মগজাস্ত্রের জোরেই
ফের বিশ্বজয় পঙ্কজের
নিবার ভরদুপুর। ঘুমে চোখের পাতা জুড়িয়ে এসেছে। ঠিক তখনই মোবাইলটা বেজে উঠল। দেখলাম, বিদেশের নম্বর। ও পার থেকে কাঁপা কাঁপা গলায় একটা ছেলে বলে উঠল, ‘দাদা কেমন আছেন? খুব ব্যস্ত?’ তখনও বুঝতে পারিনি পঙ্কজ আডবাণীর ফোন। ‘চিনতে পারছেন? আমি পঙ্কজ।’
এখন...পঙ্কজ...কী ব্যাপার? কোনও সমস্যা-টমস্যা হল না তো! ‘দাদা আমার জ্বর এসেছে। কালকেই বিলিয়ার্ডস বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল। খুব ক্লান্ত লাগছে, পারব তো?’ বললাম, আত্মবিশ্বাস রাখ, তুমিই জিতবে। আর দেখুন তো, ছেলেটা ইতিহাস গড়ে ফেলল! বিলিয়ার্ডসে একাধিক ফরম্যাটে সাতটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ খেতাব জয়ের মতো অসাধ্য কাজ করে দেখিয়ে দিল।
যে কোনও খেলারই পেশাদার জগতটা খুব কঠিন। সেখানে এক জন অন্য জনকে ছিঁড়ে খাওয়ার জন্য তৈরি থাকে। বিলিয়ার্ডসও আলাদা নয়। অ্যামেচারের সঙ্গে তফাতটা কেমন বলুন তো? অনেকটা বক্সিংয়ে বিজেন্দ্র সিংহ আর মাইক টাইসনের মতো তফাত। বিলিয়ার্ডের পেশাদার জগতেও অনেক টাইসন বিচরণ করেন। সেখানে সাতটি বিশ্ব খেতাব জয় মুখের কথা নয়!
টানা তিন মাস পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে ইংল্যান্ডে পড়ে ছিল পঙ্কজ। দিন নেই রাত নেই, ধ্যানজ্ঞান ছিল শুধু বিলিয়ার্ডস বোর্ড। ধৈর্য, মনঃসংযোগ এবং জন্মগত প্রতিভা লাগে পেশাদার হতে গেলে। পঙ্কজের যে তিনটেই আছে, তা লিডসে আবার বোঝা গেল। ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি খেলোয়াড় মাইক রাসেলকে হারানোর পর। তার আগে অবশ্য একে একে আরও মহারথীর পতন ঘটিয়েছে ও। এবং এ সবই করে ফেলল যখন ওর বয়স মোটে ২৭ বছর!
কোথায় রাখা উচিত পঙ্কজের এই সাফল্যকে? আমি বলব, আন্তর্জাতিক স্তরে সাফল্য পাওয়ার নিরিখে প্রকাশ পাডুকোন, পি টি ঊষা কিংবা সাইনা নেহওয়ালের উপরে থাকবে পঙ্কজ। অনেকেই প্রশ্ন করবেন, কেন? আমার জবাব খুব স্পষ্ট। এত অল্প বয়সে এত বড় সাফল্য পাওয়া সহজ নয়। তা ছাড়া ধারাবাহিকতাটাও দেখুন। তা-ও আবার পেশাদার বিলিয়ার্ডসে।
পঙ্কজ আডবাণী
অনেকেই স্নুকারের সঙ্গে বিলিয়ার্ডসের তফাতটা বোঝেন না। দু’টি খেলা একই মুদ্রার ভিন্ন পীঠ। দু’টিই একই টেবিলে অনেকটা একই রকমের বল দিয়ে খেলা হয়। তফাতটা খেলার পদ্ধতিতে। স্নুকার খেলা হয় ১৫টি লাল এবং ৬টি অন্য রঙের বলে। যেখানে নিখুঁত লক্ষ্যই সাফল্যের চাবিকাঠি। বিলিয়ার্ডস কিন্তু অনেক কঠিন খেলা। এখানে তিনটি বলের উপরে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখাটাই মূল কথা। এর একটি স্ট্রাইকার (কিউ) এবং দু’টি বাধা (অবজেক্ট) বল। তার একটির রং আবার লাল। এখানে নিখুঁত লক্ষ্য তো বটেই, তার সঙ্গে লাগে প্রতি মুহূর্তে স্ট্র্যাটেজি বদলের ক্ষমতা আর মগজাস্ত্র। মনে রাখতে হবে, বিলিয়ার্ডস সূক্ষ্ম টাচের খেলা। যে টাচটা রাখতে পারে অন্য সব কিছুর সঙ্গে, সে-ই চ্যাম্পিয়ন। যেমন পঙ্কজ।
ভাবলেই গর্ব বোধ হচ্ছে যে পঙ্কজ আমার ছাত্র। বিশ্ব বিলিয়ার্ডস খেতাব জেতার পরেই ট্রফিটা নিজের মা-কে উৎসর্গ করেছে পঙ্কজ। মানুষ পঙ্কজের ছবিটা এখান থেকেই ফুটে ওঠে। ও যত বড় খেলোয়াড়, তার চেয়ে বড় মাপের মানুষ। ট্রফি জেতার পর এখন প্রচারের আলোয় গা ভাসানো, ফেসবুক-টুইটারে ছবির পর ছবি পোস্ট করা কিংবা মশলা-মাখানো সাক্ষাৎকার দেওয়া অতি-সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পঙ্কজ এখানেই আলাদা। জয়ের পরেই খেলার সিডি নিয়ে বসে পড়ে। কোথায় ভুলভ্রান্তি হল, তার সন্ধান করতে। খেলাটার প্রতি ওর নিষ্ঠা সত্যিই দেখার মতো।
ছ’বছর আগের একটা ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে। ২০০৬ দোহা এশিয়ান গেমসে সোনা জেতার আগে ২০০৫ সালে বিলিয়ার্ডসে প্রথম বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় পঙ্কজ। কিন্তু দোহায় যাওয়ার আগে ওর মনে একটা খচখচানি হচ্ছিল। আমার এখনও মনে আছে, টানা চার দিন ওর সঙ্গে আমি বিলিয়ার্ডস প্র্যাক্টিস করেছিলাম। ‘পুল ব্যাক শট’ নিতে ওর একটু অসুবিধা হচ্ছিল। কিন্তু সেটা দেখিয়ে দেওয়ার পরে পঙ্কজ তার থেকে আরও দশটা অস্ত্র তৈরি করে নিল। সেটাই ওর সাফল্যের চাবিকাঠি।

(লেখক অ্যামেচার বিলিয়ার্ডসে প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন)




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.