হাতফেরতা যান
চাকচিক্যে ভুলবেন না
হ্যাঁচ্চো! বর্ষার জলে কাকভিজে হয়ে ঠান্ডা লাগানো মেয়ের মুখ চেয়ে এ বার হয়তো একটা গাড়ি কেনার পণ করেই ফেললেন
আপনি। কিন্তু সব কেমন গুলিয়ে গেল দামের অঙ্ক কষতে বসে। অথবা আপনার একখানা বড় গাড়ি ঘরে আনার
দীর্ঘ দিনের স্বপ্নে ফের চোনা ফেলে দিল তার মাসিক কিস্তির হিসেব। কারণ যা-ই হোক, আপনার মুশকিল আসান হয়ে দেখা দিতে পারে হাত-ফেরতা গাড়ি।
যেখানে অনেকটা কমে অল্প একটু পুরনো গাড়ি পেয়ে যাওয়াও একেবারে অসম্ভব নয়। তবে তার জন্য গাড়ি চেনার চোখ থাকা জরুরি।

চাই জহুরির চোখ
নতুন গাড়ি ঘরে আনা তুলনায় অনেক সহজ। নিজের বাজেট আর পছন্দ মিলিয়ে কিনে ফেললেই হল। কিন্তু পুরনো গাড়ির বেলায় এই গল্প এক্কেবারে আলাদা। এখানে তো আর গাড়ির গুণমান বা ইঞ্জিনের হাল নিয়ে সংস্থার নিশ্চয়তা নেই। তাই হাত-ফেরতা গাড়ির বাজারে সঠিকটিকে বেছে নিতে জহুরির চোখ থাকা জরুরি।
এখন অবশ্য সেকেন্ড-হ্যান্ড গাড়ির বাজার ধরতে উঠে পড়ে লেগেছে মারুতি, মহীন্দ্রা, হুন্ডাই, টাটা মোটরস-এর মতো অনেক সংস্থাই। সেখান থেকে গাড়ি কেনা কিছুটা সুবিধাজনক। সামান্য হলেও নিশ্চিন্ত থাকা যায় আত্মীয়-স্বজন বা ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবের থেকে কিনলে। কিন্তু এখনও সিংহভাগ পুরনো গাড়িই বিক্রি হয় ছোটখাটো গ্যারাজ থেকে। তাই সেখানে গাড়ির অবস্থা আরও বেশি খুঁটিয়ে দেখে নেওয়া জরুরি।

প্রযুক্তির খুঁটিনাটি
শুধু মুখের কথায় ভুলবেন না। ভাল করে চালিয়ে, পরখ করে, সুবিধা-অসুবিধা যাচাই করে তবেই হাত দিন টাকার ব্যাগে। যেমন, পুরনো ডিজেল গাড়ি কেনার আগে অবশ্যই তা স্টার্ট দিয়ে দেখুন। গাড়ির ‘কম্প্রেশন’ পড়ে গেলে, স্টার্ট নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা। তেমনই আবার অত্যধিক কালো ধোঁয়া বার হবে গাড়ির ‘ফুয়েল ইঞ্জেকশন’ যন্ত্রাংশটি খারাপ থাকলে।

পাশে রাখুন বিশেষজ্ঞকে
শুধু গাড়ির রং বা তার সাজসজ্জা দেখলেই তো হবে না। পুরনো গাড়িতে সব থেকে আগে দেখে নিতে হবে তার ইঞ্জিনের অবস্থা এবং গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশগুলির ‘স্বাস্থ্য’। খুঁটিয়ে দেখে নিতে হবে যাবতীয় নথিপত্রও। কিন্তু অনেক সময়েই এর সব কিছু একেবারে আগাপাশতলা বোঝা সম্ভব না-ই হতে পারে আপনার পক্ষে। তাই গাড়ি বাছাইয়ের সময় এক জন টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞকে পাশে রাখার চেষ্টা করুন। যিনি বিষয়টি ভাল বোঝেন। যাঁর কথায় পুরোদস্তুর ভরসা করতে পারেন আপনি।

নিশ্চিন্তির সার্টিফিকেট
গাড়ির গুণগত মান ১১৮টি মাপকাঠিতে যাচাই করে শংসাপত্র (সার্টিফিকেট) দেয় কোনও কোনও সংস্থা। দেয় ছ’মাস ও এক বছরের ওয়ার্যান্টি। পাওয়া যায় দেশের যে কোনও প্রান্তে যে কোনও সময়ে (২৪X৭) রাস্তার ধারে গাড়ি মেরামতের
(রোড সাইড অ্যাসিসট্যান্স) সুবিধাও। তাই এ ধরনের শংসাপত্র হাতে থাকলে অনেকটাই নিশ্চিন্ত বোধ করতে পারেন আপনি।

‘ছোকরা’ গাড়ি
পুরনো গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে কিন্তু এই বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের মতে, গাড়ির বয়স ২-৭ বছরের মধ্যে হওয়া ভাল। কারণ, গাড়ির বয়স দু’য়ের কম হলে, দাম বেশি পড়ে। আবার তা ৭ বছর পেরিয়ে গেলে, কন্ডিশন ভাল থাকা শক্ত। অনেকে আবার মনে করেন, পাঁচ বছরের বেশি পুরনো গাড়ি না-কেনাই ভাল।

