‘নিষিদ্ধ’ সিপিআই (মাওবাদী) বা তাদের শাখা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত লোকজনকে গ্রেফতার করা হলে তাঁরা যাতে ‘রাজনৈতিক বন্দি’-র মর্যাদা না পান, সে জন্য রাজ্য চলতি কারা আইন সংশোধন করার কথা ভাবছে।
বেঙ্কটেশ্বর রেড্ডি ওরফে তেলুগু দীপক, গৌর চক্রবর্তী, সুখশান্তি বাস্কে, ছত্রধর মাহাতো, প্রসূন চট্টোপাধ্যায়-সহ ধৃত সাত মাওবাদী নেতা এবং পুলিশের কাছে মাওবাদীদের ‘অনুগামী’ বলে পরিচিতদের সম্প্রতি ‘রাজনৈতিক বন্দি’-র মর্যাদা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্য সরকারের ওই সিদ্ধান্ত বলে প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে।
‘রাজনৈতিক বন্দি’র মর্যাদাপ্রাপ্ত কয়েদিকে জেলে লোহার খাট, তোশক, বালিশ, মশারি, কম্বল, চেয়ার, টেবিল, ভাল সাবান, টুথপেস্ট, টুথব্রাশ, বৈদ্যুতিক পাখা, টেবল ল্যাম্প, বই, পত্রপত্রিকা, লেখার কাগজ প্রভৃতি দেওয়ার কথা।
এ প্রসঙ্গে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের বক্তব্য: ১৯৯২ সালের পশ্চিমবঙ্গ সংশোধনাগার আইন মোতাবেক ‘রাজনৈতিক বন্দি’র মর্যাদা কারা পাবেন, তা বলা আছে ‘ব্যাপক’ অর্থে। কোনও ‘রাজনৈতিক’ বা ‘গণতান্ত্রিক’ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার অভিযোগে কাউকে ধরা হলে তাঁকেই ‘রাজনৈতিক বন্দি’-র মর্যাদা দেওয়ার সংস্থান রয়েছে মূল আইনে।
কিন্তু, আইনের সেই সংস্থানের সুবাদে কেন্দ্রীয় সরকারের নিষিদ্ধ ঘোষিত সিপিআই (মাওবাদী)-র তাবড় কিছু নেতা কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ‘রাজনৈতিক বন্দি’-র মর্যাদার অধিকারী হয়ে যাওয়ায় শুধু মহাকরণের কর্তারাই নন, নড়েচড়ে বসেছে দিল্লিও। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে ইতিমধ্যেই হাইকোর্টের ওই রায়ের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে বিশদে জানতে চাওয়া হয়েছে। কারণ, ওই সাত জনের মধ্যে ‘বেআইনি কার্যকলাপ নিরোধক আইন’ বা ইউএপিএ-তে গ্রেফতার হওয়া নেতারাও আছেন। রাজ্যের কারামন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী জানিয়েছেন, হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট নির্দেশ তিনি তাঁর দফতরকে বিশদে পর্যালোচনা করে দেখতে বলেছেন। মন্ত্রীর ওই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র, কারা ও আইন দফতর এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে আলাপ-আলোচনাও শুরু করেছে।
রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র জানান, ১৯৯২-র সংশোধনাগার আইনের সংশোধন করে এ বার স্পষ্ট বলে দেওয়া হবে, ‘রাজনৈতিক বন্দি’র মর্যাদা কারা পাবেন না। পুরনো আইনে ‘রাজনৈতিক বন্দি’ সংক্রান্ত যে ধারা রয়েছে, তার সংশোধন করা হবে এমনভাবে, যাতে ‘নিষিদ্ধ’ কোনও রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের নেতা ও সদস্যেরা আর ‘রাজনৈতিক বন্দি’র মর্যাদা না পান। নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরও যদি অন্য কোনও সংগঠনের নামে ফের একই ধরনের কার্যকলাপ শুরু হয়, তা হলে সেই সব সংগঠনের মাথারাও যাতে ‘রাজনৈতিক বন্দি’র মর্যাদা না পান, সংশোধিত আইনে সেই সংস্থান রাখার কথাও ভাবা হচ্ছে।
সরকারি সূত্রে আরও বলা হয়েছে, চলতি কারা আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে নিষিদ্ধ দল বা সংগঠন ছাড়াও ‘রাজনৈতিক বন্দি’র মর্যাদা কারা পাবেন না, সে ব্যাপারে আরও কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। দেশের সংবিধানে বিশ্বাস করে না, জাতীয় বা রাজ্য স্তরে নির্বাচন কমিশনের দ্বারা স্বীকৃত রাজনৈতিক দল নয় এবং নির্বাচনে সামিল হয় নাএমন দল বা সংগঠনের নেতা ও অনুগামীরাও যাতে ‘রাজনৈতিক বন্দি’র মর্যাদা না পান, প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সেই সব শর্ত জোড়া নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে বিচারবিবেচনা চলছে। |