মা-কে খুন
মেয়ের সাক্ষ্যে যাবজ্জীবন বাবার
মেয়েকে বেশি ডাল দিয়েছিলেন মা। সেই রাগে তিন মেয়ের সামনে মাকে শ্বাসরোধ করে মেরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
সেই মা, রিনা ঘোষের (২৮) বড় মেয়ে মুনমুনের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তাঁর স্বামী ভাগবত ও কাকা কালোসোনা ঘোষকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল কাটোয়া আদালত। প্রায় ১৪ বছর মামলা চলার পরে বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত দায়রা বিচারক অতনু রায় এই রায় দেন। স্ত্রীকে হত্যার দায়ে এ দিনই খণ্ডঘোষের কান্তি রায় ওরফে কেনাকে একই সাজা দিয়েছেন বর্ধমানের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক অবনীকান্ত লাহা।
কাটোয়ার ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৯৮ সালের ৮ অগস্ট। পুলিশ জানায়, রিনাদেবীর বাড়ি স্থানীয় কারুলিয়া গ্রামের ঘোষপাড়ায়। ১৯৮৮ সালে পাড়ারই ভাগবত ঘোষের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। গোড়া থেকেই শ্বশুরবাড়িতে তাঁর উপরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হত। ঘটনার দিন মুনমুন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে খেতে বসেছিল। তখন তার বয়স মোটে আট। মেয়ের আব্দারে মা তাকে বেশি ডাল দিয়েছিলেন। সেই অপরাধে স্বামী, দেওর ও শ্বশুর এককড়ি ঘোষ মেয়েদের সামনেই তাঁকে মারধর করে। পরে শ্বাসরোধ করে মেরে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
সাজার পরে। —নিজস্ব চিত্র।
ঘটনার পরেই মুনমুন মামারবাড়িতে গিয়ে সব কথা জানিয়েছিল। ভাই-দাদা-পড়শিরা গিয়ে দেখেন, ভাগবতেরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। রিনাদেবীর দাদা শ্রীনিবাস ঘোষ তিন জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। দু’দিন পরে তিন জনই ধরা পড়ে। সরকারি আইনজীবী প্রসেনজিৎ সাহা বলেন, “সে সময়ে আট বছরের মুনমুনই বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছিল। পাঁচ বছর আগে, ২০০৭ সালে সাক্ষ্য দেওয়ার সময়েও সে আদালতে ঘটনার পুরো বিবরণ দেয়। মোট ১২ জন সাক্ষী ছিল। কিন্তু মুনমুনের সাক্ষ্যই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।”
বিচার চলার সময়েই এককড়িবাবু মারা যান। বাকি দু’জনকে যাবজ্জীবন কারাবাস ছাড়াও ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও পাঁচ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অবশ্য, বছর সাতেক আগে ভাগবত ফের বিয়ে করেছে। পাঁচ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। ইতিমধ্যে বিয়ে হয়ে গিয়েছে মুনমুনেরও। শ্বশুরবাড়ি গুসকরার কাথে মান্ডারডিহি গ্রামে। এ দিন সেখান থেকেই টেলিফোনে তিনি বলেন, “দীর্ঘ ১৪ বছর পরে এই রায় পেয়ে আমরা খুশি। এত দিনে মায়ের আত্মা শান্তি পাবে।”
খণ্ডঘোষের মুইধারায় গৃহবধূ চন্দনা রায় আক্রাম্ত হয়েছিলেন ২০০৯ সালের ১১ মে। সরকারি আইনজীবী আজিজুল হক মণ্ডল বলেন, “অতিরিক্ত পণের জন্য শ্বশুরবাড়িতে তাঁর বোনকে অত্যাচার করা হত বলে পুলিশে অভিযোগ করেছিলেন চন্দনার দাদা হিরু রায়। ওই দিনই চন্দনার গায়ে আগুন লাগিয়ে বাইরে থেকে দরজায় শিকল তুলে পালিয়ে যায় কান্তি ও তার মা কিশোরী রায়। ১৫ মে হাসপাতালে মৃত্যু হয় চন্দনার।” পরে অবশ্য কান্তি ও তার মাকে গ্রেফতার করে খণ্ডঘোষ থানার পুলিশ। মামলায় মা বেকসুর খালাস হলেও ছেলেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.