চলেছে কত
গাড়ির বয়সই কিন্তু সব নয়। দেখা যাবে হয়তো একটি পাঁচ বছরের পুরনো গাড়ির তুলনায় আর একটি তিন বছরের গাড়ি চলেছে অনেক বেশি। ফলে, বেশি তার ইঞ্জিনের ক্ষয়ও। সুতরাং, ইতিমধ্যেই গাড়ি কত কিলোমিটার চলেছে, সে দিকে নজর রাখুন। অনেকেই মনে করছেন, খুব বেশি হলে ৫০-৬০ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত চলা গাড়িই ঘরে আনা ভাল।

টায়ারের হাল
গাড়ি কেনার আগে ইঞ্জিন যেমন দেখবেন, তেমনই পরখ করুন টায়ারের অবস্থাও। কেউ কেউ মনে করেন, কোনও গাড়ি ৪০ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেওয়ার পরেও টায়ার বদলানো না-হলে, দু’বার ভাবার প্রয়োজন আছে। খুঁটিয়ে দেখুন টায়ার তৈরির তারিখও।

ব্যাটারি ডাউন নয় তো
সাধারণত একটি ব্যাটারি ৩ বছর চলে। কবে তা কেনা হয়েছে, তার স্পষ্ট উল্লেখ থাকে ওয়ার‌্যান্টি কার্ডে। তাই অবশ্যই দেখুন, আপনার পছন্দের গাড়ির ব্যাটারির আয়ু ইতিমধ্যেই শেষ কিনা। পুরনো গাড়ি কেনার সময় এই ছোট্ট অঙ্কটা কষতে কোনও ভাবেই ভুলবেন না।

একটা অক্ষরও বাদ দেবেন না
পুরনো গাড়িতে নথিপত্রের গেরো আরও বেশি। তাই একেবারে খুঁটিয়ে তার প্রতিটি শব্দ পড়ে ফেলা জরুরি। নইলে ঘোর বিপদে পড়তে পারেন আপনি। যেমন
• প্রথম বার যদি গাড়িটি ধারে কেনা হয়ে থাকে, তা হলে দেখে নিন সেই ঋণ শোধ হয়েছে কি না।
• স্পষ্ট হতে হবে হাতবদলের পর গাড়ির মালিকানা বা ‘ওনারশিপ’ সংক্রান্ত নথিও। প্রয়োজনে অল্প কিছু টাকা খরচ করেও মোটর ভেহিকল্স দফতর থেকে এই মালিকানা পরিবর্তনের বিষয়টি সেরে ফেলুন।
• ভুললে চলবে না বিমা এবং রোড ট্যাক্সের কথাও। যেমন, গোড়াতেই জেনে নিন, পাঁচ বছরের পথ-করের (রোড-ট্যাক্স) কতটা মেটানো এখনও বাকি।

আগের দায় আপনি নেবেন কেন
গোড়াতেই খতিয়ে দেখুন, গাড়ির পুরনো দায় (তা সে দুর্ঘটনা হোক বা অন্য কিছু) আপনার উপর বর্তাচ্ছে কি না। সে ক্ষেত্রে গাড়ি কেনার তারিখ ও সময় উল্লেখ করে মালিকের নাম পরিবর্তন-সহ ‘ডেলিভারি নোট’ তৈরি করুন। তাতে ক্রেতা-বিক্রেতা, দু’পক্ষই সই করলে ভাল। দু’জনেই তার কপি নিজের কাছে রাখুন। এই পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করা থাকলে, ওই দিন ও সময়ের আগে পর্যন্ত সব দায় বর্তাবে গাড়ির পুরনো মালিকের উপর। সব নথিপত্রের অন্তত দু’টি করে ফোটো-কপি নিজের কাছে রাখুন।

পেট্রোল না ডিজেল?
• নতুনে যা খুশি কিনুন। এখনকার প্রযুক্তিতে দু’য়ের মধ্যে খুব ফারাক নেই।
• ডিজেলে তেলের খরচ কম। কিন্তু সারানো এবং রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় বেশি। উল্টো দিকে, পেট্রোলে আওয়াজ কম কিন্তু তেল যাবে অনেকটা বেশি।
• কিন্তু হাত-ফেরতা গাড়িতে প্রথম পছন্দ অবশ্যই পেট্রোল। ডিজেল হলে, তার সম্পর্কে সমস্ত খুঁটিনাটি জেনে নিন। নইলে তাতে হাত না-দেওয়াই ভাল।

মতামত: অলোক কান্তি বসু (কলকাতার একটি নামী গাড়ি সংস্থার গ্যারাজের কর্ণধার)

তথ্য সহায়তা: দেবদূত বাগচী (মহীন্দ্রা ফার্স্ট চয়েসের জেনারেল ম্যানেজার);
রাহুল সরকার (গাড়ি, বিশেষত ‘ভিন্টেজ কার’ বিশেষজ্ঞ)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.