|
|
|
|
‘সময় নষ্ট’ না করে মায়া, মুলায়মে মন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
মমতার সঙ্গে সমঝোতার সম্ভাবনা ক্ষীণ ধরে নিয়েই ঘর গোছাতে নেমে পড়লেন সনিয়া-মনমোহন।
তৃণমূল সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরে ইউপিএ সরকার এখন খাতায়কলমে সংখ্যালঘু। তবে সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি আর রাষ্ট্রীয় জনতা দল এই তিন সমর্থক দল পাশে থাকায় সরকারের আশু কোনও বিপদ নেই। কিন্তু কোনও ঝুঁকি না নিয়ে মুলায়ম-মায়াবতী-লালুপ্রসাদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে সক্রিয় কংগ্রেস। সেই সঙ্গে সতর্ক, জোটে যাতে আর ভাঙন না হয়।
আজ সকালে কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠক ডাকেন সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম স্পষ্ট করে দেন যে, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার-সহ যে সব দাবি তৃণমূল করছে, তা কোনও ভাবেই মানা সম্ভব নয়। সুতরাং এ নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করার কোনও অর্থ হয় না। দলের শীর্ষ নেতাদের সেই প্রস্তাব মেনে নেন সনিয়া। সেই সঙ্গে এ-ও ঠিক হয় যে, তৃণমূলের মন্ত্রীরা শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিলে তৎক্ষণাৎ রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেবেন কংগ্রেসের মন্ত্রীরা।
তবে কৌশলগত কারণেই প্রকাশ্যে মমতার ঝাঁঝালো আক্রমণের জবাব দিতে পাল্টা আগ্রাসী হয়নি কংগ্রেস। জোট ভাঙার যাবতীয় দায় যে মমতার, সে কথা বোঝাতে সংযত প্রতিক্রিয়ায় বলেছে যে, তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনার দরজা এখনও খোলা রয়েছে। তৃণমূল-সহ বিরোধীদের চাপে ফেলতে আরও একটা কৌশল নিয়েছেন সনিয়া। বছরে পরিবার-পিছু আরও তিনটি সিলিন্ডারে ভর্তুকি দেওয়ার জন্য কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
তবে মমতা-হীন দিন যাপনের প্রস্তুতি নিলেও সেই পথে যে ঝুঁকি আছে, সেটা বুঝতে পারছেন কংগ্রেস নেতারা। কারণ, মুলায়ম ও মায়াবতী দু’জনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেই কংগ্রেসের অভিজ্ঞতা ভাল নয়। অতীতে এই দু’জনের উপরেই ভরসা করে ঠকতে হয়েছে কংগ্রেসকে। মেটাতে হয়েছে অনেক দাবিদাওয়া। ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, মওকা বুঝে মুলায়ম যে এখন চড়া দর হাঁকতে পারেন সেই আশঙ্কা রয়েছে। তবে সমাজবাদী পার্টির নেতারা এখনই তৃণমূলের জায়গায় মন্ত্রিসভায় আসার পক্ষপাতী নন। (একমাত্র মুলায়মের ভাই রামগোপাল যাদব মন্ত্রিসভায় যাওয়ার পক্ষে) তাঁদের মতে, সে ক্ষেত্রে দুর্নীতি আর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তার ভাগীদার হতে হবে। কিন্তু তার বদলে অন্য চাহিদার তালিকা দীর্ঘ হবে বলে আশঙ্কা কংগ্রেস নেতাদের।
বস্তুত ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি ও খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে কংগ্রেসের উপর একটা চাপ ইতিমধ্যেই তৈরি করে রেখেছেন মুলায়ম। এই নিয়ে আগামিকাল সমাজবাদী পার্টির সংসদীয় দলের বৈঠক ডেকেছিলেন তিনি। কিন্তু মমতা সমর্থন প্রত্যাহার করার পর সেই বৈঠক পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসপি সূত্রে বলা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত তৃণমূল কী করে তা দেখেই ওই বৈঠক ডাকা হবে।
কংগ্রেসের আশা এটাই যে, মুলায়ম আর মমতা এক নন। বর্ষীয়ান এই সমাজবাদী নেতা পোড় খাওয়া রাজনীতিক। দুম করে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলার লোক তিনি নন। মমতার তুলনায় তাঁর সঙ্গে সমঝোতা করে চলা সহজ। তা ছাড়া মুলায়ম-পুত্র তথা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব এখন লোকসভার নির্বাচন চান না। কারণ, কেন্দ্রে অস্থিরতা তৈরি হলে তার প্রভাব পড়বে তাঁর রাজ্যেও। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকার যে প্যাকেজ কেন্দ্র ঘোষণা করেছে, সেটা পেতে অসুবিধা হবে।
আবার বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর মায়াবতীও এখন লোকসভার অন্তর্বর্তী নির্বাচন চাইছেন না। ফলে তাঁকে নিয়ে এখনই কোনও আশঙ্কা নেই বলে মনে করছে কংগ্রেস। তবে সাবধানের মার নেই, এই আপ্তবাক্য স্মরণ করে মায়াবতী-মুলায়ম দু’জনের সঙ্গেই যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন কংগ্রেসের রাজনৈতিক ম্যানেজারেরা।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, শুধু মায়া-মুলায়ম নন, ইউপিএ-র বাকি শরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতেও দল সক্রিয়। আর তাই মন্ত্রিসভার আসন্ন রদবদলে এনসিপি নেতা তারিক আনোয়ারকে পূর্ণ মন্ত্রী করতে রাজি সনিয়া-মনমোহন। একই ভাবে ডিএমকে-র পদত্যাগী দুই মন্ত্রী এ রাজা ও দয়ানিধি মারানের জায়গায় নতুন কাউকে পাঠানোর প্রস্তাবও করুণানিধির কাছে পাঠিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। কিন্তু এখনই তাতে রাজি নন করুণানিধি।
আসলে দুর্নীতির প্রশ্নে দীর্ঘদিন কোণঠাসা ডিএমকে এখন ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে। কেন্দ্রে সমর্থন প্রত্যাহার না করার মূল্য হিসেবে রাজ্যে পায়ের তলার জমি শক্ত করতে কংগ্রেসের সমর্থন চাইতে পারে তারা। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আগামিকালের ভারত বন্ধকেও সমর্থন করছে ডিএমকে। সেই বন্ধে সামিল সমাজবাদী পার্টিও।
প্রকাশ্যে কংগ্রেস নেতারা বলছেন, রাজ্য রাজনীতির বাধ্যবাধকতার কারণেই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে শরিক-সমর্থকেরা। কিন্তু একান্ত আলোচনায় তাঁরা কবুল করছেন যে, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের প্রতিক্রিয়া সাধারণ মানুষের মধ্যে কেমন হবে, তা নিয়ে দলগুলির মধ্যে সংশয় রয়েছে। এমনকী কংগ্রেসের নিচু তলার কর্মীদের মধ্যেও একটা ভয়ের সঞ্চার হয়েছে।
আজ কোর গ্রুপের বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। চিদম্বরম বলেন, গত কয়েক মাস ধরে সরকারের মূল উদ্বেগ হল টাকার দাম পড়ে যাওয়া। সংস্কারের লক্ষ্যে যে পদক্ষেপ সরকার করেছে তাতে টাকার দাম কিছুটা বেড়েছে। এই অবস্থা বজায় থাকলে তেল আমদানির খরচ কমবে। তখন ডিজেলের দাম কিছুটা হলেও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে এ সবই হল আশার কথা। শেষ পর্যন্ত কোথাকার তেল কোথায় যাবে, তা সময়ই বলবে। |
|
|
|
|
|