|
|
|
|
|
|
কম ঝুঁকির লগ্নি |
|
সুখ ছেড়ে শান্তির খোঁজে
লগ্নির লুডোয় সাপের মুখকে বড্ড ভয় করি আমরা। টাকা রাখতে খুঁজি এমন প্রকল্প,
যেখানে ঝুঁকি
নেই বললেই চলে। কিন্তু তা বলে চোখ বুজে টাকা রাখবেন
না কি? মনে
রাখবেন সব
থেকে বড় সাপ কিন্তু ৯৯-এর ঘরে। জানাচ্ছেন
অমিতাভ গুহ সরকার |
|
মেনু কার্ডে অনেক ‘পদ’ থাকলেও, বাঙালির পছন্দ কিন্তু সেই সব প্রকল্প, সুরক্ষার দিক থেকে যারা এগিয়ে। ঝুঁকি থেকে নিরাপদ দূরত্ব রক্ষায় সব সময়ই তারা সচেষ্ট। তাই ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ পিছনে ফেলেছে সব রাজ্যকে। ব্যাঙ্কের স্থায়ী জমাও পছন্দ এ রাজ্যের মানুষের।
কিন্তু ঝুঁকি নিতে না-চাইলেও অনেক সময়েই ঝুঁকি উঁকি মারে আমাদের ঘরে। অন্যের অনুরোধ, প্রতিশ্রুতি বা পরামর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অথবা উঁচু আয়ের হাতছানিকে উপেক্ষা করতে না-পেরে ঝুঁকি বিমুখ মানুষেরাও এমন অনেক প্রকল্পে লগ্নি করেন, যা পরে ব্যথার কারণ হয়।
তবে সাধারণ ভাবে বাঙালির পছন্দ স্থির এবং নিশ্চিত আয়ের ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্প এবং ব্যাঙ্কের মেয়াদি আমানত। নিয়মিত সুদ পাওয়া ও মেয়াদ শেষে আসল ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে এই দু’টি বেশ নিরাপদ। আছে বিভিন্ন সরকারি বন্ডও। তবে লগ্নির এই ক্ষেত্রটি এখনও তেমন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি এ রাজ্যের মানুষের কাছে।
খাতায়-কলমে ব্যাঙ্ক আমানত পুরোপুরি সুরক্ষিত না-হলেও, মানুষের বিশ্বাস, এখানে টাকা রাখা নিরাপদ। বেসরকারি ব্যাঙ্ক সম্পর্কে অবশ্য সবার সমান বিশ্বাস নেই। তবে মনে রাখতে হবে, ভারতের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাঙ্ক কিন্তু বেসরকারি। অসংখ্য মানুষ সেখানে টাকা রেখেছেন বলেই না তা হয়েছে।
গত তিন-চার দশকে কোনও ব্যাঙ্ক ফেল করার স্মৃতি আমাদের নেই। যখনই কোনও ছোট বেসরকারি ব্যাঙ্ক গভীর আর্থিক সমস্যায় পড়েছে, তখনই সেই রুগ্ণ ব্যাঙ্ককে কোনও শক্তিশালী ব্যাঙ্কের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে সরকার ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ফলে লোকসান হয়নি আমানতকারীর। |
|
এই ভাবে সুরক্ষা পেয়েছেন গ্লোবাল ট্রাস্ট ব্যাঙ্ক, সিকিম ব্যাঙ্ক, লক্ষ্মী কমার্শিয়াল ব্যাঙ্কের গ্রাহকেরা। কিছু সমবায় ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অবশ্য লোকসান হয়েছে অনেক গ্রাহকের। আরও একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তফসিলভুক্ত যে কোনও ব্যাঙ্কে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমা নিরাপদ। কারণ তার উপর থাকে ডিপোজিট ইনশিওরেন্স অ্যান্ড ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশনের গ্যারান্টি।
তবে ব্যাঙ্ক আমানতে ঝুঁকি নামমাত্র হলেও এখানে টাকা রাখতে বিচক্ষণতা প্রয়োজন। উচিত নিয়মকানুন জানা। তাই এখন একনজরে দেখে নেওয়া যেতে পারে ব্যাঙ্কের মেয়াদি আমানত সংক্রান্ত প্রচলিত নিয়মকানুন। যাতে কিছুটা হলেও বোঝা যায় যে, কোন পরিস্থিতিতে কী করা উচিত আমাদের।
১ ব্যাঙ্ক আমানতের সুদে প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অনেক দিনই তুলে নিয়েছে। এই কারণে একই মেয়াদে অনেক সময়ে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সুদের হার বিভিন্ন রকম। তাই মেয়াদি আমানতে টাকা রাখার আগে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সুদ সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া জরুরি।
