তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বোমাবাজি হল কাটোয়া কৈথন গ্রামে। বোমার স্প্লিন্টারে আহত হলেন বেশ কয়েক জন। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কৈথন গ্রামের হাটতলায় বৃহস্পতিবার সকালে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে প্রথমে বচসা, তা থেকে সংঘর্ষ বেধে যায়। বোমাবাজি শুরু হয়। পুলিশের হিসেবে, সকালে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ৭৫-১০০টি বোমা ফেটেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প থাকলেও সংঘর্ষ রুখতে তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ রাজ্যে পালাবদলের পরে কাটোয়ায় সিপিএমের কিছু কর্মী-সমর্থক তৃণমূলে ভিড়েছিলেন। পরে তাঁদের কয়েক জন কংগ্রেসে যোগ দেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর জেলা তৃণমূল (গ্রামীণ) সভাপতি স্বপন দেবনাথের উপস্থিতিতে বাবু শেখ নামে এক স্থানীয় নেতা-সহ এক দল সমর্থক ফের তৃণমূলে যোগ দেন। যার মধ্যে পঞ্চায়েতের তিন সদস্যও রয়েছেন। তৃণমূলের একটি সূত্রে খবর, সদ্য দলে ফেরা গোষ্ঠীর পিছনে রয়েছেন জেলা সাধারণ সম্পাদক মণ্ডল আজিজুল। আর পুরনো গোষ্ঠীর সঙ্গে আছেন দলের সহ-সভাপতি কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কৈথন গ্রামটি মঙ্গলকোট বিধানসভার অন্তর্গত। বাবু শেখের অভিযোগ, “সিপিএমের মদতপুষ্ট তৃণমূলের লোকজন এ দিন আমাদের সমর্থকদের মারধর করেছে। পঞ্চায়েত সদস্যের গায়েও হাত তুলেছে।” অপর গোষ্ঠীর নেতা, ধৃত মিনার শেখের পাল্টা অভিযোগ, “ওরাই আমাদের উপরে হামলা চালিয়েছে।”
এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এলাকা জনশূন্য। চার দিকে বোমাবাজির চিহ্ন। তৃণমূলের দলীয় অফিসও বন্ধ। বাসিন্দারা মুখ খুলতে চাননি। তাঁরা শুধু জানান, বোমাবাজির আওয়াজ শুনে দরজা-জানালা বন্ধ করে রেখেছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বোমাবাজির পরে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী মিছিল করছিল। সেই সময়ে পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করে। ঘটনাস্থল থেকে ২৩টি তাজা বোমা উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করে পুলিশ। বোমাবাজিতে পুড়ে গিয়েছে হাটতলার একটি চালা। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গ্রামের মালিপাড়ায় আগের রাতে মিনার শেখের দলবল বনভোজন করেছিল। তখনও তারা বোমাবাজি করেছে। |
তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মণ্ডল আজিজুলের অভিযোগ, “সিপিএমের মদতপুষ্ট তৃণমূলের লোকজন চড়াও হয়ে বোমাবাজি করেছে।” দলের মঙ্গলকোট ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর দাবি, “বোমার আঘাতে আমাদের কয়েক জন জখম হয়েছেন। তার মধ্যে এক জন কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি।” জেলা সহ-সভাপতি কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়ের পাল্টা বক্তব্য, “ওই এলাকায় তৃণমূলের জোরদার সংগঠন ছিল। সেই অবস্থায় কিছু নেতা কয়েক জনের হাতে পতাকা তুলে দেন। তার জেরেই এ রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।” সিপিএম অবশ্য জানায়, এই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই। এটি পুরোপুরি তৃণমূলের কোন্দল। পুলিশ জানায়, এলাকায় টহল দেওয়া হচ্ছে।
|
ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়। |