জায়গা বদল। জল বদল। হাওয়া বদল। তাঁর জীবনের প্রত্যেক বিভাগেই পরিবর্তনের ঢেউ আছড়ে পড়েছে। কিন্তু তাতে কী? র্যান্টি মার্টিন্স-এর গোলের খিদেতে এতটুকু কমতি নেই। জামশেদপুর থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে যা-যা উঠে এল...
প্রশ্ন: কলকাতার সঙ্গে আট বছর লুকোচুরি খেলার পরে অবশেষে এখানকার ক্লাবের জার্সি পরলেন। বাংলার ফুটবলপ্রেমীদের এত অপেক্ষা করালেন কেন?
র্যান্টি: (হাসতে হাসতে) ঈশ্বর চাইছিলেন না। ডেম্পোতে আমার কোনও অসুবিধা হচ্ছিল না। তা হলে শুধু শুধু কলকাতায় আসব কেন?
প্র: এ বার তা হলে এলেন কেন? ডেম্পোর সঙ্গে বিচ্ছেদের কারণ কি শুধুই টাকা?
র্যান্টি: আমি পেশাদার ফুটবলার। টাকা অবশ্যই একটা ফ্যাক্টর। কিন্তু শুধু টাকার জন্য কলকাতার ক্লাবে এসেছি, সেটা বললে পুরোটা ঠিক হবে না। আপনাদের শহরে এসেছি নতুন চ্যালেঞ্জের খোঁজে।
প্র: ‘গুরু’ আর্মান্দো কোলাসোর কাছ থেকে ‘শিষ্য’ র্যান্টি কী শিখেছে?
র্যান্টি: শিখেছি, কী ভাবে দলকে এক জোট করা যায়। এক সূত্রে বাঁধা যায়। আর্মান্দো বড় কোচ তো বটেই। তার চেয়েও বড় সংগঠক। আমার কাছে আর্মান্দো হলেন ম্যান ম্যানেজমেন্টের জনক। তাঁর দলে নির্দিষ্ট কোনও তারকা নেই। সবাই সমান।
প্র: সঞ্জয় সেনের সঙ্গে কোলাসোর তফাত কোথায়?
র্যান্টি: মাত্র তিন সপ্তাহে একটা মানুষকে চেনা যায় না। তবু একটা কথা বলতে পারি, দলকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষমতা অনেক বেশি আর্মান্দোর।
প্র: ছেড়ে আসার আগে গুরুদক্ষিণা দিয়েছেন?
র্যান্টি: আট বছরে পাঁচটা আই লিগ ট্রফি দিয়েছি। আর কী চাই? ভারতে এই রেকর্ড আর কোনও ক্লাবের আছে নাকি?
প্র: ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের বিরুদ্ধে প্রচুর গোল করেছেন। কিন্তু এই প্রথম বার কলকাতার কোনও ক্লাবের জার্সি পরে ওদের বিরুদ্ধে গোল দিতে নামবেন? কী পার্থক্য অনুভব করছেন?
র্যান্টি: কোনও পার্থক্য নেই। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের আমার কাছে আলাদা গুরুত্ব নেই। গোল করাটা আমার কাজ নয়, অভ্যাস। যত দিন বেঁচে আছি, অভ্যাসটা আমার সঙ্গে থাকবে। বিপক্ষ নিয়ে চিন্তা আগেও করিনি। ভবিষ্যতেও করব না।
প্র: ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানে খেলার জন্য সবাই হা-পিত্যেশ করে বসে থাকে। আপনি করেন না? এত যশ,খ্যাতি...
র্যান্টি: র্যান্টি মার্টিন্সকে পাওয়ার জন্য সবাই হা-পিত্যেশ করে বসে থাকে। আমি কোনও ক্লাবে খেলার জন্য বসে থাকি না। র্যান্টি মানেই যশ, খ্যাতি, প্রচার, বিনোদন। আমি যশের পিছনে দৌড়ই না, যশ আমার পিছনে দৌড়োয়।
প্র: তা হলে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানে খেলার প্রস্তাব পেলে আপনি যাবেন না?
র্যান্টি: সেটা তো বলিনি। ওরা আমাকে পাওয়ার জন্য সে রকম কোনও পরিশ্রমই করেনি। র্যান্টিকে পেতে গেলে পরিশ্রম করতে হয়। এত সহজে আমাকে পাওয়া যায় না।
প্র: র্যান্টি মানেই আতঙ্ক। র্যান্টির আতঙ্ক কে?
র্যান্টি: চোট। একটা দলের সাফল্য আর ব্যর্থতা চোট-আঘাতের ওপর নির্ভরশীল। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, যেন চোট-আঘাতের ছায়া থেকে দূরে থাকতে পারি।
প্র: ক্লাইম্যাক্স লরেন্স, ক্লিফোর্ড মিরান্দা, মহেশ গাউলিদের মতো অভিজ্ঞ ফুটবলারদের সঙ্গে খেলেছেন। সেখানে এ বছর আপনার বেশির ভাগ সতীর্থই তরুণ। অনভিজ্ঞ। আই লিগে সোনার বুট জয়ের হ্যাটট্রিক করতে পারবেন?
র্যান্টি: সোনার বুট পাওয়াটা গর্বের ব্যাপার। কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা আমার চিন্তা নয়। প্রয়াগে অনেক তরুণ ফুটবলার আছে। ওদের নিয়ে একটা টিম গড়াই আমার প্রধান লক্ষ্য এখন। আর্মান্দোর দেখানো পথেই এগোতে চাই।
প্র: ফেড কাপে প্রয়াগের সম্ভাবনা কতটা?
র্যান্টি: চ্যাম্পিয়ন হওয়া কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। আমরা ‘গ্রুপ অব ডেথ’-এ পড়েছি। ম্যাচের দিন যে দল ভাল খেলবে, সেই জিতবে। লিগ আর নক আউট টুর্নামেন্ট খেলার মধ্যে এটাই তো মজা। |