|
|
|
|
মোহিন্দর-অপসারণ ভারতীয় ক্রিকেটের লজ্জা |
|
এর পর ধোনির বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ
করার সাহস কেউ পাবে না
অশোক মলহোত্র |
|
মোহিন্দর অমরনাথকে নিয়ে যা হল, তাকে প্রহসন না বলে থাকতে পারছি না। আমি তো ভাবতেই পারছি না, মোহিন্দরের মতো এত বড় মাপের ক্রিকেটারের সঙ্গে এ রকম ব্যবহার করতে পারে বোর্ড! পরিষ্কার বলছি, যে ভাবে, যে যুক্তিতে ওকে নির্বাচক কমিটি থেকে ছেঁটে ফেলা হল সেটা শুধু ক্রিকেটের লজ্জা নয়। একই সঙ্গে নিজেদের সিদ্ধান্তে কিন্তু মুখ পুড়ল ভারতীয় বোর্ডেরও।
কী ভাবে ব্যাখ্যা করব বোর্ডের এই ন্যক্কারজনক সিদ্ধান্তকে? দেখুন, গত বছর যখন নির্বাচক কমিটির প্যানেলে মোহিন্দরকে নিয়ে আসা হয়, তখন সবাই জানত শ্রীকান্তের মেয়াদ শেষ হলে ও-ই নির্বাচক প্রধান হবে। ’৮৩-র বিশ্বজয়ী টিমের সদস্য। সেমিফাইনাল, ফাইনাল দু’টোতেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ। নির্বাচক প্রধান হিসেবে ওর চেয়ে যোগ্য আর কে ছিল? কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, মুখে এক আর মনে এক এমন মানুষ মোহিন্দর নয়। ওর মাথায় যা চলে, মুখেও সেটাই বলে। মোহিন্দরের অপরাধ, বিদেশে ০-৮ হারের লজ্জার পর নির্বাচক কমিটির বৈঠকে বলে ফেলা, অনেক হয়েছে এ বার ধোনিকে সরাও। অধিনায়ক হিসেবে নিয়ে আসো সহবাগকে। যা মোটেই পছন্দ হয়নি শ্রীনিবাসনদের। হবে কী ভাবে? এই বোর্ড তো শুধু ‘ইয়েস ম্যান’-দের চায়। মোহিন্দরের মতো ঠোঁটকাটা লোকের সেখানে জায়গা আছে নাকি? অতএব, সহজ রাস্তা হচ্ছে মোহিন্দরকে সরিয়ে দাও। নইলে লোকটা বোর্ডের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে ফের বিদ্রোহ ঘোষণা করবে। নিয়ে আসো এমন কিছু লোককে যারা কি না বোর্ডের কথায় উঠবে-বসবে। আর সেটাই হয়েছে। নতুন যে নির্বাচক কমিটি তৈরি হয়েছে, তাদের যোগ্যতা নিয়ে আমি একটা কথাও বলব না। সন্দীপ পাটিল, রজার বিনি, সাবা করিম নির্বাচক হিসেবে যোগ্য। কিন্তু এরা কেউ বোর্ডের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কোনও দিন পাবে না। |
|
পাওয়ার কথাও নয়। মোহিন্দরের মাপের লোকেরই যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে বাকিদের কিছু বলার জায়গা কোথায়? আমার কাছে এই কমিটি সিলেকশন কমিটি নয়। ইলেকশন কমিটি। যারা বোর্ডের কাছে কিছু পাওয়ার আশা করেছিল। আরও একটা জিনিস বুঝে পাচ্ছি না। মোহিন্দর একটা নির্বাচনী বৈঠকে ধোনিকে সরানোর কথা বলেছে। তাতে ভুলটা কী ছিল? নির্বাচনী বৈঠক তো হয়ই বিভিন্ন মতামত দেওয়ার জন্য। গল্প করার জন্য তো নয়। সেখানে করা কিছু মন্তব্যের ভিত্তিতে কী ভাবে ওর মতো একটা ব্যক্তিত্বকে ছেঁটে ফেলা হতে পারে? আমি যদি নিজের মনের কথাটাই নির্বাচনী বৈঠকে বলতে না পারলাম, তা হলে ওখানে যাওয়ার আর দরকার কী?
আর মোহিন্দর-কাণ্ডের মাধ্যমে আরও একটা বার্তা খুব পরিষ্কার হয়ে গেল। এর পর যা-ই হোক, যে ক’টা সিরিজই হারুক না কেন, ২০১৫ পর্যন্ত মহেন্দ্র সিংহ ধোনিই অধিনায়ক থাকছে। ওর বিরুদ্ধে কেউ টুঁ শব্দ করার আর সাহস পাবে না। করলেই তো গর্দান যাবে! তার চেয়ে বোর্ডের কথামতো চললে, কোনও ঝামেলা নেই। বছরে চল্লিশ লক্ষ টাকাও পাওয়া যাবে। খারাপ কী? মোহিন্দর চলে যাওয়ায় আমি বলব ভালই হয়েছে। ও এই কমিটিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারত না। আর আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, মোহিন্দর ভুল কিছু করেনি। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে নিজের মতামত প্রকাশের অধিকার সবার আছে। এখন একটাই ব্যাপার শুধু দেখতে চাই। গণতন্ত্রের দেশে এই ‘ডিক্টেটরশিপ’ কত দিন চলে?
|
অমরনাথ বোল্ড ভারতীয় বোর্ড |
|
সিনিয়র |
• ১৯৩৪: ফেব্রুয়ারি মাসে জীবনের তৃতীয় টেস্ট খেলার পর এক বছর বসে থাকতে হয় লালা অমরনাথকে। কারণ, তিনি ভারতীয় বোর্ডে রাজপরিবারের প্রভাবের বিরুদ্ধে সরব হন।
• ১৯৩৬: ইংল্যান্ড সফরে অধিনায়ক ভিজি (ভিজিয়ানাগ্রামের মহারাজ)-র সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন লালা অমরনাথ। ভিজি শুধু অধিনায়কই ছিলেন না, ছিলেন টিম স্পনসরও। বোর্ডে তাঁর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। ফলে লালাকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। |
জুনিয়র |
• ১৯৮৭: ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে চণ্ডীগড়ে দল নির্বাচনী বৈঠকে
|
মোহিন্দর ও বেঙ্গসরকর দু’জনকেই ডেকে পাঠিয়েছিল বোর্ড। কিন্তু পরে তৎকালীন
বোর্ড প্রেসিডেন্ট রণবীর সিংহ মহেন্দ্র সাংবাদিকদের বলে দেন, মোহিন্দরকে ডাকা হয়নি। ক্রুদ্ধ মোহিন্দর নিজেকে দিল্লি টেস্ট থেকে সরিয়ে নেন। এর এক বছরের মধ্যে ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়ে যান জুনিয়র অমরনাথ।
• ১৯৮৯: ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে বাদ পড়ে রাজ সিংহ দুঙ্গারপুরের নির্বাচক কমিটিকে ‘এক দল জোকার’ বলেছিলেন মোহিন্দর। এও বলেন, ‘হয় আমার মুখ বা আমার পদবীটা নির্বাচক-বোর্ডকর্তাদের পছন্দ নয়’।
• ২০১২: মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে চেয়ে বোর্ডের বিরাগভাজন হন মোহিন্দর। যার জেরে নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল তাঁকে। |
|
|
|
|
|
|