অভিজিতের দু’হাতেই লক্ষ্মীলাভ ইস্টবেঙ্গলের
ইস্টবেঙ্গল ১ (চিডি)
পুণে এফ সি ০
ভিজিৎ মণ্ডলের দু’টো হাত ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে ছিল জেমস মোগা, জেজেদের। সেই ইচ্ছে অপূর্ণ রেখেই পুণে ফিরে যেতে হচ্ছে তাঁদের। কারণ, যাঁর ‘অবাক হাত’ ধরে হারের ‘দুঃখ’ ভুলতে চেয়েছিল ডেরেক পেরিরার দল, সেই লাল-হলুদ গোলকিপার বাঁ হাতের চোট নিয়ে ততক্ষণে ব্যান্ডেজ বেঁধে ড্রেসিংরুমে বরফ ঘষছেন।
এডে চিডির ডান পায়ের দুর্দান্ত প্লেসিং গোলে ইস্টবেঙ্গলের লক্ষ্মীলাভ। কিন্তু ছিয়ানব্বই মিনিটের ম্যাচ কাঁটাছেড়ার পর দেখা যাচ্ছে, সোমবার দলের আসল ‘লক্ষ্মী’ ছিলেন বালুরঘাটের ছেলে অভিজিৎ-ই। তাঁর সোনার হাতই এ দিন বাঁচিয়ে দিয়ে গেল ইস্টবেঙ্গলকে। এনে দিল তিন পয়েন্ট। ম্যাচের পর ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের মুখ থেকে বেরিয়ে এল চমকপ্রদ মন্তব্য, “ফুটবল মাঠে জিততে হলে লাকটাও দরকার হয়।”
জেজের দু’টো নিশ্চিত গোলের শট, ডুহু পিয়েরের বাঁক খাওয়া ফ্রিকিকঅবিশ্বাস্য দক্ষতায় তিন-তিনটি গোল রুখে দেওয়ার পর গ্যালারির উচ্ছাসে গা ভাসালেন অতনু ভট্টাচার্যও। প্রাক্তন এশিয়ান অলস্টারের গোলকিপার বলছিলেন, “ওর আউটিংটা তেমন ভাল নয়, তবে লাইনে অসাধারণ। ওখানে অভিজিৎকে হারানো খুব কঠিন।”
পঁয়ত্রিশে পা দিয়েও কী অসম্ভব জেদ! কী নিষ্ঠা! পোস্টের নীচে কী রিফ্লেক্স! রসায়নটা কী? সার্ভে পার্কের ফ্ল্যাটে রাতে লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়ে ওঠার পর ডেম্পোকে চার-চারটি আই লিগে জেতানো অভিজিতের মন্তব্য, “ফিটনেস, ফিটনেস। কিপারের ভাল খেলার এটাই মূলমন্ত্র। আমি তো গ্রামে বড় হয়েছি। অ্যাথলেটিক্স, ভলিবল, টেবল টেনিস সব খেলেছি। সেটা এখনও কাজে দিচ্ছে।”
ফের রক্ষাকর্তা অভিজিৎ। জেজের (একেবারে বাঁ দিকে) গোল বাঁচানোর সেই দৃশ্য।
সোমবার যুবভারতীতে। ছবি: উৎপল সরকার।
দেশের এক নম্বর গোলকিপার সুব্রত পাল অবশ্য বলছেন অন্য কথা। “কাসিয়াস, বুফোঁ, কানবিশ্বের সব তারকা গোলকিপারই কিন্তু তিরিশ পেরিয়ে এক নম্বর হয়েছে। কিপারদের বেশি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা সব সময় কাজে দেয়,” যুবভারতীতে খেলা দেখে বেরোনোর সময় বলছিলেন সুব্রত।
বাঁ হাতের যে জায়গায় চোট পেয়ে এ দিন সাতাত্তর মিনিটে বেরিয়ে যেতে হল অভিজিৎকে, সেই জায়গায় এ বার নিয়ে তিন বার চোট পেলেন তিনি। মরসুমের শুরুতে অনুশীলনে পেয়েছিলেন। বাইপাসের মনোবিকাশ কেন্দ্রে নিয়মিত যেতেন সুস্থ হতে। ফিরে এসেই আবার চোট। সামনের ডেম্পো ম্যাচে তিনি গোলের নীচে দাঁড়াবেন কি না সেটা জানা যাবে এমআরআইয়ের পর। তার আগে অবশ্য তিনি প্রশংসা পেয়ে গেলেন পুণে কোচের। “অভিজিৎ-ই আমাদের আজ জিততে দিল না।”
