সদ্যোজাত কন্যার নাড়িও কাটা হয়নি। তাকেই ঝোপের মধ্যে ফেলে গিয়েছিল কেউ। মাঝরাতে তার কান্নাও কানে যায়নি কারও। শেষমেশ একটি কুকুর তাকে দেখতে পেয়ে পাগলের মতো চিৎকার শুরু করায় ছুটে আসেন কর্তব্যরত গ্রিন পুলিশকর্মী। ততক্ষণে ছুঁচোর দল কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলেছে সেই শিশুর ডানহাতের আঙুল। ছোট্ট শরীরটার বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত।
বুধবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে সল্টলেকের সিএ ব্লকে, একটি বাড়ির পাশে। শিশুটিকে বিধাননগর হাসপাতালে নেওয়া হলে তার অবস্থা দেখে আঁতকে ওঠেন হাসপাতালের কর্মীরাও। পুলিশ জানায়, ওই বাড়িতে এক প্রবীণ দম্পতি থাকেন। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ায় তাঁরা কিছু টেরই পাননি বলে জানিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, ঝোপে শিশুটিকে দেখে এলাকার একটি কুকুরই এসে ছুঁচোগুলিকে তাড়ায়। তার পরে ক্রমাগত চিৎকার করতে থাকে। সেই চিৎকার কানে যায় কর্তব্যরত দুই গ্রিন পুলিশকর্মীর। তাঁদেরই এক জন ছুটে এসে শিশুটিকে দেখে কুকুরটিকে সরিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। |
ক্ষতবিক্ষত সেই শিশু। —নিজস্ব চিত্র |
রাতেই শিশুটিকে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, শিশুটির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতচিহ্ন ছিল। এক কর্মী জানান, শিশুটির শরীরে হাত দেওয়া যাচ্ছিল না, যন্ত্রণায় পাগলের মতো চিৎকার করছিল সে। অবস্থা গুরুতর বুঝে বাচ্চাটিকে এনআরএস হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বৃহস্পতিবার এন আর এসের সুপার স্বপন সাঁতরা বলেন, “শিশুটি ভর্তি আছে এখানে। যে অবস্থায় আনা হয়েছিল, তার থেকে উন্নতি হয়েছে। বেশ কিছু আঘাত রয়েছে তার শরীরে। কাল ওর অবস্থার একটা সঠিক আন্দাজ দেওয়া যাবে।’’
ওই দুই গ্রিন পুলিশকর্মী, গৌরাঙ্গ গঙ্গোপাধ্যায় এবং শুভঙ্কর দাস পুলিশকে জানান, তাঁরা বুধবার রাতে সি এ ব্লকে ডিউটি দিচ্ছিলেন। তখনই ক্রমাগত কুকুরের আওয়াজ কানে আসে। ঘটনাস্থলের কাছে যেতে কানে আসে বেড়ালছানার কান্নার মতো শব্দ। টর্চ জ্বেলে ঝোপের মধ্যে লাল-কালো কাপড়ে মোড়া ওই সদ্যোজাতকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় দেখতে পান তাঁরা।
এই নিয়ে গত দেড় মাসে তিনটি সদ্যোজাত শিশু উদ্ধারের ঘটনা ঘটল বিধাননগর ও সংলগ্ন এলাকায়। প্রথমে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের কাছ থেকে একটি শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছিল। বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে বেশ কিছু দিন চিকিৎসার পরে শিশুটিকে একটি সরকারি চিকিৎসালয়ে রাখা হয়েছে। তার পরে গত সপ্তাহে কেষ্টপুর খালের কাছে একটি ভ্যাটের মধ্যে এক সদ্যোজাতকে পাওয়া যায়। সেই শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি। যদিও তার কাপড়ে থাকা ট্যাগে মায়ের নাম লেখা ছিল। কিন্তু পুলিশ আজও তাঁর খোঁজ পায়নি।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মাতৃসদন বা হাসপাতালগুলিতে নজরদারি নেই। পাশাপাশি তাঁদের দাবি, এ সব ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নিক প্রশাসন। |