একটি সরকারি অতিথি নিবাসের পরিচালনাকে ঘিরে সামনে এল বীরভূম জেলা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
তিন বছরেও কোনও লভ্যাংশ না দেওয়ায় বোলপুরের ওই অতিথি নিবাসের পরিচালনার দায়িত্ব স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হাত থেকে সরিয়ে নতুন সংস্থাকে দিতে চাইছে শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদ (এসএসডিএ)। বৃহস্পতিবার যার ‘ওপেন টেন্ডার’ জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। কিন্তু, দলেরই সাংসদ তথা ওই পর্ষদের চেয়ারপার্সন শতাব্দী রায়ের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় ময়দানে নেমে পড়েছে জেলা তৃণমূলেরই একটি অংশ। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের পতাকা হাতেই এসএসডিএ-র দফতরে বিক্ষোভে সামিল হন ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর লোকজন। ছিলেন তৃণমূলের অনেক কর্মী-সমর্থকও। নেতৃত্বে ছিলেন জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, যিনি দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। |
এসএসডিএ-র সূত্রের খবর, রাজ্য পর্যটন দফতরের সহায়তায় প্রায় ২ কোটি টাকা খরচ করে ২০০৯ সালের জুলাইয়ে বোলপুরের বল্লভপুরডাঙায় ‘মহর্ষি নিবাস’ নামে ওই অতিথি নিবাসটি চালু হয়। বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লক মহিলা মহাসঙ্ঘ নামে স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে এই অতিথি নিবাস পরিচালনার ভার দেওয়া হয়। পর্ষদের এগজিকিউটিভ অফিসার মৃদুল হালদারের অভিযোগ, “নিয়ম অনুযায়ী পরিচালনা খরচ বাদ দিয়ে প্রকল্পের লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ এসএসডিএ-র পাওয়ার কথা। কিন্তু বারবার চিঠি দিলেও তারা পর্ষদকে কোনও টাকা দেয়নি। ওই গোষ্ঠী অতিথি নিবাসের প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজও করেনি। সব মিলিয়ে প্রকল্পের স্বার্থে বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত।” লভ্যাংশ বাবদ পাওয়া টাকার অর্ধেক এসএসডিএ-র রাজ্য পর্যটন দফতরকে জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু পর্ষদ কোনও টাকাই সরকারকে জমা দিতে পারেনি। সম্প্রতি এ নিয়ে পর্যটন দফতরের কাছ থেকে চিঠি পেয়েই নড়েচড়ে বসে এসএসডিএ।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সম্পাদক মিনতি ঘোষের দাবি, “বারবার আবেদন করেও এসএসডিএ আমাদের সঙ্গে লিখিত চুক্তি করেনি। এখন বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।” এসএসডিএ গত ২৩ অগস্ট চিঠি দিয়ে ১ অক্টোবর থেকে তাদের পরিচালনার ভার ছেড়ে দিতে বলেছে। তিন বছরেও লভ্যাংশ না দেওয়ার কথা কবুল করে মিনতিদেবী বলেন, “চুক্তি হলেই সমস্ত টাকা মিটিয়ে দেব।”
তৃণমূল নেতা বিকাশবাবুরও দাবি, “জন্মলগ্ন থেকেই মহিলা মহাসঙ্ঘ অতিথি নিবাস পরিচালনা করছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করে আগামী দিনেও তাদেরই পরিচালনার ভার দেওয়া হোক।” জেলা তৃণমূলের একটি অংশ অবশ্য বলছে, অতিথি নিবাস উপলক্ষ মাত্র। বরাবরের অনুব্রত মণ্ডল বিরোধী সাংসদ শতাব্দীকে ‘অস্বস্তিতে’ ফেলার জন্যই এ দিনের বিক্ষোভ। জেলা সভাপতি ও সাংসদের ‘দ্বন্দ্ব’ দীর্ঘদিনের। কিছুদিন আগেই খয়রাশোলের একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে তিন জায়গায় সাংসদকে কালো পতাকা দেখানো হয়েছিল। সে বারও অভিযোগ উঠেছিল অনুব্রত-গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। এ দিন বহু চেষ্টা করেও শতাব্দীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। |