মা তুঝে সালাম। সাগরপারে বিশ্ব বিলিয়ার্ডস চ্যাম্পিয়নশিপে হাড্ডাহাড্ডি লড়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সবার আগে মা-র কথাই মনে পড়ছে পঙ্কজ আডবাণীর।
বাড়িতে মা এবং দাদাই অনুপ্রেরণা। রবিবার ছিল সেই মায়ের জন্মদিন। আর চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠে তাই পঙ্কজ বলছেন, “মায়ের জন্মদিনে বিশ্ব সেরা হওয়ার মজাই আলাদা। এই খেতাব তাঁকেই উৎসর্গ করছি। জন্মদিনে মাকে আমার উপহার।”
মায়ের সঙ্গে সঙ্গে দাদা শ্রী আদবানিও সাতাশ বছরের পঙ্কজের জীবনে একটা বড় ভূমিকা নিয়েছেন। পেশায় ক্রীড়া-মনোবিজ্ঞানী শ্রী ফাইনালে মাইক রাসেলের বিরুদ্ধে নামার আগে মনোসংযোগ ধরে রাখার যে টিপস ফোনে ভাইকে দিয়েছিলেন, তা অক্ষরে অক্ষরে মেনেই কিস্তিমাত পঙ্কজের। সাত নম্বর বিশ্ব খেতাব জয়ের পর এ দিন তা গোপনও করেননি পঙ্কজ। বললেন, “মাইক চেনা প্রতিদ্বন্দ্বী। দাদাও সেটা জানত। ফাইনালের আগে ফোনে ওর ভোকাল টনিকটা কাজে লেগেছে।”
পাঁচ ঘণ্টার টানটান উত্তেজনার ফাইনালে পঙ্কজের লড়াইটা মোটেও সহজ ছিল না। প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডের মাইক রাসেল দশ বারের বিশ্বসেরা। গতবারও এই প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন। শুরুর দিকে এগিয়ে গেলেও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ম্যাচের মাঝ পথে পঙ্কজকে পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন রাসেল। কিন্তু ফাইনালের দ্বিতীয়ার্ধে দুরন্ত পারফর্ম করে শেষ পর্যন্ত তাঁকে ১৮৯৫-১২১৬ ফলে হারিয়ে শেষ হাসি হাসেন পঙ্কজই।
এ বারের প্রতিযোগিতায় নামার আগে দোলাচলে ছিলেন বিলিয়ার্ডসে এশিয়ান গেমস স্বর্ণপদক জয়ী প্রথম ভারতীয় পঙ্কজ। কারণ, লিডসে যে দিন তিনি বিলিয়ার্ডসে আবার বিশ্বজয়ীর মুকুট পরলেন ঠিক সে দিনই চিনের চেংদুতে শুরু হয়েছে পেশাদার স্নুকারের আর্ন্তজাতিক চ্যাম্পিয়নশিপ। দুই খেলাতেই যোগ্যতা অর্জনকারী পঙ্কজ শেষ পর্যন্ত লিডসে আসার সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন। এ দিন সে কথাও গোপন করেননি তিনি। বলেন, “চেংদু না গিয়ে একটা বাজি লড়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত তাতে জিতলাম। কারণ, হৃদয় ঝুঁকেছিল বিলিয়ার্ডসের দিকেই।” ফাইনালের লড়াই নিয়ে পঙ্কজ বলেন, “আমাদের দু’জনের মধ্যে একটা সুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক দিন ধরেই চলে আসছে।”
১০ বছর বয়সে জাতীয় স্নুকার চ্যাম্পিয়ন অরবিন্দ সাবুরের কাছে হাতেখড়ি পঙ্কজের। ২০০০ এবং ২০০১ পর পর দু’বছর জাতীয় জুনিয়র বিলিয়ার্ডস চ্যাম্পিয়ন। দু’বছর পরে জুনিয়র জাতীয় স্নুকার চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বছরেই নিজেকে পেশাদার ঘোষণা করেছিলেন। ২০০৫ সালে বিলিয়ার্ডসে প্রথম বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন খেতাব স্পর্শ করা। তিনিই বিশ্বের একমাত্র খেলোয়াড় যিনি বিশ্ব পেশাদার বিলিয়ার্ডস খেতাব জয়ের বছরেই আন্তর্জাতিক পেশাদার স্নুকার চ্যাম্পিয়নশিপেও সমান ভাবে সফল হয়েছিলেন।
পঙ্কজের পাশাপাশি বিলিয়ার্ডসে আর এক উজ্জ্বল ভারতীয় মুখ আমদাবাদের রূপেশ। পয়েন্ট ফরম্যাটে যিনি ফাইনালে ৬-২ ফলাফলে হারিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু বোল্টনকে। সাফল্যের দিনে সেই রূপেশকেও ভোলেননি পঙ্কজ। তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বেঙ্গালুরুর ছেলের সাফ কথা, “টাইম এবং পয়েন্ট দুই বিভাগেই আমাদের দেশ বিশ্ব সেরা। রূপেশের জন্য গর্ব আরও বেড়ে গিয়েছে।” |