২ যখন মনে হবে সুদের হার শিখরে পৌঁছেছে, এ বার নামার পালাতখন বড় মেয়াদে টাকা রাখা ভাল। উল্টোটা করতে হবে সুদ বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে।
৩ একই ব্যাঙ্কে বড় অঙ্ক মেয়াদি আমানতে রাখলে, পুরো টাকা ভাগে ভাগে ছোট ছোট অঙ্কে রেখে একাধিক এফডি সার্টিফিকেট নিন। যেমন, ৫ লক্ষ টাকা রাখলে, ১ লক্ষ টাকা করে ৫টি সার্টিফিকেট চাইতে পারেন। মেয়াদ শেষের আগে টাকার প্রয়োজন হলে, সে ক্ষেত্রে ভাঙাতে পারবেন একটি বা দু’টি সার্টিফিকেট। এতে বাকি টাকার ওপর আপনি চুক্তিমতো সুদ পেতে থাকবেন। অল্প টাকার প্রয়োজনের জন্য পুরোটা ভাঙাতে হবে না।
৪ এফ ডি সার্টিফিকেট বন্ধক রেখে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে সুদের হার সাধারণত আমানতের ওপর ব্যাঙ্কের দেয় সুদের তুলনায় ২% বেশি হয়। তাই কোনও এফ ডি যখন মেয়াদ শেষ হওয়ার কাছাকাছি এসে গিয়েছে, তখন টাকার প্রয়োজনে তা অগ্রিম না-ভাঙিয়ে বন্ধক রেখে ছোট মেয়াদে ঋণ নিলে অনেক সময়ে সাশ্রয় হয়। অবশ্য এই পরিস্থিতিতে একটু অঙ্ক কষে দেখে নিতে হবে যে, কোন দিকে গেলে লাভ হচ্ছে।
৫ ব্যাঙ্ক আমানতে প্রাপ্ত সুদ পুরোপুরি করযোগ্য। কোনও ব্যাঙ্কে আপনার এক বা একাধিক মেয়াদি অ্যাকাউন্টে মোট বাৎসরিক সুদ ১০ হাজার টাকার বেশি হলে ব্যাঙ্ক উৎসমূলে তা থেকে ১০.৩% কর কেটে নেবে। ব্যাঙ্কে যদি আপনার ‘প্যান’ দাখিল করা না-থাকে, তবে কর কাটা হতে পারে ২০.৬% হারে। সুদ যদি ১০ হাজার টাকার কম হয় এবং কোনও কর কাটা না-হয়, তার মানে কিন্তু এই নয় যে ওই সুদ করমুক্ত। প্রাপ্ত সুদ আপনার অন্যান্য আয়ের সঙ্গে যোগ করতে হবে। এবং তার পর প্রযোজ্য হারে কর দিতে হবে। ব্যাঙ্ক যদি ১০% হারে কর কাটে কিন্তু আপনি যদি ২০ বা ৩০ শতাংশ করের আওতায় পড়েন, তবে বাকি কর আলাদা করে দিতে হবে।
৬ ব্যাঙ্ক থেকে প্রাপ্ত সুদ-সহ আপনার মোট আয় যদি করমুক্ত ন্যূনতম আয়ের কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে আপনি কর না-কাটার জন্য ব্যাঙ্কে আবেদন করতে পারেন। প্রবীণ নাগরিকেরা এই আবেদন করেন ১৫-এইচ ফর্মে। অন্যরা ব্যবহার করবেন ১৫-জি ফর্ম। এই ফর্ম দাখিল করতে হবে প্রত্যেক আর্থিক বছরেই।
৭ ব্যাঙ্ক যদি কর কাটে, তবে তার জন্য গ্রাহকের নামে ১৬-এ ফর্মে ইস্যু করবে টিডিএস সার্টিফিকেট। এ ছাড়া আয়কর দফতরের ওয়েবসাইটে ২৬-এ-এস ফর্মে তুলতে হবে গ্রাহকদের নামে কর কাটার বিবরণ। এটা সময় মতো না-করা হলে, কেটে নেওয়া করের সুবিধা পাওয়া যাবে না। তাই রিটার্ন ফাইল করার আগে গ্রাহকদের দেখে নেওয়া উচিত কর কাটার বিবরণ ওই ফর্মে তোলা হয়েছে কি না। না-হয়ে থাকলে, সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ককে তা অবিলম্বে করতে বলুন।
৮ স্থায়ী জমার উপর সুদ ৩, ৬ বা ১২ মাসে নেওয়া যেতে পারে। কোনও কোনও ব্যাঙ্কের মাসিক আয় প্রকল্পও আছে। নিয়মিত সুদ না-নিলে তা জমতে দিন। সুদ তুলে নেওয়া হলেও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাৎসরিক ভিত্তিতে কর কেটে নেওয়া হয়। রেকারিং ডিপোজিট-এর ক্ষেত্রে ৯% সুদে ১ লক্ষ টাকা ৫ বছরে বেড়ে হতে পারে কম বেশি ১.৫৬ লক্ষ টাকা।
৯ সব সময়েই যুগ্ম নামে ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট খুলুন। একক নামে খোলা হলে, এক জন নমিনির নাম অবশ্যই ব্যাঙ্কের খাতায় নথিবদ্ধ করে রাখা উচিত।
১০ ডায়েরিতে নথিবদ্ধ করে রাখুন সব জমার তথ্য। দেখুন সময়মতো সুদ আসছে কি না। আর দেখতে হবে মেয়াদ শেষ হওয়া মাত্র যেন টাকা তুলে নেওয়া হয় বা প্রকল্প নবীকরণ করা হয়। |
|
|
|
|
|