|
|
|
|
পঞ্চায়েত অফিস ঘেরাও গোঘাটে |
পুকুর সংস্কারের কাজ করে চার মাসেও মেলেনি মজুরি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গোঘাট |
প্রথম দফায় ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে বার্ষিক কর্ম পরিকল্পনায় একটি পুকুর সংস্কারের কাজ অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন গোঘাটের কুমুড়শা পঞ্চায়েতের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের কয়েকশো চাষি। প্রায় চার মাস আগে কাজ শেষ হয়ে গেলেও পঞ্চায়েতের গাফিলতিতেই তাঁরা এখনও মজুরি পাননি বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। সেই বকেয়ার দাবিতে বুধবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত পঞ্চায়েত অফিস ঘেরাও করেন তাঁরা। যুগ্ম বিডিও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে এলে তিনিও ঘেরাও-বিক্ষোভের মুখে পড়েন। পরে আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম রায়ের হস্তক্ষেপে রাত ৯টা নাগাদ ঘেরাও ওঠে।
মহকুমাশাসক বলেন, “সমস্ত ব্যাপারটা খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে দু’এক দিনের মধ্যে আলোচনা করা হবে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ১০ দিনের মধ্যে শ্রমিকেরা যাতে মজুরি পান, সে বিষয়ে চেষ্টা করছি।” কুমুড়শা পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক ঈশা খাঁ বলেন, “প্রথম দফায় ওই কাজের জন্য ব্লক প্রশাসন মৌখিক ভাবে অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন বিডিও বদলি হয়ে যাওয়ায় অনুমোদন প্রক্রিয়ায় দেরি হয়ে যায়।“ একই সঙ্গে অবশ্য তিনি এ কথাও স্বীকার করেছেন, “জেলা প্রশাসন জুন মাসেই অনুমোদন দিয়ে দিলেও তা আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। অগস্টে বিষয়টি জানতে পারি। এ সবের জন্যই শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া যায়নি। এখন দ্রুত শ্রমিকদের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। টাকা পেতে শ্রমিকদের অসুবিধা হবে না।”
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মার্চ মাসের শেষ দিকে গোঘাট-১ ব্লকের ওই গ্রামে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে উজলশীল নামে পুকুরটি সংস্কারের কাজ শুরু হয়। কিন্তু দিন কয়েক পরেই কাজের অনুমোদন মেলেনি, এ কথা জানিয়ে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে নির্মাণ সহায়ক কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন বলে জানান সুপারভাইজার বিশ্বজিৎ মণ্ডল, শিশির দে-রা। কিন্তু শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে ফের ১৮ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু হয়। টানা কাজ চলে দেড় মাস ধরে। সেই কাজের টাকাই পাননি শ্রমিকেরা। সব মিলিয়ে বকেয়া রয়েছে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে কোনও কাজ করতে হলে পঞ্চায়েতের সংশ্লিষ্ট সংসদ গ্রামোন্নয়ন সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে তা আগাম বার্ষিক কর্ম পরিকল্পনায় বাজেট-সহ প্রস্তাব আকারে তৈরি করে। পঞ্চায়েত সেই প্রস্তাব ব্লকের প্রকল্প আধিকারিকের কাছে পাঠায়। প্রকল্প আধিকারিক সেটি অনুমোদন করে ১৫ দিনের মধ্যে জেলা প্রকল্প আধিকারিকের দফতরে পাঠান। এর পরেই মেলে চূড়ান্ত অনুমোদন।
কিন্তু বেশি শ্রমদিবস সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বহু ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে জেলা প্রশাসনের চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে কাজ শুরু করে দেওয়া হয়।
জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে ওই পুকুর সংস্কারের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে বলে অভিমত গ্রামবাসীদের। মজুরি না পাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে বাবলু মাইতি এবং সুভাষ মাইতি বলেন, “আমাদের এক-এক জনের ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি পাওনা রয়েছে। দিনমজুরি করে সংসার চলে। কাজ করার ১৫ দিনের মধ্যে টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু চার মাস পেরিয়ে গেল। বারবার টাকার জন্য পঞ্চায়েতে গিয়েছি। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি। পুজোর মুখে হাতে টাকা নেই। কী ভাবে সংসার চালাব আর কী ভাবেই বা ছেলেমেয়েদের জামাকাপড় কিনে দেব?” |
|
|
|
|
|