মন্ত্রীর আশ্বাসের চার মাস পেরিয়ে গেলেও রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে নির্মীয়মাণ মানসিক ওয়ার্ড তৈরির কাজ শেষ করতে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, গত ১৪ মে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতাল পরিদর্শনে যান রাজ্যের জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী তথা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান আব্দুল করিম চৌধুরী। তিনি দ্রুত নির্মীয়মাণ মানসিক ওয়ার্ড তৈরির কাজ শেষ করার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছিলেন। তা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। জনশিক্ষা মন্ত্রী বলেন, “প্রশাসনিক কিছু জটিলতার জেরে নির্মীয়মাণ মানসিক ওয়ার্ড তৈরির কাজ শেষ করতে সাময়িক দেরি হচ্ছে। ওই ওয়ার্ড তৈরির কাজ শেষ করতে ঠিক কত টাকার প্রয়োজন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাজ্য সরকার শীঘ্রই টাকা বরাদ্দ করে স্বাস্থ্য দফতরকে ওই ওয়ার্ড তৈরির কাজ শেষ করার নির্দেশ দেবে।” হাসপাতালের সুপার অরবিন্দ তান্ত্রি বলেন, “টাকার অভাবে মানসিক ওয়ার্ড তৈরির কাজ থমকে রয়েছে। মানসিক রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে তাঁদের রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের তরফে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে মানসিক ওয়ার্ড তৈরির কাজ শেষ করার জন্য প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ সালে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর হাসপাতাল চত্বরে মানসিক ওয়ার্ড তৈরির কাজ শুরু করে। প্রায় দেড় বছর কাজ চলার পর টাকার অভাবে পূর্ত দফতর মানসিক ওয়ার্ড তৈরির কাজ বন্ধ করে দেয়। ইতিমধ্যেই প্রায় ১২ লক্ষ টাকার কাজ হয়ে গিয়েছে। সেই থেকে নির্মীয়মাণ অবস্থায় ওয়ার্ডটি পড়ে রয়েছে। ওই ওয়ার্ডের একাধিক জানালা ও দেওয়ালের ইট দুষ্কৃতীরা চুরি করে নিয়েছে বলে অভিযোগ। এ ছাড়াও নির্মীয়মাণ ওই ওয়ার্ডের বারান্দায় ও সংলগ্ন এলাকায় রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতীরা জুয়া ও মদের আসর বসাচ্ছে বলেও অভিযোগ। ফলে রোগীদের পরিবারের লোক নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন। হাসপাতালের বহির্বিভাগে এক মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ রোগীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে ওষুধ লিখে দেন। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিমাসে গড়ে ১৫ জনেরও বেশি মানসিক রোগীকে রেফার করে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর ও বিহারের রোগীরা রোজই রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যান। সিপিএমের রায়গঞ্জ লোকাল কমিটির সম্পাদক নীলকমল সাহা বলেন, “টাকার অভাবে বহু মানসিক রোগী বাইরে হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা করাতে যেতে পারেন না। অবিলম্বে ওই ওয়ার্ডের কাজ শেষ করা না হলে দলের তরফে অনির্দিষ্টকালের জন্য হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান বিক্ষোভে বসা হবে।” জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দের অভিযোগ, বামেদের সময় রাজ্য সরকারের গাফিলতি ও নতুন রাজ্য সরকারের উদাসীনতায় ৬ বছরে মানসিক ওয়ার্ড তৈরির কাজ শেষ হচ্ছে না। তিনি বলেন, “সেপ্টেম্বর মাস অপেক্ষা করব। তার মধ্যে ওই ওয়ার্ডের কাজ শেষ করার ব্যাপারে রাজ্য সরকার উদ্যোগী না নিলে দলের তরফে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সুপারের অফিস অচল করে আন্দোলন হবে।” জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য জানান, শীঘ্রই নির্মীয়মাণ মানসিক ওয়ার্ড তৈরির কাজ শেষ করবে রাজ্য সরকার। |