নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বাকসাড়ার চৈতালি সাঁতরাকে পাঠানো পার্সেলটি সম্ভবত কোনও ক্যুরিয়ার সংস্থার মাধ্যমে আসেনি। বরং ক্যুরিয়ারের লোক সাজিয়ে কাউকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ এমনটাই মনে করছে। পুলিশ জেনেছে, চৈতালিদেবীর হাতে পার্সেলটি তুলে দেওয়ার পরে বছর তিরিশের এক যুবক খালি হাতে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তাঁর হাতে আর কোনও পার্সেল বা ব্যাগ ছিল না, যা না-থাকাটা ক্যুরিয়ারের লোকের পক্ষে প্রায় অসম্ভব বলেই দাবি তদন্তকারীদের।
রাজ্যে দ্বিতীয় পার্সেল বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ আরও জেনেছে, পার্সেল বোমাটি পাঠানো হয় শুধুমাত্র চৈতালিদেবীকে খুনের জন্য। খুনি বা খুনিদের লক্ষ্য চৈতালিদেবীর স্বামী বা তাঁর মেয়ে ছিলেন না। তদন্তকারীদের অনুমান, খুনি বা খুনিরা জানত ওই সময়ে চৈতালিদেবীর মেয়ে শতাব্দী বাড়িতে থাকেন না, কলেজে যান। স্বামী হিমাংশুবাবুও কেটারিংয়ের কাজে বাইরে ব্যস্ত থাকেন। তবে নেহাতই ঘটনাচক্রে ওই দিন বাড়িতে উপস্থিত থাকায় আহত হন তিনি।
কিন্তু কেন ‘টার্গেট’ হলেন চৈতালিদেবী? |
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, চৈতালিদেবীর বাড়িতে প্রায়শই বাইরের অনেক লোকজন আসতেন। তাঁদের কেউ এই ঘটনায় যুক্ত কি না খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে এই খুনের পিছনে তাঁর সাংবাদিকতার কাজকে দায়ী করতে রাজি নন তদন্তকারীরা। কারণ পুলিশ জেনেছে, দিল্লির একটি হিন্দি কাগজে মাঝেমধ্যে চৈতালিদেবীর লেখা বেরোত। এ জন্য যে তিনি খুন হতে হতে পারেন, এমন কোনও প্রমাণ মেলেনি।
বাড়িতে যে প্রচুর বহিরাগতের ভিড় লেগে থাকত, বৃহস্পতিবার সে কথা স্বীকার করেন চৈতালিদেবীর মেয়ে শতাব্দী। তিনি বলেন, “অনেক অচেনা লোকজন বাড়িতে মায়ের কাছে আসতেন। কয়েক জন পুলিশ অফিসারও আসতেন। আসলে মা সকলের সঙ্গে খুব ভাল মিশতে পারতেন।”
বুধবারের এই ঘটনার পরে বৃহস্পতিবারেও দক্ষিণ বাকসাড়ায় আতঙ্কের পরিবেশ কাটেনি। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় উদ্বিগ্ন মুখের জটলা। এ দিনও সিআইডি ও হাওড়া সিটি পুলিশ যৌথ ভাবে তদন্ত করে। দুপুরে ঘটনাস্থলে আসেন সেন্ট্রাল ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি ও স্টেট ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির ১০ জন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। পরে আসেন হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে ঘটনাস্থলে থেকে পরীক্ষা চালান ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। নানা নমুনা সংগ্রহ ও ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের ভিডিও ফোটোগ্রাফি করেন।
পরে স্টেট ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির বিশেষজ্ঞ জিতেন্দ্রনাথ পাল বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে কয়েকটি ব্যাটারি, স্টিলের যে কৌটোয় বিস্ফোরক ছিল তার অজস্র টুকরো, মোবাইল, সিমকার্ড-সহ আরও কিছু জিনিস পরীক্ষার জন্য উদ্ধার করেছি। তবে ঠিক কী জাতীয় বিস্ফোরক ব্যবহার হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” যদিও ঘটনাস্থলে কোনও স্প্লিন্টার না মেলায় ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন বিস্ফোরণে খুব উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রাসায়নিক ব্যবহার হয়েছে।
কিন্তু কারা বানাতে পারে এই জাতীয় বিস্ফোরক? সিআইডি-র ধারণা, বিস্ফোরক তৈরিতে সিদ্ধহস্ত কোনও দল বা গোষ্ঠীর সাহায্য নিয়েই ওই পার্সেল বোমা বানানো হয়। তবে কে বা কারা চৈতালিদেবীকে এ ভাবে খুনের পরিকল্পনা করে, ঘটনার এক দিন পরেও তা তদন্তকারীদের কাছে স্পষ্ট হয়নি। |