কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল তারক দাসকে অবশেষে গ্রেফতার করা হল। সাংবাদিক নিগ্রহ থেকে শুরু করে বহু অভিযোগের তির তার দিকে। বুধবার রাতে গুন্ডাদমন শাখার অফিসারেরা তাকে ধরেন বাঘাযতীন এলাকা থেকে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারির বন্ধের আগে কর্মস্থল মেটিয়াবুরুজ থানা থেকে ছুটি নিয়েছিল তারক। বন্ধের দিন তার নেতৃত্বে পার্টি অফিস ভাঙচুরের ছবি যাতে না তোলা হয়, তাই দলবল নিয়ে চিত্র-সাংবাদিকদের মারধর করার অভিযোগ ওঠে। ঘটনার পরে বেপাত্তা হয়ে যায় সে। চাকরি থেকেও সাসপেন্ড হতে হয় তাকে।
সাসপেন্ড হওয়া অবস্থাতেই অবশ্য ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল তারক। এ সময়ে পাটুলি থানা এলাকার বাসিন্দা, প্রদীপ ঘোষ নামে এক ব্যবসায়ীকে খুনের চেষ্টার মামলাও রুজু হয় তার বিরুদ্ধে। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মিললেও তারককে ‘খুঁজে পাননি’ লালবাজারের অফিসারেরা। উল্টে তারক পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে আলিপুর আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছিল। তার পরেই সংবাদমাধ্যমের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশ-প্রশাসন।
পুলিশ সূত্রের খবর, রাজ্য প্রশাসনের উপরওয়ালাদের নির্দেশে তারকের আগাম জামিনের বিরোধিতায় হাইকোর্টে আবেদন জানায় কলকাতা পুলিশ। বৃহস্পতিবার যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “সেই আবেদনের শুনানি এখনও হয়নি।”
পুলিশ সূত্রের খবর, এর পরেও এলাকায় বেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল তারক। দলীয় কর্মীদের তারকের সংশ্রব থেকে দূরে থাকতে বলে ফরমান জারি করেন দক্ষিণ কলকাতার এক বিধায়ক এবং রাজ্যের এক দাপুটে মন্ত্রী। দলেরই অন্য একটি অংশ অবশ্য তলায়-তলায় তারকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল।
চলতি মাসেই বাঘা যতীনে সিটুর পার্টি অফিসে দলবল নিয়ে চড়াও হওয়ার অভিযোগ ওঠে তারকের বিরুদ্ধে। বিষয়টি তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের কানে পৌঁছলে উল্টো ফল হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, উপরওয়ালাদের চাপে এ বার তারককে গ্রেফতার করতে স্থানীয় থানার পাশাপাশি লালবাজারের গুন্ডাদমন শাখার অফিসারদেরও নামানো হয়।
পুলিশের একাংশের বক্তব্য, তারকের গ্রেফতারের পিছনে স্থানীয় রাজনীতির অঙ্কও কাজ করেছে। পাটুলি এলাকায় প্রোমোটিং ব্যবসার দখল নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লড়াই আছে। তবে রাজ্যের এক নেতার মদতপুষ্ট হওয়ায় তারকের বিরোধী গোষ্ঠীর পাল্লাই ভারী ছিল। ওই মন্ত্রীকে প্রায়শই উত্তম সাহা নামে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে যেতেও দেখা যেত। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয়ের যাওয়া-আসা ছিল উত্তমের বাড়িতে। দিন কয়েক আগেই কয়েক লক্ষের জাল নোট-সহ ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসায়ী উত্তম হয়।
পুলিশের একাংশ মনে করছে, স্থানীয় রাজনীতিতে গোষ্ঠী-লড়াই সামাল দিতেই তারককে গ্রেফতারের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল।
বুধবার রাতে বাঘাযতীন তালপুকুর এলাকায় গিয়েছিল সে। ‘সোর্স’ মারফৎ খবর পেয়ে সেখানে ওঁত পেতেছিলেন গুন্ডাদমন শাখার অফিসারেরা। বিপদের আঁচ পেয়ে পালানোর চেষ্টা করলেও পার পায়নি সে। এ দিন তাঁকে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। ১ অক্টোবর পর্যন্ত তাকে পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
|
কী কী অভিযোগ
• সাংবাদিকদের মারধর ও পার্টি অফিস ভাঙচুর।
• ইমারতি দ্রব্য সরবরাহকে কেন্দ্র করে এক ব্যবসায়ীকে মারধর।
• পার্টি অফিস দখলকে কেন্দ্র করে সিপিএম সমর্থকদের বাড়িতে হামলা ও মারধর।
• এ ছাড়াও মারধর-হুমকির সাতটি মামলা। |
|