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিনটা নিয়ে যাঁরা সবথেকে বেশি মেতে থাকেন, সেই ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা কিন্তু বেশ ভালই ভিড় জমিয়েছিলেন মর্গ্যানের টিমের ম্যাচ দেখতে। জিতেও তাঁরা আশঙ্কা নিয়ে বাড়ি ফিরলেন তিনটি কারণে।
চাপের মুখে রক্ষণের বেসামাল অবস্থা।
চিডি আটকে গেলে গোল করার লোক নেই।
চতুর্থ বিদেশি না এলে এই দলের ভবিষ্যতে কী হবে?
জয়ী দলের গোলকিপার যদি সেরা হন (অভিজিৎকে না দিয়ে নির্বাচকরা চিডিকে ম্যাচের সেরা বাছলেন কেন কে জানে!), তা হলে খেলাটা কেমন হয়েছে তা বোঝার জন্য কোনও ফুটবল বিশেষজ্ঞের দরকার পড়ে না। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল কিপারের অতিমানব হয়ে ওঠা তো দ্বিতীয়ার্ধে। প্রথম পঁয়তাল্লিশ মিনিট তো মাঠ ছিল মর্গ্যান-ব্রিগেডের দখলেই। আই লিগে যত দেশি কোচ কোচিং করাচ্ছেন তাদের মধ্যে পুণে কোচ ডেরিকের কোচিং ডিগ্রি ঈর্ষা করার মতো। ঠান্ডা মাথার এই গোয়ান অঙ্ক কষেন মেপে। ফলে আশাই করা গিয়েছিল চতুর মর্গ্যান বনাম পুণে কোচের ‘যুদ্ধে’ ট্যকটিক্সের ঝনঝনানি থাকবে। হলও তাই।
পুণে চমক দিল ৩-১-৪-২ দিয়ে শুরু করে। পেনের পিছনে পিছনে চিকা ওয়ালি। চিডির ঘাড়ে জোনাল মার্কার। ইসফাকের দৌড় থামাতে ব্লকার। মোগা-ডুহুদের চিত্রনাট্য কিছুক্ষণ দেখে পাল্টা চাল দিলেন মর্গ্যানও। পেনকে তিনি সরিয়ে নিয়ে গেলেন ওয়াইড উইং-এ। ইসফাককে দৌড়তে বললেন কোনাকুনি। কোচেদের সিঁড়িভাঙ্গা নানা অঙ্কের প্রয়োগের কুফল কি না জানি না, ম্যাচটা কিন্তু কখনও চোখকে সুখ দিল না। সেটা হল একবারই। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি পুণে রক্ষণের ভুলে বল পেয়ে যখন পনেরো ডিগ্রি কোণ থেকেও গোলটা করে গেলেন চিডি। ডান পায়ের আউটস্টেপে, কম্পাস মাপা শটে। পুণে গোলকিপারের বাঁ দিক দিয়ে বল ঢুকল।
পরের অর্ধে মর্গ্যানের জন্য নতুন অঙ্ক দিলেন ডেরেক। বাঁ দিকে জাপানি মিডিও দাইশুককে নামিয়ে। জে লিগের টিম সেরিজো ওসাকা অ্যাকাডেমির ফুটবলারটি নামতেই ইস্টবেঙ্গল সমস্যায় পড়ল। পাল্টা সঞ্জু প্রধানকে নামালেন মর্গ্যান। তবুও সামাল দিতে পারলেন না। পুণে ফর্মেশন বদলে আরও আক্রমণাত্মক হওয়ার পর ইস্টবেঙ্গল অবশ্য দিনের সহজতম সুযোগটা পেয়েছিল। পেন একা পুণে গোলকিপারকে পেয়েও টপকাতে পারলেন না। মর্গ্যান ঠিকই বলেছেন, “সব ম্যাচ সবাই ভাল খেলে জেতে না। আসল হল তিন পয়েন্ট।” ব্রিটিশ কোচের যুক্তি কিন্তু ফেলা যাচ্ছে না।

ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ (গুরপ্রীত), নওবা, ওপারা, অর্ণব, সৌমিক, ইসফাক (সঞ্জু), মেহতাব, পেন, খাবরা, মননদীপ (লালরিন্দিকা), চিডি।

আই লিগে প্রথম পাঁচ

খেলা জয় ড্র হার গোলপার্থক্য পয়েন্ট
ডেম্পো +৭
প্রয়াগ ইউনাইটেড +৫
পৈলান অ্যারোজ +২
ইস্টবেঙ্গল +২
চার্চিল ব্রাদার্স +৬
মোহনবাগান (১০ম) -২




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.