে। আসলে অনেক দিন হল ক্রিকেট দুনিয়াকে এমন ভাবে সবার উপর থেকে দেখেননি তো ইংরেজরা। এই সে দিন দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ক্রিকেট দুনিয়ার এক নম্বর জায়গাটা খোয়ালেন। কেভিন পিটারসেনের ছেলেমানুষিকে পাহাড়ের সমান গুরুত্ব দিতে গিয়ে টেস্টে সেরার সিংহাসনটাই খোয়াতে হল ইংল্যান্ডকে। সেই পিটারসেনকে দল থেকে বাদ দিয়েই খোয়াতে হল টি টোয়েন্টির বিশ্ব খেতাবও। সবার উপরে উঠে বহু দিন নিচের দিকে তাকানো হয়নি কুকদের। তাই বোধহয় বারবার মন চলে যাচ্ছিল কাচের দেওয়ালের দিকে। এ বার তো দলে ফিরেছেন কেপি, মঙ্গলবার থেকে প্রস্তুতি ম্যাচেও খেলবেন। তা সত্ত্বেও ইংরেজ দলনেতার কপালে ভাঁজ।
|
লড়াইয়ে জিতবে কার ব্যাট? প্র্যাক্টিসে রায়না-যুবরাজ। সোমবার মুম্বইয়ে। ছবি: এএফপি |
প্রায়ই ভাবুক, গম্ভীর হয়ে পড়ছিলেন ক্যাপ্টেন কুক, ইংল্যান্ড দলের অনেকেই এখন তাঁকে এই নামেই ডাকছেন। পিটারসেনকে নিয়ে প্রশ্ন এলে তো তা কিপিং পজিশন থেকে ঝাঁপিয়ে প্রথম স্লিপের ক্যাচ ধরার ভঙ্গিতে নিজের দিকে প্রশ্নগুলো টপাটপ নিয়ে নিচ্ছিলেন কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। কেপি-কে নিয়ে নতুন কোনও বিতর্ক চান না তিনি। সেই একই মুখস্থ করা সংলাপ, “ওর সঙ্গে তো আমরা সমানে কথা বলে যাচ্ছি। দলের মধ্যে ওর উপস্থিতিকে যতটা সহজ করা যায়, তার চেষ্টা করছি। এর ফল কী হবে, তা মাঠেই বোঝা যাবে।” আর কুকের মুখ থেকে বারবার একটাই কথা ঠিকরে বেরোচ্ছিল, “ইটস আ হিউজ সিরিজ ফর আস”। এক সাংবাদিক প্রশ্ন না করে পারলেন না, “অ্যাসেজের মতো?” কুক উত্তর দিলেন, “প্রায় সে রকমই। ইতিহাসই তো বলছে সে কথা। ৩০ বছর হল ভারতে কোনও টেস্ট জয় নেই আমাদের। এ বার একটা কিছু না করলেই নয়।” বিরাট কোহলির ‘হুমকি’ প্রসঙ্গ উঠল এবং ইংল্যান্ড দলনেতা একটু ঘাবড়ে যাওয়া গলায় বললেন, “ওরা কেমন উইকেট করবে, কেমন দল গড়বে (কালকের ভারত ‘এ’ দলে একজনও বিশেষজ্ঞ স্পিনার নেই) সে তো ওদের ব্যাপার, আমাদের তো কোনও হাত নেই। আমাদের পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেদের তৈরি করে মাঠে নামতে হবে।” ইংরেজ ক্রিকেটারদের তৈরি করার জন্য ইতিমধ্যেই দলের সঙ্গে দশজন সাপোর্ট স্টাফ এসে পৌঁছেছেন, আরও চার-পাঁচ জন এসে পড়বেন মোতেরায় টেস্টের বল পড়ার আগেই।
একেই এ সব চিন্তা, তার মধ্যে আবার জোনাথন ট্রট বেঁকে বসেছেন, তিন নম্বরে ছাড়া তিনি ব্যাট করতে নামবেন না। তাঁর তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা মানে, হয় পিটারসেনকে কুকের সঙ্গে ওপেন করতে পাঠানো, নয় নিক কম্পটন বা জো রুটের মতো আনকোরা ওপেনারকে অধিনায়কের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া। এই গরমাগরম পরিবেশের চাপ নিয়ে ভারতীয় পেসারদের মোকাবিলা করে সফল হতে পারবেন এঁরা? ফ্লাওয়ার চান ট্রট ওপেন করুন, কেপি নামুন তিনে।
ভারতীয় দলের অবশ্য এত সমস্যা নেই। শুধু ছ’নম্বর জায়গাটার জন্য মারামারি। ব্র্যাবোর্ন স্টেডিয়ামেই ডুয়েলটার মীমাংসা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। সোমবার সকালে অনুশীলনের পর অবশ্য ভারত ‘এ’ দলের নেতা রায়না বললেন, “কী যে বলেন, যুবরাজ আমার রোল মডেল, তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা?”
রায়না যতই লুকোন, সামনের তিন দিন মুম্বইয়ে রায়না বনাম যুবরাজ থাকছেই! |