“যিশু তাঁদের বললেন, আমার স্ত্রী...”। ছোট্ট এক টুকরো প্যাপিরাসের উপর কালো কালি দিয়ে লেখা আছে এ কথাই।
আর এর দৌলতে আবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে বহুচর্চিত সেই প্রশ্ন যিশু কি বিবাহিত ছিলেন?
কপটিক ভাষার এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সম্প্রতি এমনটাই দাবি করেছেন ‘হাভার্ড ডিভিনিটি স্কুলের’ অধ্যাপক ক্যারেন কিং। প্রমাণ হিসাবে তিনি হাজিরও করেছেন কপটিক ভাষায় লেখা প্যাপিরাসের এক টুকরো। কিংয়ের দাবি, খ্রিস্টান ধর্মগুরুদের বিয়ে বা যৌনতা নিয়ে প্রচলিত ধারণা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শেখায় এই লেখা।
লম্বায় সাকুল্যে চার সেন্টিমিটার, আর চওড়ায় আট সেন্টিমিটারের এক হলদেটে প্যাপিরাস। ভাষা প্রাচীন মিশরীয় কপটিক। উল্টো পিঠে মোটে তিনটি শব্দ পড়া গেলেও আর
এক দিকের লেখা স্পষ্ট। ‘আমার স্ত্রী’ ছাড়াও ‘সে আমার শিষ্যা হবে’ অথবা ‘আমি তার(মহিলা অর্থে) সঙ্গে থাকি’-বেশ পড়া যায় এই কথাগুলো। |
সেই প্যাপিরাস। ছবি: এএফপি |
তবে প্যাপিরাসটি কোথাকার, তা জানা যায়নি। একরাশ গ্রীক ও কপটিক ভাষার প্যাপিরাসের মধ্যে হঠাৎই এক দিন এই প্যাপিরাসটি খুঁজে পেয়েছিলেন এক সংগ্রহকারী। ভাষার মর্মোদ্ধার করতে তিনিই ওই টুকরো তুলে দেন ক্যারেন কিংয়ের হাতে।
ভাষা-ভঙ্গিমা, লেখার কায়দা আর প্যাপিরাসের অবস্থা দেখে কিংয়ের ধারণা, ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দ্বিতীয়ার্ধে লেখা হয়েছিল প্যাপিরাসটি। আর এর উৎসস্থল সম্ভবত উত্তর মিশর। প্যাপিরাসটি যে আসল সে ব্যাপারে ক্যারেনের সঙ্গে একমত কপটিক ভাষা বিশেষজ্ঞ ও প্যাপিরাস বিশারদ দুই অধ্যাপক। যদিও লেখার কালির রাসায়নিক বিশ্লেষণ বাকি আছে, জানিয়েছেন ক্যারেন নিজেই।
ক্যারেন কিংয়ের কথায়, এই প্যাপিরাস থেকে এটা স্পষ্ট যে খ্রিস্ট ধর্মের প্রথম যুগে অনেকেই মনে করতেন, যিশু বিবাহিত। ধর্মগুরুদের অকৃতদার হতে হবে কি না, তা নিয়ে সে সময় তাত্ত্বিক বিতর্কও কম হয়নি। পরে খ্রিস্ট ধর্মকে রোম সাম্রাজ্যের রাষ্ট্র ধর্ম ঘোষণা করে কনস্টানটাইন ৩০০ বিশপকে আহ্বান জানান ধর্মের চূড়ান্ত রূপ দিতে। কিংয়ের বক্তব্য, বিয়ে সংক্রান্ত যাবতীয় কড়াকড়ির আমদানি এর পর থেকে।
এর আগেও যিশুর স্ত্রীকে নিয়ে বিতর্ক হয়েছে বহু। ২০০৩ সালে লেখা জনপ্রিয় উপন্যাস ‘দ্য দা ভিঞ্চি কোড’-এ লেখক ড্যান ব্রাউন যিশুকে কল্পনা করেছিলেন বিবাহিত বলেই। তবে সরাসরি কোনও প্রমাণ মেলেনি আগে। কিংয়ের ‘প্রমাণ’ নতুন করে উস্কে দিল পুরনো বিতর্ক। |