আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ও মারধর করে দুষ্কৃতীরা লুঠপাট চালানোয় আসতে ভয় পাচ্ছেন শ্রমিকেরা। তাই ব্যাহত হচ্ছে নির্মীয়মাণ কারখানার কাজ। কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েও ফল হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার ঝাঁঝড়া গ্রামে এই কারখানা গড়া উচিত কি না, সে নিয়েই তাঁরা এখন চিন্তিত বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। পুলিশ অবশ্য জানায়, অভিযোগ পাওয়ার পরেই তদন্ত শুরু হয়েছে।
লাউদোহা পঞ্চায়েত এলাকার ঝাঁঝড়ায় একটি আয়রন ফাউন্ড্রি কারখানার নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে প্রায় আট মাস আগে। বর্তমানে নির্মাণকাজ চলছে পুরোদমে। কারখানার ম্যানেজার (কমার্সিয়াল) দীপঙ্কর বাগ পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, ২২ অক্টোবর গভীর রাতে ৪০-৫০ জনের সশস্ত্র দুষ্কৃতীদল ঢুকে পড়ে নির্মীয়মাণ কারখানা চত্বরে। সঙ্গে ছিল ৪০ মেট্রিক টন বহন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ডাম্পার। ওই দুষ্কৃতীরা ভিতরে থাকা শ্রমিকদের মারধর শুরু করে। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তাঁদের কারখানা চত্বরে পড়ে থাকা ইস্পাতের নানা সামগ্রী, কেব্ল, প্লেট, নাট-বল্টু ডাম্পারে তুলে দিতে বাধ্য করে। যাওয়ার আগে শ্রমিকদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও নগদ টাকাও কেড়ে নেয়। এর পরে তাঁদের ঘরের ভিতরে আটকে রেখে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।
খবর পেয়ে সকালে কারখানায় যান আধিকারিকরা। কী কী খোওয়া গিয়েছে, তার তালিকা তৈরি করে দুপুরে অভিযোগ দায়ের করা হয় ফরিদপুর (লাউদোহা) থানায়। কারখানা কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানান, বহু লক্ষ টাকার সামগ্রী চুরি গিয়েছে। তা ছাড়া ছিনতাই হয়েছে শ্রমিকদের মোবাইল ও নগদ টাকা। দীপঙ্করবাবু সোমবার বলেন, “ঘটনার পরে এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। ফলে শ্রমিকেরা ভয়ে কারখানায় কাজ করতে যাচ্ছেন না।”
সেই রাতের কথা ভাবতে গিয়ে এখনও তাঁরা শিউরে উঠছেন বলে জানান কারখানার শ্রমিক সুনীল কুমার, বিনোদ কুমার, মনোজ নায়ক, কৃষ্ণ কুমারেরা। তাঁদের কথায়, “কী ভাবে যে ওই এক ঘণ্টা কেটেছে, আমরাই জানি। মনে হচ্ছিল সময় যেন এগোচ্ছেই না। লুঠপাট শেষ করে যাওয়ার আগে আমাদের একটি ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয় দুষ্কৃতীরা। তাদের নজর এড়িয়ে বাইরে থেকে যাওয়া কয়েক জন পরে দরজা খুলে দেয়।”
এক সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরেও পুলিশ ঘটনার কোনও কিনারা করতে না পারায় তাঁরা চিন্তিত বলে দাবি কারখানা কর্তৃপক্ষের। এক আধিকারিকের বক্তব্য, “থানা থেকে কিলোমিটার খানেক দূরে কারখানা। তা ছাড়া লাগোয়া রাস্তা দিয়ে রাতে পুলিশের গাড়ি টহল দেয়। তার পরেও কী ভাবে এমন ঘটল, তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।” কারখানার আর এক আধিকারিকের প্রশ্ন, “আইন-শৃঙ্খলার এমন পরিস্থিতি থাকলে শিল্পদ্যোগীরা ভরসা পাবেন কী ভাবে?” কারখানার ম্যানেজার (কমার্সিয়াল) দীপঙ্করবাবুর দাবি, “পুলিশি নিষ্ক্রিয়তাই আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। কী ভাবে শ্রমিকদের আতঙ্ক কাটানো যাবে, জানি না!”
পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, অভিযোগ পাওয়ার পরেই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সেই রাতে কারখানায় থাকা কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য পাওয়া হচ্ছে। কারখানার ভিতরের কেউ দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দ্রুত দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করা হবে বলে আশ্বাস আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদবের। |